Ajker Patrika

বিরল বৃক্ষ কর্পূরগাছ

চয়ন বিকাশ ভদ্র, ময়মনসিংহ
আপডেট : ২০ জুন ২০২২, ০৯: ৩৭
বিরল বৃক্ষ কর্পূরগাছ

কর্পূর সবাই চিনি। প্রয়োজনে ব্যবহারও করি। পায়েস রান্না, পানি সুগন্ধযুক্ত করতে একসময় এর ব্যবহার থাকলেও এখন খুব একটা নেই। প্রাচীনকালে এবং মধ্যযুগে ইউরোপেও বিভিন্ন মিষ্টিজাতীয় খাদ্যকে সুগন্ধযুক্ত করতে কর্পূর ব্যবহার করা হতো। এই কর্পূরগাছের কাঠ থেকে পাতন পদ্ধতিতে কর্পূর সংগ্রহ করা হয়। বর্তমানে তারপিন থেকে কৃত্রিমভাবেও কর্পূর উৎপাদন করা হয়।

কর্পূর চিরসবুজ, মাঝারি উচ্চতার ছায়াবৃক্ষ। উদ্ভিদের বৈজ্ঞানিক নাম সিনেমোমাম ক্যামফোরা এবং এটি লরেসি পরিবারের একটি উদ্ভিদ। ইংরেজিতে ক্যামফোর ট্রি, ক্যামফোর উড ইত্যাদি নামে এটি পরিচিত। বাংলাদেশের ২০১২ সালের বন্য প্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইনের তফসিল-৪ অনুযায়ী এ প্রজাতিটি সংরক্ষিত।

কর্পূরগাছ ২০ থেকে ৩০ মিটার পর্যন্ত লম্বা হতে পারে। এশিয়ায় এটি ঔষধি গাছ হিসেবেও ব্যবহার করা হয়। স্থানবিশেষে একে কাপুর নামেও ডাকা হয়। আদি নিবাস ইয়াংসি নদীর দক্ষিণে অবস্থিত চীনা অংশ, তাইওয়ান, দক্ষিণ জাপান, কোরিয়া ও ভিয়েতনাম। একটি পরিণত গাছ থেকে ৪-৫ কেজি কর্পূর পাওয়া যায়। যদিও গাছের বয়স হতে হবে কমপক্ষে ৫০ বছর। গাছ থেকে মোমের মতো যে রস বেরোয়, তা থেকেই কর্পূর তৈরি হয়। এর কাণ্ড, পাতা, ডাল সবকিছুতেই কর্পূর আছে।

ময়মনসিংহ শহরের সরকারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজ (পুরুষ) ক্যাম্পাসের মসজিদের উত্তর-পূর্ব দিকে প্রথম কর্পূরগাছ দেখি। সেখানে পাশাপাশি পাঁচটি কর্পূরগাছ আছে। ছবিটি সম্প্রতি সেখান থেকে তোলা। ঢাকার মিরপুর জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যান, বলধা গার্ডেন এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে কর্পূরগাছ আছে। এ গাছের পাতা আকারে ছোট, দেখতে অনেকটা দারুচিনি বা তেজপাতার মতো। ব্যতিক্রমী পাতার গড়ন, নিশ্ছিদ্র বুনন ও ডালপালার বিন্যাস চোখে পড়ার মতো।

কর্পূরগাছ এ অঞ্চলের আদি বৃক্ষ নয়। এটি প্রায় ২০০ বছর আগে এসেছে ভারত উপমহাদেশে। মাটির কাছাকাছি থেকে ডালপালাগুলো চারপাশে সমান্তরালভাবে ছড়িয়ে পড়ে। মূলত এ বৈশিষ্ট্যের কারণেই খানিকটা দূর থেকে গাছটি শনাক্ত করা যায়। ছড়ানো ডালপালার ডগায় পাতাগুলো গুচ্ছবদ্ধ থাকে। গাছে ফাল্গুন ও চৈত্র মাসে ছোট ছোট সবুজাভ ফুল ফোটে। তারপর জাম আকৃতির ফল আসে। কর্পূরের স্বাদ তেতো, তবে সুগন্ধি, রং সাদা। সাধারণত গাছের বীজ থেকে চারা তৈরি করা হয়ে থাকে। শক্ত ও নরম কাঠের ডাল কেটে কলম করেও চারা তৈরি করা যায়।

কর্পূরের অনেক গুণ রয়েছে। এটি ত্বকে অ্যালার্জির সমস্যা দূর করে, জলে কর্পূর তেল ফেলে স্নান করলে অ্যালার্জি কমে যায়। নখে ছত্রাক সংক্রমণও ঠেকায়, ক্যানডিডা প্যারাপসিলোসিস, ট্রাইকোফাইটন মেন্টাগ্রোফাইটস জাতীয় ছত্রাকের সংক্রমণ দূরে রাখে। শিশুদের একজিমা সারাতে সাহায্য করে, একজিমা কমানোর লোশন ও ক্রিমে ব্যবহার হয় কর্পূর। বালিশে এক ফোঁটা কর্পূর তেল ফেলে রাখলে ভালো ঘুম হয়। শ্বাসনালিতে ঘা, সর্দিকাশিও নিমেষে দূর করে এটি। গরম পানিতে বাষ্প নেওয়ার সময় এক চিমটি কর্পূর ফেললে উপকার হয়।

লেখক: সহযোগী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান, উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগ, মুমিনুন্নিসা সরকারি মহিলা কলেজ, ময়মনসিংহ

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

৬৮ কোটি টাকা আত্মসাৎ: ডেলটা গ্রুপের চেয়ারম্যান ফারুকসহ ১৫ জনের নামে মামলা

১ লাখ ৮২২ শিক্ষক নিয়োগ: যোগ্য প্রার্থীদের প্রাথমিক তালিকা চলতি সপ্তাহে

‘মুসলিম ফ্রন্টগুলোকে ঐক্যবদ্ধ করুন, ইন্টেরিম ভেঙে দিন’

সিলেটে পাথর লুটে জড়িত দুই দলের ৩৫ নেতা

‘বউ আমাকে মিথ্যা ভালোবাসত, টাকা না থাকলে ছেড়ে যাবে, তাই মরে গেলাম’

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত