Ajker Patrika

উৎকোচ না দিলে হয়রানির মুখে জেলে-মৌয়ালরা

দাকোপ প্রতিনিধি
আপডেট : ০২ জুন ২০২২, ১৩: ০৮
উৎকোচ না দিলে হয়রানির মুখে জেলে-মৌয়ালরা

সুন্দরবনের মাছ-কাঁকড়া ধরা জেলে ও মধু সংগ্রহ করা মৌয়ালদের পাস নিয়ে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। পূর্ব সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জের ঢাংমারী স্টেশন কর্মকর্তারা এ অনিয়মে জড়িত বলে ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন। তাঁদের চাহিদামতো উৎকোচ না দিলে হয়রানি হতে হচ্ছে জেলে ও মৌয়ালদের।

ভুক্তভোগী মৌয়াল ও জেলেসূত্রে জানা গেছে, ঢাংমারী স্টেশন কর্মকর্তা সামানুল কাদির যোগদানের পর থেকে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতি করে আসছেন। যেসব জেলে ও মৌয়াল বৈধ পাস নিয়ে বনে মাছ, কাঁকড়া ও মধু সংগ্রহ করেন, তাঁদের কাছে তিনি উৎকোচ দাবি করেন। টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে উল্টো মামলার ভয়ভীতি দেখিয়ে অর্থ আদায় করা হয় বলে একাধিক ভুক্তভোগী অভিযোগ করেছেন। যে কারণে তাঁরা কোনো ঊর্ধ্বতন মহলে জানাতেও পারেন না।

বর্তমানে সুন্দরবনে মাছ ও কাঁকড়া ধরার পাস বন্ধ রয়েছে। কিন্তু ওই কর্মকর্তার সহযোগিতায় স্টেশনের বনের বিভিন্ন নদী-খালে, এমনকি নিষিদ্ধ এলাকায়ও বহাল তবিয়তে মাছ-কাঁকড়া ধরছেন অসাধু জেলেরা। এ মাছ আবার খুলনাসহ বিভিন্ন মোকামেও প্রকাশ্যে বিক্রি হচ্ছে। এদিকে দূবলার জেলেপল্লি টহল ফাঁড়ি থেকে ঢাংমারী স্টেশনে শুঁটকি ও মাছের ট্রলার এলে সেগুলোতে তল্লাশির নামে (সিটি চেকিং) উৎকোচ নেওয়া হয়।

এই টাকা আবার স্টাফরা সবাই ভাগ-বাঁটোয়ারা করে নেন। চলতি মৌসুমে ওই উৎকোচের প্রায় ৫ থেকে ৬ লাখ টাকার ভাগ স্টাফদের কাউকে না দিয়ে স্টেশন কর্মকর্তা নিজেই আত্মসাৎ করেছেন। এ নিয়ে স্টাফদের মধ্যে মতবিরোধ এখন তুঙ্গে। বিষয়টি নিয়ে স্টাফরা আবার বিএম সমিতির সভাপতির কাছে মৌখিকভাবে বিচারও দিয়েছেন।

রেখামারী এলাকার আলামিন মোড়ল বলেন, ‘আমি ভাড়ায় ট্রলার চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করি। কিছুদিন আগে আমাদের এলাকার কয়েকজন জেলে ঢাংমারী স্টেশন থেকে বৈধ পাস নিয়ে সুন্দরবনে মাছ ধরতে যায়। আমি ৩০০ টাকা ভাড়ায় চুক্তিতে তাদের প্রায় ৪০০ থেকে ৫০০ কেজি মাছ দিগরাজে যাওয়ার জন্য আমাদের ঘাট থেকে ট্রলারে ওঠাই। ট্রলার ছাড়ার প্রস্তুতিকালে স্টেশন কর্মকর্তা এসে বিষ দেওয়া মাছ বলে ট্রলারসহ আমাকে স্টেশনে নিয়ে যান। সঙ্গে দুই জেলেকেও। সেখানে নিয়ে আমার কাছে তিনি মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করেন। টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে আমার প্রতি আরও ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন।

এ সময় আমাকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য বারবার কাকুতি-মিনতি করলেও কর্মকর্তা আমার কোনো কথা শোনেননি। পরে টাকার বিনিময়ে ওই জেলেদের ছেড়ে দিয়ে আমাকে ৭ কেজি মাছ দিয়ে কোর্টে চালান দেন। কিন্তু মামলায় ১২০ কেজি মাছ উল্লেখ করেন। পরে জানতে পারি মোংলার এক ডিপোতে ওই মাছ বিক্রি করে প্রায় লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন তিনি।’

পূর্ব ঢাংমারী এলাকার মৌয়াল ওমর আলী হাওলাদার বলেন, ‘সম্প্রতি বৈধ পাস নিয়ে বনে মধু সংগ্রহ করতে যাই। পরে স্টেশন কর্মকর্তার নির্দেশে তাঁর লোকজন ৮৪ কেজি মধুসহ আমাকে স্টেশনে নিয়ে আসেন। সেখানে আমার কাছে উৎকোচ দাবি করেন। দিতে অস্বীকার করায় আমাকে হরিণ শিকারি বলে চালান দেন।’

পূর্ব ঢাংমারী এলাকার জেলে মিজানুর রহমান জানান, ঢাংমারী স্টেশন কর্মকর্তা যোগদানের পর থেকে ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতি চালিয়ে আসছেন। তিনি প্রায়ই জেলেদের ওপর জুলুম অত্যাচার করছেন। জেলেরা তাঁর চাহিদামতো উৎকোচের টাকা না দিলে যড়যন্ত্রমূলক মামলা দিয়ে হয়রানি করছেন। পূর্ব বন বিভাগের বিএম সমিতির সভাপতি মিজানুর রহমান (বিএম) সিটি চেকিংয়ের টাকার ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, ঢাংমারী স্টেশনের অফিস সহকারীরা আমার কাছে মৌখিক অভিযোগ করেছেন এবং বিষয়টি মিটানোর দাবি জানান। এরপর বিষয়টি নিয়ে আমি স্টেশন কর্মকর্তা সামানুল কাদিরের সঙ্গে মুঠোফোনে কথা বললে ঘটনাটি তিনি নিষ্পত্তি করবেন বলে আমাকে জানান। কিন্তু আজ পর্যন্ত তিনি এর কোনো সমাধান করেননি।

এ বিষয়ে ঢাংমারী স্টেশন কর্মকর্তা (এসও) সামানুল কাদির তাঁর বিরুদ্ধে সব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘আমি যাদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়েছি, তারা সবাই অপরাধী। সুন্দরবনে গিয়ে বিষ দিয়ে মাছ ধরে, মাছ শুকিয়ে নানা অপরাধমূলক কাজের সঙ্গে জড়িত। একজন ভালো মানুষকেও আমি হয়রানি করিনি। তা ছাড়া আমার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সবই জানেন। আমি ভালো ছাড়া মন্দ কাজ করলে তাঁরা আমাকে ছাড়বেন না।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মামলার আসামিসহ বিএসইসির ২২ কর্মকর্তাকে বরখাস্তের সিদ্ধান্ত

সরকারি টাকায় ব্যক্তিগত সড়ক কার্পেটিং বিচারপতি খিজির হায়াতের, প্রমাণ পেয়েছে দুদক

অভিনেতা সিদ্দিককে মারধর করে থানায় সোপর্দ, ছিঁড়ে ফেলা হয় পরনের পোশাক

ঐকমত্য কমিশনের সদস্যদের তেলের বরাদ্দ ২৫০ থেকে বেড়ে ৫০০ লিটার

বগুড়ায় ছাত্রদল নেতার ওপর হামলা, পাঁচ নেতা-কর্মীকে শোকজ

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত