Ajker Patrika

ঝুঁকি নিয়ে আতঙ্ক আছে নিরসনে পদক্ষেপ নেই

আনোয়ার সাদাৎ ইমরান, মধুপুর (টাঙ্গাইল) 
আপডেট : ২১ নভেম্বর ২০২১, ১১: ৩৭
ঝুঁকি নিয়ে আতঙ্ক আছে নিরসনে পদক্ষেপ নেই

২৫ এপ্রিল ২০১৫। ৭ থেকে ৮ মাত্রার এক ভূমিকম্পে সেদিন লন্ডভন্ড হয়ে গিয়েছিল নেপাল। সেই কম্পন ছড়িয়ে পড়েছিল প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোতেও। বাদ যায়নি বাংলাদেশের মধুপুরের নুরুল ইসলামের বাঁশঝাড়, বাড়ির পাশের আনারসবাগান আর পাহাড়ি উঁচু টিলা। সেদিন নুরুলের বোকারবাইদ গ্রামের বিস্তীর্ণ এলাকায় ভূমি ফাটলে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন স্থানীয় বাসিন্দারা।

মধুপুরের পাহাড়ি এলাকা ভয়াবহ মাত্রার ভূমিকম্পপ্রবণ জানিয়ে বহুবার সতর্ক করেছেন দেশি-বিদেশি গবেষকেরা। ভূতত্ত্ববিদেরা জানিয়েছেন, মধুপুর গড়াঞ্চলে ৭ থেকে ৭ দশমিক ৫ মাত্রার ভূমিকম্প হওয়ার মতো ভূতাত্ত্বিক ফাটল রয়েছে। শক্তিশালী ভূমিকম্পে বড় ধরনের বিপর্যয়ের ঝুঁকিতে রয়েছে এ অঞ্চল। ভূতত্ত্ববিদদের এমন আশঙ্কার সত্যতা যাচাইয়ে সিসমোগ্রাফ বসিয়ে করা পরীক্ষা-নিরীক্ষাতেও এর প্রমাণ মেলে। তবু সতর্কতামূলক কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি মধুপুরে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ২০০৭ সালে কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) যৌথ উদ্যোগে মধুপুরের ভূ-ফাটল নিয়ে ধারণা পেতে উপজেলা পরিষদ ভবনের ছাদে সিসমোগ্রাফ বসানো হয়। কিন্তু প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ায় ২০১৫ সালে সেটিও তুলে নেওয়া হয়। তা ছাড়া, ভূমিকম্পের ক্ষতি কমাতে দুর্যোগ-সহনীয় অবকাঠামোগত উন্নয়ন বিষয়েও এখনো কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।

সিসমোগ্রাফ মেশিন বসানোর সেই প্রকল্পের প্রধান ছিলেন বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সৈয়দ হুমায়ুন আখতার। আজকের পত্রিকাকে তিনি বলেন, ‘গবেষণা প্রকল্পটির মেয়াদ ছিল ২০১২ সাল পর্যন্ত। সরকারি কোনো সহযোগিতা ছাড়াই আমরা ২০১৫ সাল পর্যন্ত এটা এগিয়ে নিয়ে যাই। ভূমিকম্পপ্রবণ এলাকাগুলোর ভূতলের গঠন, ঘনত্ব, কম্পন এবং শক্তি বের করে আনার জন্য সিসমোগ্রাফ বসিয়েছিলাম মধুপুরে। এই প্রকল্পে বিদেশ থেকে ধার করে মেশিন আনার কারণে নির্দিষ্ট সময়ের পর শর্ত অনুযায়ী সেগুলো আমরা ফেরত দিয়েছি।’

১৯১০ সালে ভারতীয় উপমহাদেশের ভূমিকম্প-বিষয়ক গবেষণায় ভূগোলবিদ ডিলাটিসে বাংলাদেশ প্রসঙ্গে বলেন, ‘মহাহিম যুগে সৃষ্টি হয়েছে মধুপুর গড়। যে কারণে এলাকাটি ভূকম্পনের জন্য বিপজ্জনক।’

কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) যৌথ উদ্যোগে যে গবেষণাটি হয়েছে, তার তথ্য- উপাত্ত ২০১৫ সালে একটি জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে বলে জানান অধ্যাপক হুমায়ুন। তবে তাদের গবেষণার পর ঝুঁকি কমানো নিয়ে সরকার আদৌ পদক্ষেপ নিয়েছে কি না, তা জানা নেই এই গবেষকের।

এ বিষয়ে মধুপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ছরোয়ার আলম খান আবু বলেন, ‘আমরা ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে রয়েছি। এ ব্যাপারে বেশ কিছুদিন আগে জেলা প্রশাসনের এক সভায় বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়। কিন্তু পরবর্তী সময়ে আর কিছু হয়েছে কি না, সেটা আমি জানি না।’

জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শামীমা ইয়াসমিন বলেন, ‘আমি অল্প কিছুদিন আগে দায়িত্বভার গ্রহণ করেছি। মধুপুরে স্থাপিত সিসমোগ্রাফ মেশিনের কোনো কাগজপত্র পাইনি। এমনকি আমি আসার পর এই প্রকল্প নিয়ে কোনো কাজও হয়নি।’

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কার্যক্রমের আওতায় ভূমিকম্পের সময় করণীয় ও সতর্কতা-বিষয়ক সচেতনতামূলক কার্যক্রম চলেছে বেশ কিছুদিন। তবে কয়েক বছর ধরে সেটিও বন্ধ।

মধুপুর রক্ষায় শিক্ষাবিদ বজলুর রশীদ খান চুন্নু, স্থানীয় আদিবাসী নেতা ইউজিনসহ এলাকাবাসী সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

অরকার আক্রমণে তরুণী প্রশিক্ষকের মৃত্যু, ভাইরাল ভিডিওটি সম্পর্কে যা জানা গেল

জি এম কাদেরের সাংগঠনিক কার্যক্রমে নিষেধাজ্ঞা ও মামলা প্রত্যাহার

ভারতকে পাকিস্তানি সেনাপ্রধানের পারমাণবিক যুদ্ধের হুমকি, যা বলল যুক্তরাষ্ট্র

প্লট–ফ্ল্যাট বরাদ্দে সচিব, এমপি, মন্ত্রী, বিচারপতিসহ যাঁদের কোটা বাতিল

জর্ডান-মিসরকে নিয়ে বৃহত্তর ইসরায়েল প্রতিষ্ঠা করতে চান নেতানিয়াহু

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত