Ajker Patrika

আত্মগ্লানি

সম্পাদকীয়
আত্মগ্লানি

কোনো এক গ্রামে সভা হবে। যাচ্ছেন রণেশ দাশগুপ্ত। যে গ্রামে সভা হবে, তার কাছাকাছি পৌঁছালেন। এরপর পথে জানতে চাইলেন, ‘আর কত দূর গ্রামটা?’ 
একজন কৃষক বললেন, ‘এই তো দুই ক্রোশ দূরে। এদিকে হাঁটতে থাকুন।’

 ‘দুই ক্রোশ’ আর শেষ হয় না। তাই আবার আরেকজনকে জিজ্ঞেস করলেন তিনি। এই লোকটিও বললেন, ‘দুমাইল হেঁটে যান, তারপরই গ্রাম।’

হাঁটতে থাকেন রণেশ দাশগুপ্ত। পথ আর ফুরোয় না। হাঁটতে হাঁটতে একেবারে নাকাল হয়ে গেলেন। কিন্তু যাঁকেই জিজ্ঞেস করেন, তিনিই বলেন, আর একটু গেলেই পেয়ে যাবেন কাঙ্ক্ষিত গ্রামটি।

এভাবে পাঁচ-ছয় মাইল পথ অতিক্রম করার পর তিনি বুঝলেন, এই পথ আর শেষ হবে না। তারপরও যখন একটি ধু ধু প্রান্তরের কাছে এসে জানতে চাইলেন, তখন তাঁকে বলা হলো, এই মাঠটি কোনাকুনি পাড়ি দিলেই পৌঁছে যাবেন সেই গ্রামে।

মাঠে পা রাখতেই আকাশ কালো হয়ে এল। ক্লান্ত শরীরে রণেশ দাশগুপ্ত ভাবলেন, ‘এই রে! এখন যদি বৃষ্টি আসে!’ বৃষ্টি যেন না আসে, সে জন্য প্রার্থনা করতে থাকলেন তিনি। এমনিতেই রুগ্‌ণ শরীর। একটা অসুখ বেঁধে যাবে।

কায়মনোবাক্যে যখন তিনি বৃষ্টি না আসার জন্য প্রার্থনা করছেন, তখন হঠাৎ মাঠ থেকে মুসলমান কৃষকদের রব উঠল, ‘আল্লাহ পানি দে...।’

রণেশ দাশগুপ্ত মাঠের কৃষকদের দিকে তাকালেন। প্রত্যেকের চোখভরা আশা। এবার তাহলে বৃষ্টি আসবে। আত্মগ্লানিতে ভরে গেল রণেশ দাশগুপ্তের মন। তিনি মাঠের মাটির দিকে তাকিয়ে দেখলেন, পানি না পেয়ে মাঠ খটখটে হয়ে আছে। এই মাঠে ফসল হতে হলে বৃষ্টি দরকার। আর তিনি কিনা বৃষ্টির বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছেন!

এই আত্মগ্লানি নিয়েই মাথা নিচু করে পথটা পাড়ি দিলেন রণেশ দাশগুপ্ত। এই মাঠ পার হলেই পাওয়া যাবে আশ্রয়। কিন্তু তখন এই পথের ক্লান্তির চেয়ে বৃষ্টি আসা না-আসা অনেক জরুরি হয়ে উঠেছে তাঁর কাছে। 

সূত্র: মুনীর চৌধুরী . লিলি চৌধুরী, দিনপঞ্জি-মনপঞ্জি-ডাকঘর, পৃষ্ঠা ৪৯-৫০ 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত