Ajker Patrika

নবাব স্যার সলিমুল্লাহ

সম্পাদকীয়
নবাব স্যার সলিমুল্লাহ

পূর্ব বাংলার, বিশেষ করে পিছিয়ে পড়া মুসলমানদের স্বার্থ আদায়ে বিশ শতকের গোড়ার দিকে নেতৃত্বের হাল ধরেন নবাব স্যার সলিমুল্লাহ। দরিদ্র, শোষিত বাঙালি মুসলমানদের মুক্তির স্বতন্ত্র সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্র নির্মাণে তাঁর অবদান অনন্য।

পূর্বপুরুষদের জমিদারি ব্যবস্থা তাঁর সময়ে এসে ব্যাহত হয়েছিল। তাই তিনি ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেটের চাকরি নিতে বাধ্য হন। ১৯০১ সালে পিতার মৃত্যুর পর তিনি নবাব এস্টেটের দায়িত্ব পান। এই দায়িত্ব পাওয়ার পরপরই ঢাকার সব মহল্লায় তিনি স্থাপন করেছিলেন নৈশ বিদ্যালয়। পূর্ব বাংলার বৈষম্যের শিকার মানুষের উন্নতির জন্য তিনিই প্রথম স্বতন্ত্র প্রদেশ সৃষ্টির দাবি জানান। তাঁর দাবি অনুযায়ী ইংরেজ সরকার ১৯০৫ সালে ‘পূর্ববঙ্গ ও আসাম প্রদেশ’ সৃষ্টি করে ঢাকাকে এর রাজধানী করেছিল।

হিন্দু ব্রাহ্মণ্যবাদী আধিপত্যবাদের সময়ে পূর্ব বাংলার বঞ্চিত মুসলমান জনগোষ্ঠীর রাজনৈতিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক বোধ জাগ্রত করতে তাঁর নেতৃত্বেই ১৯০৬ সালে ঢাকায় অনুষ্ঠিত হয় ‘অল-ইন্ডিয়া মোহামেডান এডুকেশনাল কনফারেন্স’। এই সম্মেলন শেষে তাঁর প্রস্তাবে গঠিত হয় ‘নিখিল ভারত মুসলিম লীগ’। তাঁর একক প্রচেষ্টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার বীজ রোপিত হয়েছিল।

বর্তমান প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) প্রতিষ্ঠাতেও তাঁর পরিবারের দান অপরিসীম ছিল। কারণ অর্থাভাবে যখন এই প্রতিষ্ঠান বাস্তবায়ন করা সম্ভব হচ্ছিল না, তখন তাঁর পিতা সে সময় ১ লাখ ১২ হাজার টাকা দানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কিন্তু তিনি মারা গেলে স্যার সলিমুল্লাহ সেই অর্থ পরিশোধ করেন।

ঢাকার সমাজজীবনে পঞ্চায়েত পদ্ধতি প্রবর্তনে নবাব সলিমুল্লাহর অবদান অনস্বীকার্য। তিনি খেলাধুলা, বিভিন্ন ধরনের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, ঈদ উৎসব, বায়োস্কোপ প্রদর্শনী এবং নাট্যাভিনয়সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে উদারহস্তে পৃষ্ঠপোষকতা করতেন।

পিছিয়ে পড়া মুসলমান সমাজের জন্য তাঁর মন ব্যাকুল থাকলেও তিনি অসাম্প্রদায়িক চেতনার মানুষ ছিলেন। এ কারণে হিন্দুধর্মাবলম্বীরাও তাঁর নেতৃত্বকে মেনে নিতে কার্পণ্য করেনি। ব্রিটিশ সরকার তাঁকে সিএসআই, নবাব বাহাদুর, কেসিএসআই ও জিসিএসআই উপাধি দেয়। সমাজসংস্কারক এই মানুষটি ১৯১৫ সালের ১৬ জানুয়ারি মৃত্যুবরণ করেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত