Ajker Patrika

নির্যাতনে দুই বাংলাদেশির মৃত্যু

মাদারীপুর প্রতিনিধি
আপডেট : ২৩ নভেম্বর ২০২১, ১৪: ২৮
নির্যাতনে  দুই বাংলাদেশির মৃত্যু

লিবিয়ার অভিবাসী বন্দিশালায় দালালদের নির্যাতনে মাদারীপুরের দুই তরুণের মৃত্যুর অভিযোগ পাওয়া গেছে। ওই দুই তরুণ অবৈধপথে ইতালি যাওয়ার উদ্দেশে লিবিয়ায় অবস্থান করছিলেন। নিহত দুই তরুণের স্বজনেরা লিবিয়া থেকে তাঁদের মৃত্যুর বিষয়টি জানিয়েছেন।

দুই তরুণ হলেন মাদারীপুর সদর উপজেলার মধ্য খাগদী এলাকার আবুল কালাম খানের ছেলে সাব্বির খান (২১) ও বড়াইলবাড়ি এলাকার মো. হাবিবুর রহমান তালুকদারের ছেলে সাকিবুল হাসান সুরুজ (২২)।

পুলিশ ও পারিবারিক সূত্র জানায়, প্রায় দেড় মাস আগে স্থানীয় দালাল সবুজ মীরের মাধ্যমে আট লাখ টাকা চুক্তিতে লিবিয়া হয়ে ইতালির উদ্দেশে বাড়ি ছাড়েন সাকিবুল। চুক্তির অর্ধেক টাকা দেওয়া হয়। বাকি টাকা ইতালি পৌঁছানোর পরে দেওয়ার কথা। তবে লিবিয়াতে পৌঁছানোর পরেই বাকি চার লাখ টাকার জন্য দালাল চক্র সাকিবুলকে একটি বন্দিশালায় আটকে রেখে শারীরিক নির্যাতন চালায়। গত শনিবার রাতে সেখানে মারা যান সাকিবুল।

অন্যদিকে সাব্বির খান চরনাছনা এলাকার দালাল কাশেম মোড়লের মাধ্যমে সাড়ে সাত লাখ টাকার চুক্তিতে ছয় মাস আগে লিবিয়া পৌঁছান। এরপরে তাঁকেও লিবিয়ার বন্দিশালায় আটক রাখা হয়। টাকার জন্য তাঁকেও শারীরিক নির্যাতন চালান দালালেরা।

গতকাল সোমবার সকালে সাব্বিরের বাড়ি মধ্য খাগদী এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, বাড়িভর্তি মানুষ।

সবার চোখে পানি। বাড়ির আঙিনায় সাব্বিরের মা, ছোট দুই ভাই, এক বোনসহ স্বজনেরা আহাজারি করছেন। প্রতিবেশী কেউ কেউ তাঁদের সান্ত্বনা দিচ্ছেন।

সাব্বিরের মা নাজমা বেগম বলেন, ‘রাইতে আমি বাড়ি ছিলাম না। মেলা রাইতে ভাইর বিডি (ভাইয়ের মেয়ে) হঠাৎ ফোন দিছে, ভাবছি মায় মইরা গেছে। বাড়িতে আইসা শুনি আমার পোলা মইরা গেছে। আমার পোলা এম্মে মরতে পারে না।’

সাব্বিরের খালু মো. ওবায়দুর রহমান তালুকদার বলেন, ‘সাব্বিরের মাথায় ধারালো কিছু একটা দিয়ে আঘাত করেছে। এ কারণে সাব্বির মারা গেছে। সাব্বিরের সঙ্গে যারা ছিল, ওরা আমাগো ফোনে ভিডিও কলে সব দেখাইছে। সাব্বিরের মৃত্যুর জন্য যে দালালরা দায়ী, আমরা তাদের উপযুক্ত বিচার চাই।’

মধ্য খাগদী থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার ভেতরে বড়াইলবাড়ি। গতকাল সকালে সেখানে সাকিবুল হাসানের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, পুরো বাড়ি সুনসান। সাকিবুলের মা নেই। বৃদ্ধ বাবাও বয়সের ভারে ন্যুব্জ। তাঁর বড় চার ভাইকে পাওয়া গেল বাড়িতে। ছোট ভাইয়ের মৃত্যুতে চার ভাই শোকাহত। কিন্তু ছোট ভাইয়ের মৃত্যুর খবর বাবার কানে গেলে তিনি হয়তো সহ্য করতে পারবেন না। তাই সবাই নীরব।

সাকিবুলের মেজো ভাই আরিফুর রহমান বলেন, ‘ভাইডা বিএ পড়ত। পড়ালেখা বাদ দিয়ে বিদেশে যাওয়ার জন্য পাগল ছিল। তাই আমরা আর আটকাই নাই। দালালের সঙ্গে চুক্তি ছিল, লিবিয়া পর্যন্ত পৌঁছালে অর্ধেক টাকা দিতে হবে। পরে ইতালি পৌঁছে দিতে হবে বাকি টাকা। বডি কন্ট্রাক্ট ছিল। কিন্তু গেম হওয়ার আগেই এভাবে যে মারা যাইবে, তা মানতে পারছি না।’

মাদারীপুরে চলতি বছরের প্রথম ১০ মাসে (অক্টোবর পর্যন্ত) মানব পাচার আইনে ৩০টি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় ২৯ জন গ্রেপ্তার হয়েছেন। এরপরেও দালালদের দৌরাত্ম্য কমছে না।

মাদারীপুরের পুলিশ সুপার (এসপি) গোলাম মোস্তফা রাসেল বলেন, লিবিয়াতে মাদারীপুরের দুজন মারা যাওয়ার খবর তাঁরা শুনেছেন। তবে এখন পর্যন্ত নিহত তরুণদের পরিবার কোনো সহযোগিতার জন্য আসেনি। এরপরও নিহত ওই দুই পরিবারের বাড়িতে গিয়ে খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনা: বিমানবাহিনীকে সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিতে বললেন প্রধান উপদেষ্টা

সারজিসের সামনেই বগুড়ায় এনসিপি ও বৈষম্যবিরোধীদের মধ্যে হাতাহাতি-সংঘর্ষ

রাখাইনে মানবিক করিডর কি প্রক্সি যুদ্ধের ফাঁদ হবে, ভারত-চীন কীভাবে দেখবে

পিটুনিতে নিহত সেই শামীম মোল্লাকে বহিষ্কার করল জাবি প্রশাসন, সমালোচনার ঝড়

চিন্ময় দাসের জামিন স্থগিতের আবেদন, শুনানি রোববার

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত