Ajker Patrika

নির্বাহী বিভাগে স্থায়ী সমাধান না হলে কোটা সংস্কার আন্দোলন চলবে

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা ও ঢাবি প্রতিনিধি
আপডেট : ১১ জুলাই ২০২৪, ১১: ১০
নির্বাহী বিভাগে স্থায়ী সমাধান না হলে কোটা সংস্কার আন্দোলন চলবে

সরকারি চাকরিতে বিদ্যমান কোটা সংস্কারের দাবিতে দেশজুড়ে জোর আন্দোলন করছেন শিক্ষার্থীরা। সড়ক ও রেলপথে তাঁদের সর্বাত্মক ‘বাংলা ব্লকেড’ বা অবরোধে গতকাল বুধবার অচল হয়ে পড়ে দেশ।

এর মধ্যেই গতকাল কোটার বিষয়ে চার সপ্তাহের স্থিতাবস্থা জারি করে আদালত আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ক্লাসে ফিরে পড়াশোনায় মন দিতে বলেছেন। সরকারের তরফ থেকেও বলা হয়েছে, আদালতের এই নির্দেশনার পর শিক্ষার্থীদের ক্লাসে ফেরা উচিত। আগামীতে বাস্তবসম্মত রায় দেবেন এবং আদালতের সিদ্ধান্তই এ ক্ষেত্রে চূড়ান্ত।

তবে আদালতের এই পদক্ষেপে সন্তুষ্ট নন আন্দোলনকারীরা। তাঁরা বলছেন, আদালতের এই নির্দেশনায় তাঁদের দাবির স্থায়ী সমাধান হবে না। কাজেই কোটার যৌক্তিক সংস্কার করে সংসদে আইন পাস করে যত দিন কোটা সমস্যার স্থায়ী সমাধান না হবে, তত দিন আন্দোলন চালিয়ে যাবেন তাঁরা।

অবিলম্বে দাবি মানা না হলে সামনে আদালত, সরকারি অফিসসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানও বাংলা ব্লকেড বা অবরোধের আওতায় নিয়ে আসবেন বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। নতুন কর্মসূচিও ঘোষণা করেছেন তাঁরা।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে সারা দেশে আন্দোলন করছেন শিক্ষার্থীরা। আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেছেন, ‘আমাদের দাবি আদালতের কাছে নয়, এখন আমাদের দাবি নির্বাহী বিভাগের কাছে। কোটার যৌক্তিক সংস্কার করে সংসদে আইন পাস করতে হবে।’

দাবি আদায় না হলে পর্যায়ক্রমে আন্দোলনের মাত্রা আরও কঠোর করতে বিভিন্ন সরকারি অফিস, আদালত ঘেরাওয়ের কথা ভাবছেন আন্দোলনকারীরা। বৈষমবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সহসমন্বয়ক রিফাত রশিদ বলেন, ‘প্রয়োজনে বিস্তৃত আন্দোলনের অংশ হিসেবে সামনে আদালত, অফিসকেও ব্লকেডের অন্তর্ভুক্ত করা হবে।’

রাজধানীতে গতকাল দিনভর ব্লকেড শেষে সন্ধ্যায় নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। ঘোষণা অনুযায়ী, আজ বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ৩টা থেকে সারা দেশে ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচি পালিত হবে। এ ঘোষণা দিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ বলেন, ‘আমাদের আন্দোলন অভিনব জনমত প্রতিষ্ঠার কর্মসূচি। জনদুর্ভোগের কর্মসূচি নয়। আমরা আইনি প্রক্রিয়ায় হাইকোর্টের বারান্দায় যেতে চাই না, আমরা পড়ার টেবিলে থাকতে চাই। আমরা স্থায়ী সমাধান চাই, সেটা নির্বাহী বিভাগের কাছে, আদালতের কাছে নয়।’

সরকারি চাকরিতে ৫৬ শতাংশ কোটা ছিল। এই কোটা সংস্কারের দাবিতে ২০১৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বড় ছাত্র আন্দোলন হয়। সেই আন্দোলনের মুখে ওই বছরের ৪ অক্টোবর সব ধরনের কোটা বাতিল করে পরিপত্র জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এর ফলে সরকারি চাকরিতে কোটাপদ্ধতি বাতিল হয়ে যায়।

তবে ২০২১ সালে সেই পরিপত্রের মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের অংশটিকে চ্যালেঞ্জ করে কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান উচ্চ আদালতে রিট করেন। সেই রিটের শুনানি শেষে গত ৫ জুন পরিপত্রের ওই অংশ অবৈধ ঘোষণা করেন আদালত। ফলে কোটা বহাল হয়ে যায়। এতে ক্ষুব্ধ হন শিক্ষার্থীরা। কোটা বাতিলের দাবিতে আবার রাস্তায় নামেন তাঁরা।

অবরোধে অচল দেশ
দুই দিন বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত আংশিক ব্লকেড শেষে গতকাল দেশজুড়ে সকাল-সন্ধ্যা ব্লকেড কর্মসূচি পালন করেন শিক্ষার্থীরা। এতে দেশের অধিকাংশ সড়ক, মহাসড়ক ও রেলপথ অচল হয়ে পড়ে। এতে রাজধানীসহ সারা দেশে তৈরি হয় অচলাবস্থা।

গতকাল সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগারের সামনে জড়ো হয়ে ক্যাম্পাসে মিছিল করেন শিক্ষার্থীরা। পরে বেলা ১১টা ৪৫ মিনিটে ক্যাম্পাস-সংলগ্ন শাহবাগ মোড় অবরোধ করেন তাঁরা। প্রায় একই সময়ে এ সময় পরীবাগ, বাংলামোটর, কারওয়ান বাজার, ফার্মগেট, চানখাঁরপুল মোড়, পল্টন, গুলিস্তান, মৎস্য ভবন, সায়েন্স ল্যাব, নীলক্ষেত, রামপুরা ব্রিজ, মহাখালী, আগারগাঁওসহ রাজধানীর অধিকাংশ গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে অবস্থান নেন বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। পরে বিকেল ৫টায় বিভিন্ন মোড় ছেড়ে দিয়ে শাহবাগে জড়ো হন তাঁরা।

দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে কারওয়ান বাজার রেলগেট ও মহাখালী রেলক্রসিংয়ে কাঠের গুঁড়ি ফেলে রেলপথ অবরোধ করেন আন্দোলনকারীরা। এতে ঢাকার সঙ্গে সারা দেশের রেল যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়।

কমলাপুর রেলস্টেশন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফেরদৌস বলেন, ‘আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা রেললাইনে কাঠ ফেলে অবরোধ করেন। রেললাইন অবরুদ্ধ থাকায় ঢাকার সঙ্গে সারা দেশের রেল যোগাযোগ সাময়িক সময়ের জন্য বন্ধ আছে।’

রাজধানীর বিভিন্ন মোড় অবরোধের ফলে রাজধানীজুড়ে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। এ সময় বিভিন্ন স্থানে ৫ থেকে ৬ ঘণ্টা অবরোধের মধ্যে পড়েন অনেকে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে হেঁটে নিজেদের গন্তব্যে পৌঁছাতে হয়েছে বলে জানিয়েছেন সাধারণ মানুষ।

রাজধানীর পাশাপাশি অবরোধের মাত্রা বেড়েছে রাজধানীর বাইরেও। দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপুর্ণ সড়ক-মহাসড়ক ও রেলপথ অবরোধ করে আন্দোলন করেছেন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়-কলেজের শিক্ষার্থীরা। অবরোধের ফলে ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-আরিচা, ঢাকা-রংপুর, বরিশাল-কুয়াকাটা, কুষ্টিয়া-খুলনা, ঢাকা-রাজশাহী, ঢাকা-পাবনা মহাসড়ক এবং ঢাকা-জয়দেবপুর-শিমুলতলী আঞ্চলিক মহাসড়কে দূরপাল্লার যান চলাচল বন্ধ ছিল। এ সময় মহাসড়কগুলোর উভয় পাশে ৮ থেকে ১০ কিলোমিটারের যানজট সৃষ্টি হয়। শত শত যানবাহন আটকে থাকার ফলে চরম দুর্ভোগে পড়েন পথচারী ও যাত্রীরা।

ঢাকার বাইরে মহাসড়ক-রেলপথ অবরোধ
ঢাকার বাইরেও গতকাল সড়ক-মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন কোটা বাতিলের দাবিতে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। এতে ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-রংপুর, বরিশাল-কুয়াকাটা, কুষ্টিয়া-খুলনা, ঢাকা-রাজশাহী, ঢাকা-পাবনা মহাসড়ক; ঢাকা-জয়দেবপুর-শিমুলতলী আঞ্চলিক মহাসড়কে দূরপাল্লার যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এ ছাড়া অবরুদ্ধ ছিল ঢাকা-ময়মনসিংহ রেলপথও।

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) শিক্ষার্থীরা গতকাল বেলা ১১টার দিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কোটবাড়ী অংশে অবস্থান নেন। এতে মহাসড়কের দুপাশে ৮ কিলোমিটার যানজটের সৃষ্টি হয়। গতকাল বেলা ৩টার দিকে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে অবস্থান নিলে সৃষ্টি হয় তীব্র যানজট।

কোটা বাতিলের দাবিতে বরিশাল-কুয়াকাটা মহাসড়ক অবরোধ করেন বরিশাল হাতেম আলী কলেজের শিক্ষার্থীরা। এ সময় তাঁরা বরিশাল শহরের চৌমাথা মোড় অবরোধ করেন। ফরিদপুর শহরের মুজিব সড়ক অবরোধ কর্মসূচি পালন করেছেন ফরিদপুরের কয়েকটি কলেজের শিক্ষার্থীরা।

রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ঢাকা-রংপুর মহাসড়কে অবস্থান নিলে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। কুষ্টিয়ায় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কুষ্টিয়া-খুলনা মহাসড়ক অবরোধে প্রায় ১০ কিলোমিটার এলাকায় যানজট সৃষ্টি হয়।

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা গতকাল বেলা ১১টা থেকে ময়মনসিংহের জব্বারের মোড়সংলগ্ন এলাকায় ঢাকা থেকে জামালপুরগামী তিস্তা এক্সপ্রেস ট্রেন অবরোধ করেন। সড়ক ও রেলপথ অবরোধ করেছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) ও চবি অধিভুক্ত কলেজের শিক্ষার্থীরাও। এতে চট্টগ্রাম-ঢাকা যেমন যানজটের সৃষ্টি হয়, তেমনি চট্টগ্রাম-সিলেট রুটে ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

গতকাল দুপুরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শিক্ষার্থীরা ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়ক অবরোধ করেন। দুপুরে ঢাকা-পাবনা মহাসড়ক অবরোধ করেন পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এ ছাড়া ঢাকা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (ডুয়েট) শিক্ষার্থীরা ঢাকা-জয়দেবপুর-শিমুলতলী আঞ্চলিক মহাসড়ক অবরোধ করে কর্মসূচি পালন করেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

নারী কমিশনের রিপোর্ট বাতিল হলে অন্যগুলোও বাতিলযোগ্য: উমামা ফাতেমা

খালেদা জিয়ার দেশে ফেরার ফ্লাইট থেকে সরানো হলো দুই কেবিন ক্রু

নারী কমিশন তৈরির জন্য জুলাই বিপ্লবে কেউ জীবন দেয়নি: মাহমুদুর রহমান

প্রাথমিকে আবার চালু হচ্ছে বৃত্তি পরীক্ষা: গণশিক্ষা উপদেষ্টা

পিরোজপুরে ২০ কোটি টাকা নিয়ে উধাও সমিতির পরিচালক, সদস্যদের বিক্ষোভ

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত