Ajker Patrika

দিন শুরু নিজামের খাবারে

ইসমাইল হোসেন হাওলাদার, মঠবাড়িয়া (পিরোজপুর) 
দিন শুরু নিজামের খাবারে

সকালের আলো না ফুটতেই এক ঝাঁক শালিক এসে জড়ো হয় সড়কের ওপর। তাদের কিচিরমিচিরে পুরো এলাকা মুখরিত হয়ে ওঠে। মনে হবে, কোনো বিশাল সমাবেশের আয়োজন করেছে শালিকের দল। আসলে কিন্তু তা নয়। এটা সকালে খাবারের জন্য জমায়েত। আয়োজক পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ার পাখিপ্রেমী মো. নিজাম জমাদ্দার। পাখিগুলো তাঁর অতিথি। এক দিন-দুই দিন নয়, এ দৃশ্য প্রতিদিনের।

নিজাম জমাদ্দার মঠবাড়িয়া উপজেলার মিরুখালী ইউনিয়নের ওয়াহেদাবাদ গ্রামের মো. আনেচ জমাদ্দারের ছেলে। মিরুখালী বাজারে সেতুর পাশে দীর্ঘদিন ধরে তিনি পরোটা-সিঙ্গাড়া-পুরি বিক্রি করেন। শালিকের সঙ্গে সখ্যও তাঁর দীর্ঘদিনের। বিষয়টা এখন এমন পর্যায়ে গড়িয়েছে যে নিজামের দেওয়া খাবার খেয়েই পাখিগুলোর দিন শুরু করতে হবে।

সম্প্রতি মিরুখালী বাজারে গিয়ে দেখা যায়, প্রতিদিন ভোরে দোকান খোলার আগেই নিজাম জমাদ্দারের দোকানের টিনের চালায়, সামনে সড়কে শত শত শালিক জড়ো হতে থাকে। তিনি দোকান খুলে আগের দিনের অবশিষ্ট পরোটা ও পুরি টুকরো টুকরো করে ছড়িয়ে দিলে ঝাঁকে ঝাঁকে শালিক তা খাওয়া শুরু করে। খাওয়া শেষ হতেই পাখিগুলো ডানা মেলে নিজের মতো করে। স্থানীয় লোকজন জানান, শালিকগুলো প্রতিদিন প্রায় একই সময় এসে জড়ো হয় নিজামের দোকানে। কোনো কারণে নিজাম কোনো দিন দোকানে না গেলে শুরু হয় শালিকগুলোর অপেক্ষার পালা। দীর্ঘ অপেক্ষার পরও নিজামকে আসতে না দেখলে একসময় চলে যায় পাখিগুলো।

তবে নিজামের অনুপস্থিতির দিনে একটা বিষয় লক্ষণীয় থাকে। শালিকগুলো প্রতিদিনই জড়ো হয়েই কিচিরমিচির শুরু করে। নিজাম যেদিন দোকানে আসেন না, সেদিনও এর ব্যত্যয় ঘটে না। তবে দীর্ঘক্ষণ পরও নিজামকে আসতে না দেখলে পাখিগুলোর কিচিরমিচির কমে আসে। এক সময় শালিকগুলো ডাকাডাকিই বন্ধ করে দেয়। তারপর যখন ধৈর্য আর অপেক্ষার লড়াইয়ে ধৈর্য পরাজিত হয়, তখন পাখিগুলো উড়াল দিতে শুরু করে।

স্থানীয় লোকজন আরও জানান, নিজামের দেখাদেখি ইদানীং আরও অনেকে ভোরে শালিকগুলোকে খাবার দেন। তবে নিজাম দোকান খুলে খাবার দিতেই সব ফেলে পাখিগুলো ছুটে যায় তাঁর কাছে।

মিরুখালী ইউনিয়ন কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের ইমাম হাফেজ মাওলানা মো. ইলিয়াস আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘প্রতিদিন ফজরের নামাজ পড়ে বের হয়ে আমরা দেখি, নিজাম শালিকগুলোকে খাওয়াচ্ছে। মানুষ-পাখির এই ভালোবাসা দেখতে ভালো লাগে।’ মো. নিজাম জমাদ্দার বলেন, পাখিগুলোকে খাইয়ে তাঁর খুব ভালো লাগে। খাবারের সন্ধানে শালিকগুলো এভাবে তাঁর কাছে ছুটে আসে বলে নিজেকে ভাগ্যবানও মনে হয় কখনো কখনো।

উপকূলীয় জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ পরিষদ মঠবাড়িয়া উপজেলা শাখার পরিচালক আবুল কালাম আজাদ আকন আজকের পত্রিকাকে বলেন, নিজাম জমাদ্দারের কাজটি অনেক ছোট মনে হলেও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় এই অবদানও অনেক গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেন, নিজামের মতো সবারই এভাবে প্রাণ ও প্রকৃতি রক্ষায় এগিয়ে আসতে হবে। তাহলেই প্রকৃতি রক্ষা পাবে, জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ সম্ভব হবে এবং তার সুফল ভোগ করবে মানুষ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

পেহেলগাম হামলা: ধরা খেয়ে গেল মোদির কাশ্মীর ন্যারেটিভ

ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনা: বিমানবাহিনীকে সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিতে বললেন প্রধান উপদেষ্টা

সারজিসের সামনেই বগুড়ায় এনসিপি ও বৈষম্যবিরোধীদের মধ্যে হাতাহাতি-সংঘর্ষ

‘ঘুষের জন্য’ ৯১টি ফাইল আটকে রাখেন মাউশির ডিডি: দুদক

রাখাইনে মানবিক করিডর কি প্রক্সি যুদ্ধের ফাঁদ হবে, ভারত-চীন কীভাবে দেখবে

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত