Ajker Patrika

ঘানি টানা জীবন তাঁদের

জুবাইদুল ইসলাম, শেরপুর
আপডেট : ১২ মার্চ ২০২২, ০৯: ৩৮
ঘানি টানা জীবন তাঁদের

অভাব-অনটনের সংসার। স্বামী-স্ত্রীর সঙ্গে রয়েছে এক ছেলে ও এক মেয়ে। জায়গাজমির মধ্যে রয়েছে কেবল ভিটেমাটি। চারজনের এ সংসারে দু’বেলা দু’মুঠো ডাল-ভাতের আশায় পৈতৃক পেশা ঘানিতে সরিষা ভেঙে তেল উৎপাদনের কাজ শুরু করেন শেরপুরের পাকুড়িয়া চকপাড়া গ্রামের পঞ্চাশোর্ধ্ব সাজন মিয়া। কিন্তু ঘানির জন্য একটি গরু বা মহিষ কেনার সামর্থ্যও ছিল না তাঁদের। অনন্যোপায় হয়ে নিজেই ঘানির জোয়াল কাঁধে নেন সাজন। সঙ্গে স্ত্রী মোছা. বেগম। কিন্তু এতেও সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হয় পরিবারটিকে। অনেকটা বাধ্য হয়েই সারা দিন কাঁধে ঘানির জোয়াল বয়ে নেওয়ার পরও প্রতিদিন সন্ধ্যার পর রিকশা চালাতে হয় গৃহকর্তা সাজন মিয়াকে।

৩৫ বছর ধরেই চলছে এ দরিদ্র দম্পতির জীবনসংগ্রাম। পাঁচ বছর আগে একটি গরু কিনেছিলেন। পরে অভাবের কারণে বিক্রি করে দিতে হয়। ছেলে ও মেয়ে এখন জীবিকার তাগিদে ঢাকায় থাকে। তাদের আয় দিয়ে নিজেদেরই ঠিকমতো চলে না। বন্ধ করতে পারছেন না ঘানির জোয়াল। চালাতে হচ্ছে রিকশাও। কঠিন জীবনযুদ্ধে পেটের দায়ে মানুষ হয়েও পশুর পরিবর্তে ঘানির জোয়াল কাঁধে নিয়ে অনবরত তাঁদের নিজেদেরই ঘুরতে হচ্ছে ঘানির চক্রে। এ যেন আরেক জীবনচক্র।

সকাল সাতটা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত একটানা ঘানি টেনে ১০ কেজি সরিষা ভাঙতে পারেন। এক হাজার টাকায় কেনা এ সরিষা থেকে তিন লিটার তেল হয়। আর খৈল হয় ছয় কেজি। চার শ টাকা লিটার দরে তিন লিটার সরিষার তেল ও ৪০ টাকা দরে ছয় কেজি খৈল বিক্রি করে লাভ হয় সাড়ে চার শ টাকার মতো।

মো. সাজন মিয়া বলেন, ‘কষ্ট কইরা কোনোমতে চলতেছি। পশুর কাম আমরা করি। গরু কিনার মতো টাকা তো আর নাই। এহন বয়স হইয়া যাইতাছে, আগের মতো আর ঘানি টানতে পারি না। খুব কষ্ট হয়। থাহার ঘরটাও ভাঙা।’ মোছা. বেগম বলেন, ‘আমার দাদা ঘানি টানছে, মা টানছে। এহন গরু কিনার ট্যাহা-পয়সা নাই বইলা আমিও টানতাছি। আর এত সময় ঘানি টানার পর এহন আমার মা শ্বাসকষ্টসহ অনেক অসুখে পড়ছেন। আমরাও আস্তে আস্তে অসুস্থ হইয়া পড়তাছি। সরকার যদি একটু সাহায্য-সহযোগিতা করত, খুব উপকার হইত।

বেগম-সাজন দম্পতির দীর্ঘদিনের এই কষ্টের লাঘব চান স্থানীয়রাও। মো. আবুল কালাম আজাদ বলেন, অনেক দিন থেকেই দেখতাছি এরা খুব কষ্ট করে ঘানি টানে। একটা গরু না থাকায় গরুর কাজটা স্বামী-স্ত্রী মিলে করতাছে। দেইখা খুব খারাপই লাগে। স্থানীয় মো. খলিল মিয়া বলেন, কেউ যদি একটা গরু দিত, তাহলে তাঁদের কষ্টটা লাঘব হতো।

বিষয়টি জানতে পেরে তাঁদের প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করেন শেরপুরের জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. মোমিনুর রশীদ। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, বিষয়টি জানতে পেরে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে নির্দেশ দিয়েছি। সেই সঙ্গে এ পরিবারের খোঁজ-খবর নিয়েছি। আমরা প্রশাসনের পক্ষ থেকে দ্রুত তাঁদের একটি গরুর ব্যবস্থা করে দিচ্ছি। আর পাকুড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানকে বলেছি, একটি ঘরের ব্যবস্থা করে দিতে। আশা করছি, তাঁদের এই দুর্ভোগ আর থাকবে না।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

পেহেলগাম হামলা: ধরা খেয়ে গেল মোদির কাশ্মীর ন্যারেটিভ

ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনা: বিমানবাহিনীকে সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিতে বললেন প্রধান উপদেষ্টা

সারজিসের সামনেই বগুড়ায় এনসিপি ও বৈষম্যবিরোধীদের মধ্যে হাতাহাতি-সংঘর্ষ

‘ঘুষের জন্য’ ৯১টি ফাইল আটকে রাখেন মাউশির ডিডি: দুদক

রাখাইনে মানবিক করিডর কি প্রক্সি যুদ্ধের ফাঁদ হবে, ভারত-চীন কীভাবে দেখবে

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত