Ajker Patrika

নীরবতা হিরণ্ময়

সৈয়দ রুহুল আমিন
আপডেট : ১৬ জুলাই ২০২২, ০৯: ৫৭
নীরবতা হিরণ্ময়

সৈয়দ মুজতবা আলী বরোদা শহরে ছিলেন ১৯৩৬ সাল থেকে ১৯৪৪ পর্যন্ত। সেই শহরেরই বাসিন্দা ছিলেন ফৈয়াজ খাঁ সাহেব।

দুজনের ভেতর গভীর বন্ধুত্ব হয়েছিল।

প্রায়ই ওস্তাদজী তাঁর প্রিয় সৈয়দ সাহেবের বাসায় চলে আসতেন। কত দিন যে সন্ধ্যায় এসে ভোরে ফিরতেন, তার কোনো হিসাব ছিল না।

একবার সৈয়দ মুজতবা আলী সাহেবের বাসায় খাঁ সাহেবের গানের মেহফিল বসেছে।

ওস্তাদ সেদিন বড় মৌজে।

সেদিন বরোদায় ১১৪ ডিগ্রি গরম পড়েছিল। রাতদুপুরেও অসহ্য গরম, বর্ষা নামতে তখনো দুই মাস বাকি।

অনেক কিছু গাওয়ার পর ওস্তাদজী শুধোলেন, আদেশ করুন, কী গাইব।

শ্রোতাদের পক্ষ থেকে অনুরোধ জানানো হলো, ‘মেঘমল্লার।’

ওস্তাদজী সঙ্গে সঙ্গে গান ধরলেন।

যেন তিনি তাঁর সমস্ত সাধনা, সমস্ত ঘরানা, সমস্ত সৃজনশক্তি, বিধিদত্ত গুরুদত্ত সর্বকলাকৌশল সেই সংগীত সম্মোহন ইন্দ্রজালে ঢেলে দিলেন।

উপস্থিত মুগ্ধ শ্রোতারা নির্বাক নিস্পন্দ হয়ে যেন সর্বলোমকূপ দিয়ে সেই মাধুরী শোষণ করছিলেন।

এমন সময় বাইরে কয়েক ফোঁটা বৃষ্টি।

মেহফিলে হুলুস্থুল পড়ে গেল।

তারপর শ্রোতারা যেভাবে ওস্তাদজীকে অভিনন্দন জানাতে শুরু করলেন তা খুব সহজেই অনুমেয়।

কিন্তু কোনো প্রশংসাবাক্যই যেন ওস্তাদজীকে স্পর্শ করছিল না।

অন্যদিন ওস্তাদজী শ্রোতাদের অভিনন্দন, প্রশংসাবাদ, মারহাবা যতখানি ঝুঁকে ঝুঁকে সেলাম জানিয়ে গ্রহণ করতেন, সেদিন তিনি সে রকম করলেন না। দু-একবার সেলাম জানিয়ে গালে হাত দিয়ে চুপ করে বসে রইলেন।

ওস্তাদ ফৈয়াজ খাঁ সাহেব অত্যন্ত সুদর্শন ছিলেন। চেহারা-রং সব মিলিয়ে অসাধারণ রূপবান ছিলেন। কিন্তু সেদিন সবকিছু ছাপিয়ে তাঁকে অত্যন্ত মলিন দেখাচ্ছিল।

ব্যাপারটি ওই মেহফিলের আয়োজক সৈয়দ মুজতবা আলীর নজরে পড়ল।

তিনি তাই অনুরোধ করলেন, ওস্তাদজী, বড় ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন, একটু বিশ্রাম নিন।

ওস্তাদজী উত্তরে বললেন, আচ্ছা, সৈয়দ সাহেব, লোকে আমাকে এ রকম লজ্জা দেয় কেন বলুন তো? আমি কি গান গেয়ে বৃষ্টি নামাতে পারি?

সৈয়দ মুজতবা আলী অবাক হয়ে ভাবলেন একজন মানুষ মনের দিক থেকে কতটুকু বড় হলে প্রশংসাবাক্যে স্ফীত না হয়ে বরং বিব্রতবোধ করে।

বন্ধুভাগ্যে গর্বিত মুজতবা আলী তাই বিন্দুমাত্র দ্বিধা না করে

বললেন, সে জানেন আল্লাহ। আমি শুধু জানি, অন্তত আজ রাত্রে তিনি আপনার সম্মান রাখতে চেয়েছিলেন।

সম্ভবত খাঁ সাহেব এরপর নীরব হয়ে গিয়েছিলেন। কারণ, নীরবতা হিরণ্ময়(Silence is Golden) আপ্ত বাক্যটি যথার্থতা পেয়েছিল।

সূত্র: সৈয়দ মুজতবা আলীর পঞ্চতন্ত্র

(২য় পর্ব)

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

পাকিস্তানে কীভাবে হামলা চালাতে পারে ভারত, ইতিহাস যা বলছে

প্রবাসীর রেমিট্যান্সের অর্থ আত্মসাৎ, নারী ব্যাংক কর্মকর্তা কারাগারে

জনবল-সরঞ্জাম বেশি হলেও সমরশক্তিতে ভারত কি পাকিস্তানের চেয়ে এগিয়ে

ভারতের সঙ্গে সংঘাতে পাকিস্তানের ভাগ্যনিয়ন্তা সেনাপ্রধান জেনারেল মুনির

ইতিহাস গড়ে পাকিস্তানের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার পদে আইএসআইপ্রধান

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত