Ajker Patrika

১৫ বছরের খরা ঘুচল বাংলাদেশের

রানা আব্বাস, হোবার্ট থেকে
১৫ বছরের খরা ঘুচল বাংলাদেশের

ম্যাচ শেষে রাতে বেলেরিভ ওভালের নর্থ স্ট্যান্ড পেরোতেই কানে এল সাগরের গর্জন। এতক্ষণ স্টেডিয়ামে এই জলরাশির গর্জন খুব একটা কানে আসেনি। কীভাবে আসবে, ম্যাচের সময় কানে এসেছে শুধুই বাংলাদেশের গর্জন।

হোবার্টকে মানুষ মনে রাখে এর অতুলনীয় প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের কারণে। কিন্তু এখন থেকে রিকি পন্টিং-ডেভিড বুনদের হোবার্টকে বাংলাদেশ মনে রাখবে একটা অচলায়তন ভাঙার গৌরবে —১৫ বছর পর বাংলাদেশ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের মূল পর্বে জিতেছে। গতকাল নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে ৯ রানের জয় শুধুই একটা জয় নয়। এ জয় টানা পরাজয়ের বৃত্ত থেকে বেরিয়ে আসার উপলক্ষ। এ জয় সব চাপ আর নেতিবাচকতা দূরে সরিয়ে নবযাত্রার উপলক্ষ।

সকাল থেকেই বাংলাদেশ তাকিয়ে ছিল আকাশের দিকে। ম্যাচ ঠিকঠাক হবে তো? মাথার ওপর যখন ঘনকালো মেঘ, ভাগ্যের ছোঁয়া পেলেন না সাকিব আল হাসান। টস হেরে শুরুতেই করতে হলো ব্যাটিং। এমন মেঘলা আবহাওয়ায় ভালো মানের ফাস্ট বোলারদের চোখ চক চক করে ওঠে। গতকাল সেটি যদি শুরুতে নেদারল্যান্ডসের বোলারদের হয়ে থাকে, আড়ালে হয়তো মুচকি হাসছিলেন তাসকিন আহমেদ।

বাংলাদেশের ব্যাটাররা বড় স্কোর গড়তে পারেননি যে তাসকিনরা একটু স্বস্তিতে বোলিং করবেন। নেদারল্যান্ডসকে আটকে দিতে হবে ১৪৪ রানের আগেই– এই চ্যালেঞ্জ নিয়ে বোলিংয়ের শুরুতেই বেলেরিভ ওভাল কাঁপিয়ে দিলেন তাসকিন আহমেদ। প্রথম ২ বলেই ২ উইকেট নিয়ে শুরুতেই ম্যাচের সুর বেঁধে দিলেন বাংলাদেশ পেসার। হ্যাটট্রিক হয়নি, তবে তাসকিন যে বোলিংটা করলেন, তাঁকে অনুসরণ করেছেন সতীর্থ বোলাররাও।

তাসকিনের অসাধারণ বোলিংয়ের সঙ্গে অন্য রকম ফিল্ডিংও দেখা গেল বাংলাদেশের। অসাধারণ দুটি রানআউটে ৩.৪ ওভারে ১৫ রান তুলতেই ডাচদের নেই ৪ উইকেট। এখান থেকে ম্যাচটা হেরে যাওয়ার আর কোনো কারণ থাকতে পারে না। কিন্তু বাংলাদেশের সামনে দেয়াল হয়ে দাঁড়ালেন কলিন আকারমান। এই কাঁটাকে সরিয়ে দেওয়ার কাজটাও করেছেন তাসকিন। আক্রমণাত্মক, নিয়ন্ত্রণ আর বৈচিত্র্যময় বোলিংয়ে টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারসেরা ২৫ রানে ৪ উইকেট নেওয়া তাসকিনই ম্যাচের নায়ক। আর পার্শ্ব নায়ক? অবশ্যই আফিফ হোসেন।

মূল লড়াইয়ে গতকাল বাংলাদেশ আর কোনো পরীক্ষা-নিরীক্ষায় যায়নি। স্বীকৃত দুই ওপেনার নাজমুল হোসেন শান্ত আর সৌম্য সরকারকে পাঠানো হয়েছে ইনিংস বোধনে। তাঁরা দুর্দান্ত কিছু করেননি আবার হতাশও করেননি। সৌম্য-শান্তর জুটি ৩১ বলে ৪৩ রান তুলে এনে দেন দারুণ এক শুরু।

ফন মেকেরেনের গতিময় শর্ট বল ঠিকঠাক পড়তে না পেরে পুল করতে গিয়ে সৌম্য ফিরলেন ১৪ বলে ১৪ রান করে। দ্রুত ফিরলেন শান্তও (২৫)। দারুণ এক শুরুর পরই মাঝ ইনিংসে সেই পুরোনো রোগ হঠাৎ ভর করল বাংলাদেশের ওপর। ৫ ওভারের মধ্যে ২৯ রান তুলতেই নেই ৪ উইকেট। লিটন দাস (৯), সাকিব আল হাসান (৭) আর ইয়াসির (৩) ফিরে গেলেন ঝটপট। তাসমান সাগরের শীতল হাওয়া হিমস্রোত যেন বয়ে গেল বাংলাদেশ দলের মিডল অর্ডারে।

এক প্রান্তে ভরসা হয়ে থাকা আফিফ হোসেন ষষ্ঠ উইকেটে নুরুল হাসান সোহানকে নিয়ে শুরু করলেন আরেক লড়াই। দুজনের ৩৭ বলে ৪৪ রানের জুটিতে বাংলাদেশ পেয়েছে লড়াইয়ের স্কোর। সোহানের ১৮ বলে ১৩ রানের ইনিংস ছিল আফিফকে এগিয়ে যাওয়ার সমর্থন। আফিফের ২৭ বলে ৩৮ রান অবশ্যই পরিস্থিতি বিবেচনায় গুরুত্বপূর্ণ এক ইনিংস।

গত কিছুদিনে বাংলাদেশ দল থেকে যে ‘ইম্প্যাক্ট’ শব্দ ধ্বনিত-প্রতিধ্বনিত হয়েছে, সেটি দেখা গেল শুধু মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতের ব্যাটিংয়েই। আটে নেমে ১২ বলে ২ চার আর ১ ছক্কায় ২০ রানের ইনিংস খেলে বাংলাদেশের স্কোর তিনি পৌঁছে দিলেন ১৪৪ রানে।

একাধিকবার বৃষ্টিবাধায় খেলা থামলেও ম্যাচ ভালোভাবে শেষ হতে সেটা আর বাধা হয়নি। বাধা হয়নি বাংলাদেশের দুর্দান্ত জয় পেতেও। এ জয়ে সরে গেল গত কদিনে জেঁকে বসা রাজ্যের চাপও। জয়ের দিনে সাকিব একটু নিষ্প্রভ রইলেন। তিনি হয়তো তাঁর সেরাটা জমিয়ে রেখেছেন বড় ম্যাচের জন্য। সেই বড় ম্যাচগুলোর একটি খেলতে আজ দুপুরে সিডনিতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। ঐতিহ্যবাহী এসএসজিতে পরশু তাদের প্রতিপক্ষ দক্ষিণ আফ্রিকা, যারা গতকাল জিম্বাবুয়ের সঙ্গে পয়েন্ট ভাগাভাগি করেছে বৃষ্টিবাধায়। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

টাকা দিয়ে নারীর চাবুকের ঘা খাচ্ছিলেন পুরুষ, দুজন গ্রেপ্তার

মানবিক করিডর না ভূরাজনৈতিক কৌশল? সীমান্তে যুক্তরাষ্ট্রের তৎপরতায় উদ্বেগ

বাংলাদেশ ও পাকিস্তানে স্টারলিংকের প্রস্তাবিত কার্যক্রমের বিস্তারিত চায় ভারত

নির্দেশনা মানেননি পাইলট, মদিনা–ঢাকা ফ্লাইটকে নামতে হলো সিলেটে

ভারত–বাংলাদেশ বাণিজ্য বিধিনিষেধের মূল্য গুনছেন ব্যবসায়ীরা

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত