Ajker Patrika

ঐক্যবদ্ধ হচ্ছেন পদবঞ্চিতরা

খান রফিক, বরিশাল
আপডেট : ২২ মে ২০২২, ০৯: ৫৮
ঐক্যবদ্ধ হচ্ছেন পদবঞ্চিতরা

বরিশাল নগর বিএনপির পদবঞ্চিত নেতারা ঐক্যবদ্ধ হচ্ছেন। আগামীর সরকারবিরোধী আন্দোলন সংগ্রামে আলাদাভাবে মাঠে থাকবেন তাঁরা। আন্দোলনের বিষয়ে কেন্দ্র থেকে যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে তা বাস্তবায়নের মাঠে থাকার ঘোষণা দিচ্ছেন পদবঞ্চিত নেতারা।

তবে বর্তমান কমিটি দিয়ে আন্দোলন সংগ্রামে সফলতা সম্ভব নয়। বর্তমান কমিটির নেতারা চাঁদাবাজিতে রেকর্ড করেছেন বলে দাবি পদবঞ্চিত নেতাদের।

এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন বরিশাল মহানগর বিএনপির সদস্যসচিব মীর জাহিদুল কবির। তিনি বলেন, ‘দলের প্রতি দায়বদ্ধতা থাকলে তাঁরা এ ধরনের কথা বলতে পারতেন না।’

জানা গেছে, গত শুক্রবার রাতে নগরের অভিজাত কমিউনিটি সেন্টার ‘পার্টি হাইজ’ ঈদ পুনর্মিলনীর আয়োজন করেন বরিশাল নগর বিএনপির বঞ্চিত নেতারা। এই পুনর্মিলনীতে আসা নেতাদের জন্য ভূরিভোজের আয়োজন করা হয়। মূল নতুন সমীকরণে গত কমিটির নেতারা আবারও সক্রিয় হচ্ছেন। দীর্ঘ এক যুগ নগর বিএনপির নেতৃত্ব দেওয়া নেতারা পুনর্মিলনীতে বর্তমান কমিটির সম্পর্কে বিষোদ্গার মন্তব্য করেন। নতুন কমিটিকে অকার্যকর দাবি করে তার বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে পদবঞ্চিত নেতা-কর্মীদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানানো হয়।

সভায় নগর বিএনপির সাবেক সহসভাপতি অ্যাডভোকেট মহসিন মন্টু বলেন, ‘আগামীর আন্দোলন সংগ্রামে বর্তমান কমিটি মাঠেই দাঁড়াতে পারবে না। ল্যাংড়া, লুলা কমিটি দিয়ে কোনো কাজ হবে না। আমরা এই কমিটির দিকে তাকিয়ে থাকব না। নিশি রাতের ভোট ঠেকাতে রাজপথে থাকব।’

অপর সহসভাপতি সৈয়দ আহসানুল কবির হাসান বর্তমান সরকারকে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ‘জোর করে ক্ষমতা আটকে রাখা যাবে না। আন্দোলনের মধ্য দিয়ে সরকার হটানো হবে।’

সাবেক যুগ্ম সম্পাদক সৈয়দ আকবর বলেন, ‘বিএনপির দুঃসময়ে যখন একসঙ্গে দুজন হাঁটা যায়নি, তখনো এই দল আঁকড়ে রেখেছিলাম। যাঁরা ১৫ বছর দলের খবর রাখেননি তাঁদের নেতৃত্ব আনা হয়েছে। তাঁরা ইফতারির নামে চাঁদাবাজি করে রেকর্ড করেছেন। এটার তাঁরা ভালো পারেন। কিন্তু সভা সমাবেশে দলীয় কর্মীদের আনতে পারেন না। তাহলে আন্দোলনের সময় কীভাবে মাঠে দাঁড়াবে এ কমিটি?’

সাবেক সহসম্পাদক আনোয়ারুল হক তারিন বলেন, ‘নতুন কমিটির কেউ কেউ নাকি বলেন, আমরা বিএনপির কেউ না। আরে আমরা বরিশালে বিএনপির জন্ম দিয়েছি। আমরা কারও অনুসারী না, দলের চেয়ারপারসনের অনুসারী।’

এ সময় উপস্থিত ছিলেন বিএনপি নেতা অ্যাডভোকেট শহীদ, আব্বাস উদ্দিন বাবলা, সাবেক কাউন্সিলর সৈয়দ নোমান, রফিকুল ইসলাম শাহিন, যুবদল নেতা আলাউদ্দিন, শ্রমিক দল নেতা রফিক আকন, মহিলা দল নেত্রী তাছলিমা কালাম পলি, স্বেচ্ছাসেবক দলের শমির, ছাত্রদল নেতা তরিকুল ইসলাম প্রমুখ।

এদিকে পদবঞ্চিত নেতাদের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন বর্তমান কমিটির নেতারা। মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক জিয়া উদ্দিন সিকদার বলেন, ‘চেয়ারম্যান নতুন নেতৃত্বের কাজের তদারকি করছেন। তাঁর দেওয়া কমিটিকে কটাক্ষ করা সমীচীন নয়। আন্দোলন সংগ্রামে ঐক্যবদ্ধ হয়ে দলীয় সিদ্ধান্ত মেনে চলেন, তবে তাঁদের স্বাগত জানানো হবে।’

তবে বর্তমান কমিটির চাঁদাবাজির বিষয়টি অস্বীকার করে তিনি বলেন, ‘আমি নগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক থাকাকালীন এ ধরনের চাঁদাবাজির অভিযোগ আসেনি। যাঁরা এ ধরনের অভিযোগ করছেন, তাঁদের কাছে প্রমাণ থাকলে দলের হাইকমান্ডের কাছে তুলে ধরুক।’

এদিকে বরিশাল মহানগর বিএনপির সদস্যসচিব মীর জাহিদুল কবির বলেন, ‘বরিশালবাসী দেখেছেন, কমিটি ল্যাংড়া-লুলা কি না। দলের প্রতি দায়বদ্ধতা থাকলে তাঁরা (পদবঞ্চিত নেতা) এ ধরনের কথা বলতে পারতেন না। তাঁরা দলের কর্মসূচিতে থাকেন না। তাঁরা যদি পারেন, শক্তিশালী কমিটি নিয়ে আসুক। আর ইফতারিকে কেন্দ্র করে চাঁদাবাজির কোনো ঘটনা ঘটেনি। কেউ তা প্রমাণও করতে পারবেন না। বরং ইফতারের বড় আয়োজন ও ব্যাপক মানুষের উপস্থিতি দেখে একটি মহল ঈর্ষান্বিত হয়ে এ ধরনের অপপ্রচার করছেন।’

মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান ফারুক সাংবাদিকদের বলেন, ‘আহ্বায়ক কমিটি গঠনের পর দলের গুটিকয়েক নেতা নতুন নেতৃত্ব নিয়ে কটূক্তি করছেন। ওয়ার্ড নেতা-কর্মীদের কর্মসূচিতে অংশ নিতে বাধা দিচ্ছেন। তাঁরা সীমা লঙ্ঘন করলে দলই তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে।’

প্রসঙ্গত, গত বছরের নভেম্বরে বিএনপির কমিটি গঠনের পর থেকে নগর বিএনপির পদ বঞ্চিত নেতারা দলের হাইকমান্ডের কাছেও বর্তমান কমিটির বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত