রাজীব কুমার সাহা
আমাদের দৈনন্দিন ভাষিক আদান-প্রদানে ‘পাততাড়ি গোটানো’ বাগধারাটি কমবেশি সবাই ব্যবহার করেছি। পরিস্থিতির প্রসঙ্গ অনুসারে আমরা প্রায়ই এটি প্রয়োগ করে থাকি। যেমন ‘কোম্পানিটি গ্রাহকের মুনাফা ঠকিয়ে অল্প দিনের ব্যবধানেই পাততাড়ি গুটিয়েছে।’
সাধারণভাবে ‘পাততাড়ি গোটানো’র অর্থ হলো পালিয়ে যাওয়া বা চম্পট দেওয়া—যেটি নেতিবাচক। কিন্তু ভাষিক সংশ্রয়ে কীভাবে এল ‘পাততাড়ি’ শব্দটি? পাততাড়ি শব্দের মানেই বা কী? কীভাবে ভাষিক বিবর্তনের মধ্য দিয়ে পাততাড়ি গোটানোর অর্থটি নেতিবাচক রূপে বাংলা ভাষায় স্থান করে নিল? চলুন জানি।
পাতার তাড়ি থেকে ‘পাততাড়ি’ শব্দটি সৃষ্টি হয়েছে। ‘তাড়ি’ শব্দের অর্থ হলো ছোট গোছা বা তাড়া, গুচ্ছ। সংস্কৃত ‘পত্র’ শব্দ থেকে উদ্ভূত পাততাড়ি শব্দের অর্থ হলো তালপাতার গুচ্ছ। এটি বিশেষ্য পদ। এর অধুনালুপ্ত আরেকটি অর্থ হলো পাঠশালায় ছাত্রদের লেখার জন্য রাখা তালপাতার গুচ্ছ। সুতরাং আক্ষরিক অর্থে পাততাড়ি গোটানো শব্দের অর্থ হয় লেখাপড়া শেষ করার পর লিখিত তালপাতা গুছিয়ে তাড়া বা গোছা বাঁধা। এটি ক্রিয়াবিশেষ্য পদ। অপরপক্ষে এর আলংকারিক অর্থ হলো কাজ হয়ে যাওয়ার পর নিজের জিনিসপত্র গুছিয়ে নিয়ে দ্রুত কেটে পড়া। আলংকারিক এ অর্থটি আমাদের ভাষাভাষী সমাজে সম্পূর্ণ নেতিবাচক অর্থে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।
পাততাড়ি গোটানো শব্দবন্ধটি মূল অর্থে নেতিবাচক রূপে ব্যবহৃত হতো না। শুরুর দিকে এর ছিল একটি পরিশীলিত অর্থ। দলবদ্ধভাবে গুরুগৃহে বিদ্যাশিক্ষার জন্য আগেকার দিনে বিদ্যার্থীরা কঞ্চির কলম, হাতে বানানো কালি, তালপাতা কিংবা ভূর্জপত্র তথা ভূর্জ বৃক্ষের বাকল নিয়ে উপস্থিত হতো। এ দেশে যখন কাগজের প্রচলন ছিল না, তখন এসব উপকরণেই লেখালেখির কার্যক্রম চলত।
গুরুগৃহে লেখাপড়া শেষ করে বিদ্যার্থীরা পাততাড়ি বা তালপাতার তাড়ি ভালোভাবে গুছিয়ে নিয়ে বাড়ি ফিরে আসত। বিদ্যার্জন শেষ করে পাততাড়ি গুছিয়ে বাড়ি ফেরার এ অনুষঙ্গটি থেকেই ‘পাততাড়ি গোটানো’র আলংকারিক অর্থটির জন্ম হয়েছে; অর্থাৎ কোনো কাজ সম্পাদন শেষে বা নিজেদের স্বার্থ সিদ্ধি হওয়ার পর সব উপকরণ গুছিয়ে সেখান থেকে দ্রুত সরে পড়াকেই বলে পাততাড়ি গোটানো।
সভ্যতা ও জ্ঞান-বিজ্ঞানের উৎকর্ষের সঙ্গে সঙ্গে ভাষিক শব্দাবলির অর্থেরও বিবর্তন ঘটে। এ ধারায় কখনো শব্দের অর্থের উন্নতি হয়, আবার কখনো হয় অবনতি। আবার কখনো অর্থের পরিসরও কমবেশি হয়ে থাকে। পাততাড়ি গোটানো বাগধারাটিতে যেমন অর্থের পরিসর বেড়েছে ঠিকই, কিন্তু অর্থটি স্পষ্টতই নেতিবাচক রূপ পরিগ্রহ করেছে। প্রকৃত অবস্থাদৃষ্টে পাততাড়ি গোটানোর ইতিবাচক অর্থটি আমাদের ভাষাভাষী সমাজ থেকে ইতিমধ্যে পাততাড়ি গুটিয়েছে আর নেতিবাচক অর্থটি শক্ত করে ঝান্ডা গেড়েছে।
লেখক: আভিধানিক ও প্রাবন্ধিক
আমাদের দৈনন্দিন ভাষিক আদান-প্রদানে ‘পাততাড়ি গোটানো’ বাগধারাটি কমবেশি সবাই ব্যবহার করেছি। পরিস্থিতির প্রসঙ্গ অনুসারে আমরা প্রায়ই এটি প্রয়োগ করে থাকি। যেমন ‘কোম্পানিটি গ্রাহকের মুনাফা ঠকিয়ে অল্প দিনের ব্যবধানেই পাততাড়ি গুটিয়েছে।’
সাধারণভাবে ‘পাততাড়ি গোটানো’র অর্থ হলো পালিয়ে যাওয়া বা চম্পট দেওয়া—যেটি নেতিবাচক। কিন্তু ভাষিক সংশ্রয়ে কীভাবে এল ‘পাততাড়ি’ শব্দটি? পাততাড়ি শব্দের মানেই বা কী? কীভাবে ভাষিক বিবর্তনের মধ্য দিয়ে পাততাড়ি গোটানোর অর্থটি নেতিবাচক রূপে বাংলা ভাষায় স্থান করে নিল? চলুন জানি।
পাতার তাড়ি থেকে ‘পাততাড়ি’ শব্দটি সৃষ্টি হয়েছে। ‘তাড়ি’ শব্দের অর্থ হলো ছোট গোছা বা তাড়া, গুচ্ছ। সংস্কৃত ‘পত্র’ শব্দ থেকে উদ্ভূত পাততাড়ি শব্দের অর্থ হলো তালপাতার গুচ্ছ। এটি বিশেষ্য পদ। এর অধুনালুপ্ত আরেকটি অর্থ হলো পাঠশালায় ছাত্রদের লেখার জন্য রাখা তালপাতার গুচ্ছ। সুতরাং আক্ষরিক অর্থে পাততাড়ি গোটানো শব্দের অর্থ হয় লেখাপড়া শেষ করার পর লিখিত তালপাতা গুছিয়ে তাড়া বা গোছা বাঁধা। এটি ক্রিয়াবিশেষ্য পদ। অপরপক্ষে এর আলংকারিক অর্থ হলো কাজ হয়ে যাওয়ার পর নিজের জিনিসপত্র গুছিয়ে নিয়ে দ্রুত কেটে পড়া। আলংকারিক এ অর্থটি আমাদের ভাষাভাষী সমাজে সম্পূর্ণ নেতিবাচক অর্থে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।
পাততাড়ি গোটানো শব্দবন্ধটি মূল অর্থে নেতিবাচক রূপে ব্যবহৃত হতো না। শুরুর দিকে এর ছিল একটি পরিশীলিত অর্থ। দলবদ্ধভাবে গুরুগৃহে বিদ্যাশিক্ষার জন্য আগেকার দিনে বিদ্যার্থীরা কঞ্চির কলম, হাতে বানানো কালি, তালপাতা কিংবা ভূর্জপত্র তথা ভূর্জ বৃক্ষের বাকল নিয়ে উপস্থিত হতো। এ দেশে যখন কাগজের প্রচলন ছিল না, তখন এসব উপকরণেই লেখালেখির কার্যক্রম চলত।
গুরুগৃহে লেখাপড়া শেষ করে বিদ্যার্থীরা পাততাড়ি বা তালপাতার তাড়ি ভালোভাবে গুছিয়ে নিয়ে বাড়ি ফিরে আসত। বিদ্যার্জন শেষ করে পাততাড়ি গুছিয়ে বাড়ি ফেরার এ অনুষঙ্গটি থেকেই ‘পাততাড়ি গোটানো’র আলংকারিক অর্থটির জন্ম হয়েছে; অর্থাৎ কোনো কাজ সম্পাদন শেষে বা নিজেদের স্বার্থ সিদ্ধি হওয়ার পর সব উপকরণ গুছিয়ে সেখান থেকে দ্রুত সরে পড়াকেই বলে পাততাড়ি গোটানো।
সভ্যতা ও জ্ঞান-বিজ্ঞানের উৎকর্ষের সঙ্গে সঙ্গে ভাষিক শব্দাবলির অর্থেরও বিবর্তন ঘটে। এ ধারায় কখনো শব্দের অর্থের উন্নতি হয়, আবার কখনো হয় অবনতি। আবার কখনো অর্থের পরিসরও কমবেশি হয়ে থাকে। পাততাড়ি গোটানো বাগধারাটিতে যেমন অর্থের পরিসর বেড়েছে ঠিকই, কিন্তু অর্থটি স্পষ্টতই নেতিবাচক রূপ পরিগ্রহ করেছে। প্রকৃত অবস্থাদৃষ্টে পাততাড়ি গোটানোর ইতিবাচক অর্থটি আমাদের ভাষাভাষী সমাজ থেকে ইতিমধ্যে পাততাড়ি গুটিয়েছে আর নেতিবাচক অর্থটি শক্ত করে ঝান্ডা গেড়েছে।
লেখক: আভিধানিক ও প্রাবন্ধিক
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫পাকিস্তানে ভারতের হামলার সমালোচনা করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। চীনও এই হামলাকে ‘দুঃখজনক’ বলে অভিহিত করেছে। উদ্বেগ জানিয়েছে জাতিসংঘও। উত্তেজনা যেন আরও না বাড়ে, সে জন্য দুই পক্ষকে সংযত থাকার আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ, ফ্রান্সসহ বিভিন্ন দেশ। এদিকে ভারতের অবস্থানকে সমর্থন করেছে...
০৮ মে ২০২৫