সিডনিতে চনমনে বাংলাদেশ

স্থানীয় সময় বেলা ১০টার দিকে হোবার্ট বিমানবন্দরে বাংলাদেশ দলের অস্ট্রেলীয় লিয়াজোঁ কর্মকর্তাকে দেখে এক সাংবাদিক জানতে চাইলেন, দল কি এখনো হোটেলে? ‘হ্যাঁ, এত দ্রুত এসে কী করবে? কাল (পরশু) ওরা জিতেছে, রাতে মজা করেছে। এখনো হয়তো ঘুমোচ্ছে। আসবে ফ্লাইটের আধা ঘণ্টা আগে’—ভদ্রলোকের কণ্ঠে রসিকতার সুর।

দুপুর সাড়ে ১২টার ফ্লাইট ধরতে বাংলাদেশ এল পৌনে ১২টায়। মাত্র দুই দিনের পার্থক্যে দুই রকম ছবি দেখা গেল বাংলাদেশ দলে। গত শনিবারে হোবার্টে যখন বাংলাদেশ পা রেখেছিল, দেখেই মনে হচ্ছিল কী বিষম চাপ নিয়ে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলতে এসেছে তারা। এখনো সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে যথেষ্ট দূরত্বই বজায় রাখছে। তবে গতকাল হোবার্ট থেকে সিডনির উড়ান ধরা সাকিবদের চেহারা অন্য রকম দেখা গেল।

নেদারল্যান্ডসকে হারিয়ে একটা গেরো খুলেছে। প্রথমবারের মতো টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের মূল পর্ব শুরু করা গেছে জয় দিয়ে। তা-ই নয়, গতকালও ‘গ্রুপ-২’-এর পয়েন্ট টেবিলে বাংলাদেশ অবস্থান করছিল শীর্ষে। বিমানবন্দরে টেকনিক্যাল কনসালট্যান্ট শ্রীধরন শ্রীরামকে পয়েন্ট তালিকা দেখাতেই অট্টহাসি দিলেন। বাংলাদেশ খুব বেশি দূর না তাকালেও বড় একটা স্বপ্ন একটু হলেও উঁকি দিতে শুরু করেছে। সিডনিতে দক্ষিণ আফ্রিকা আর ব্রিসবেনে জিম্বাবুয়ের সঙ্গে জয়ের ধারাটা ধরে রাখতে পারলে শেষ চারের সম্ভাবনাও তো জাগতে পারে! আগের মতোই শ্রীরাম হাত তুলে ওপরে দেখান—কপালে থাকলে হবে।

সামনে কী হবে, সেটি এখনই ভেবে লাভ নেই, দলের সঙ্গে থাকা বিসিবির ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের প্রধান জালাল ইউনুসের সতর্কবাণী। তবে হোবার্টে সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি, বাংলাদেশ ফিরে পেয়েছে আত্মবিশ্বাস। সেই আত্মবিশ্বাসের ছটা দেখা গেল খেলোয়াড়দের চোখেমুখে। তরুণ পেসার হাসান মাহমুদ প্রশংসায় ভাসছেন। তাসকিন আহমেদ প্রশংসায় ভাসছেন। শিষ্যদের পারফরম্যান্সে খুশি ফাস্ট বোলিং কোচ অ্যালান ডোনাল্ডও।

তবে চিন্তার জায়গা থেকে গেছে ব্যাটিং নিয়ে। দুর্দান্ত বোলিং আর ফিল্ডিংয়ে পরশু নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে জিতলেও অনেক প্রশ্ন রয়ে গেছে বাংলাদেশের ব্যাটিং নিয়ে।

সুন্দর একটা শুরুর পর মিডল অর্ডারদের ওভাবে ধসে পড়াটা অবশ্যই উদ্বেগের। সেই উদ্বেগ লুকাননি বিসিবির প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীন নান্নুও, ‘টি-টোয়েন্টিতে আমাদের ব্যাটিং নিয়ে চিন্তা নতুন কিছু না। আমাদের খেলোয়াড়েরা ঘরোয়া ক্রিকেটে কটাই-বা টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্ট খেলে? ওই এক বিপিএল। চাপ সামলে বড় স্কোর গড়বে, বড় ইনিংস খেলবে—এই অভ্যাসটা তো আর অনুশীলন করে হয় না। প্রচুর ম্যাচ খেলতে হয়। এই ধরনের পরিস্থিতি সামলানোর অনেক অভিজ্ঞতা থাকতে হয়।’

শ্রীরাম যে ইম্প্যাক্ট ইনিংস চান তাঁর ব্যাটারদের কাছে, গত কিছুদিনে এটা কিছুটা দেখা যাচ্ছে মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতের কাছ থেকেই। বিমানবন্দরে হাসিখুশি মোসাদ্দেককে দেখা গেল ইয়াসির আলী রাব্বির সঙ্গে। পরশু রাব্বি দৃষ্টিকটুভাবে বোল্ড হয়েছেন মাত্র ৩ রান করে। তবে তিনি অনুপ্রাণিত হচ্ছেন সতীর্থ মোসাদ্দেকের ব্যাটিং থেকে, ‘ওর ওই ১২ বলে ২০ রানই আমাদের জিতিয়েছে। এমন আরও ইনিংস সামনেও হবে ইনশা আল্লাহ।’

হোবার্টের মতো সিডনিতেও প্রথম খেলতে এসেছে বাংলাদেশ। আগামীকাল এখানে তাদের প্রতিপক্ষ দক্ষিণ আফ্রিকা। এই ম্যাচের আগে ঝালিয়ে নিতে আজকের দিনটা সময় পাচ্ছেন সাকিবরা। হোবার্টে ঠান্ডা আর বৃষ্টি নিয়ে বেশ চিন্তা ছিল বাংলাদেশের। তবে সিডনিতে ঢুকেই বাংলাদেশ পেয়েছে ঝকঝকে আকাশ আর উষ্ণ আবহাওয়া। চনমনে এই আবহাওয়ার মতোই সাকিবরাও বেশ চনমনে। তাহলে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষেও দারুণ একটা ম্যাচের আশা করাই যায়।