Ajker Patrika

অবন্তিকাকে কেন মরতে হলো

সম্পাদকীয়
অবন্তিকাকে কেন মরতে হলো

ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ফাইরুজ অবন্তিকা ১৫ মার্চ কুমিল্লায় নিজের বাড়িতে আত্মহত্যা করেছেন। এ ঘটনায় শনিবার দিনভর উত্তাল ছিল জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস। অবন্তিকার সহপাঠী আম্মান সিদ্দিকী ও সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলামকে আটক করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশ। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা দেওয়ার দাবি তুলেছেন শিক্ষার্থীরা।

অবন্তিকা ছিলেন জবির আইন বিভাগের ১৩তম ব্যাচের শিক্ষার্থী। আত্মহত্যার আগে ফেসবুক পোস্টে অবন্তিকা লিখেছেন, ‘আমি যদি কখনো সুইসাইড করে মারা যাই, তবে আমার মৃত্যুর জন্য একমাত্র দায়ী থাকবে আমার ক্লাসমেট আম্মান সিদ্দিকী। আর তার সহকারী হিসেবে তাকে সাপোর্টকারী জগন্নাথের সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলাম। আম্মান যে আমাকে অফলাইন-অনলাইনে থ্রেটের ওপর রাখত, সে বিষয়ে প্রক্টর অফিসে অভিযোগ করেও আমার লাভ হয় নাই। দ্বীন ইসলাম আমাকে নানানভাবে ভয় দেখায় যে আম্মানের হয়ে আমাকে বহিষ্কার করা ওনার জন্য হাতের ময়লার মতো ব্যাপার। আমি জানি এখানে কোনো জাস্টিস পাব না।’ এর আগে অবন্তিকা তাঁর এক বন্ধুকে বলেন, ‘আমার ক্যাম্পাসে যেতে ইচ্ছা করে না, দম বন্ধ লাগে।’

জানা গেছে, অবন্তিকা পড়াশোনার পাশাপাশি ক্যাম্পাসে সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত ছিলেন। বিভিন্ন অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করতেন। রেজাল্ট হতো প্রথম, দ্বিতীয় বা তৃতীয়। ক্যাম্পাসের কুকুর-বিড়ালকে নিয়মিত খাবার দিতেন। রঙতুলি ফাউন্ডেশন নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। উপস্থাপনা করতেন বাংলাদেশ বেতারে।

অবন্তিকার আত্মহত্যার ঘটনাটি উদ্বেগের। জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ এক বিবৃতিতে বলেছেন, নারী শিক্ষার্থীরা প্রায়ই শিক্ষাঙ্গনে হয়রানির শিকার হচ্ছেন। সে বিষয়ে শক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে শিক্ষার্থীদের প্রতি যত্নশীল হতে হবে এবং শিক্ষার্থীবান্ধব সুষ্ঠু শিক্ষার পরিবেশ তৈরির জন্য মনোযোগী হতে হবে।

একটি কথা প্রচলিত আছে, আত্মহত্যা মহাপাপ। তারপরও মানুষ কেন আত্মহননের পথ বেছে নেয়? যারা সে পথ বেছে নেয়, কী কাজ করে তাদের মস্তিষ্কে, মননে এবং চিন্তায়? আবেগ কি তখন বিবেককে অতিক্রম করে যায়?

আত্মহনন বিষয়ে কোনো দার্শনিক তত্ত্ব আলোচনার সময় এটা নয়। আমরা যেন বিষয়টি দুই-চার দিনের মধ্যে ভুলে না যাই এবং একই সঙ্গে দাবি জানাই এসবের প্রতিকারের এবং প্রতিরোধের। দাবি জানাই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে, শিক্ষকদের কাছে, শিক্ষার্থীদের কাছে, সমাজের কাছে, রাষ্ট্রের কাছে। 

ভবিষ্যতে এ-জাতীয় ঘটনা রোধে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়াও ভীষণ জরুরি। মানুষের মানসিক স্বাস্থ্য, তার একাকিত্ব এবং অসহায়ত্ব, তার সামাজিক পরিবেশের বৈরিতা সম্পর্কে উদাসীনতা পরিহার করতে হবে।

আত্মহননের মতো চরম সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরিস্থিতি উদ্ভব হওয়াটা অভিপ্রেত নয়। এ ব্যাপারে পরিবারের, সমাজের ও রাষ্ট্রের একটি ভূমিকা রয়েছে। আমরা নির্লিপ্ত হয়ে বসে থাকলে কিংবা সে ব্যাপারে উদাসীন হয়ে থাকলে অথবা দায়সারা একটি ভূমিকা পালন করলে, আমরাও কি অপরাধের সমান অংশীদার হব না?

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ফোন-ইন্টারনেট ভাতা পাচ্ছেন মাঠ প্রশাসনের সব কর্মচারী

ভাড়া বাড়িতে চলা ১৬ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিসহ সব শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধের নির্দেশ

পিপির বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব ৪৯ জন সহকারী পিপির

জোবাইদার নিরাপত্তার নামে প্রতিবেশীদের বিরক্ত না করার নির্দেশ তারেক রহমানের

শান্ত যে কারণে টি-টোয়েন্টি দলে, মিরাজ কেন নেই

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত