Ajker Patrika

মুখাবয়বে স্বর্গীয় আভা

সম্পাদকীয়
মুখাবয়বে স্বর্গীয় আভা

ছেলেবেলায় আফলাতুন যেসব গল্প পড়তেন, সেগুলোর গড়ন ছিল একই রকমের। ‘রামের সুমতি’, ‘কাবুলিওয়ালা’, ‘বিন্দুর ছেলে’। কিন্তু হঠাৎ একদিন এমন একটি গল্প পড়লেন, যা তাঁর মনকে নাড়িয়ে দিল। এই গল্পের নায়ক উচ্চবিত্ত বা মধ্যবিত্ত সমাজের নয়। এই নায়ক একেবারে অন্য এক জগতের মানুষ। অল্প বয়সে ছেলেটা স্কুলে যেতে পারে না, কাজ করে কারখানায়। সেই গল্পের নায়ক কখনো মিছিল করে লাল পতাকা হাতে।

গল্পের শুরুটা এ রকম, ‘এখানে গাঁয়ের বসত শেষ। তারপর মেঠোপথ। এই পথ দিয়ে এ গাঁয়ের লোকেরা গঞ্জে যায়, ইস্টিশনে যায়। কতগুলো ছোট ছোট বাবলার ঝোপ পথটার মোড়ে। গাছের ছায়ায় দাঁড়িয়ে মরিয়ম। সম্মুখে তার দশ বছরের ছেলে আব্বাস।’

চমকে ওঠেন আফলাতুন। গল্প এ রকমও হয়! এই গল্পের লেখক শওকত ওসমান। ১৯৫০ সালে আফলাতুন দেখা পান শওকত ওসমানের। ঢাকার জিন্নাহ অ্যাভিনিউতে (এখন বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ) ‘ওয়ার্সি বুক সেন্টার’ নামে একটি বইয়ের দোকান ছিল, সেখানেই দেখা। পাঞ্জাবি-পায়জামা ছিল তাঁর পরনে। আফলাতুন জানালেন, তিনিও গল্প লেখেন। আর শওকত ওসমানের প্রতি কেন কৃতজ্ঞ, সে কথা শুনে শওকত ওসমান সুস্মিত হলেন।

দেখা হলে শওকত ওসমান বলতেন, ‘কিহে ভ্রাতঃ আছ কেমন?’ একবার অনেক দিন যোগাযোগ নেই। আফলাতুন চাকরি হারিয়েছেন। ছুটির দিনে চাঁদনি রাতের আটটায় তোপখানা রোডের ফুটপাত ধরে যাচ্ছেন। পথে দেখা শওকত ওসমানের সঙ্গে।

দেখেই শওকত ওসমান বললেন, ‘আমি জেনে মর্মাহত হয়েছি, তোমাকে চাকরি ছাড়তে বাধ্য করা হয়েছে বলে। কোথায় থাকো এখন? আগের বাড়িতে আছ?’ ‘না।’ ‘ছেলেপুলে নিয়ে কষ্ট হচ্ছে নিশ্চয়? কাল সকালে বাসায় আসো।’

‘কেন, শওকত ভাই?’ ‘তোমার কষ্ট হচ্ছে। যদি কিছু মনে না করো, কিছু টাকা দিতে চাই ওদের জন্য।’শওকত ওসমানের চেহারা তখন চাঁদের মিহি আলোয় স্বর্গীয় আভার মতো হয়ে আছে। 

সূত্র: আফলাতুন, কথাশিল্পী শওকত ওসমান, পৃষ্ঠা ১৮৬-১৮৮ 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত