Ajker Patrika

কোটা সংস্কার আন্দোলনে আহত ৫ জনের মৃত্যু

আজকের পত্রিকা ডেস্ক
কোটা সংস্কার আন্দোলনে আহত ৫ জনের মৃত্যু

কোটা সংস্কার আন্দোলনে সহিংসতার ঘটনায় ঢাকার পাঁচ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন পাঁচজন মারা গেছেন। এই পাঁচজনই গুলিবিদ্ধ ছিলেন। নিহতদের মধ্যে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী ও এক প্রকৌশলী রয়েছেন। গতকাল মঙ্গলবার সকাল থেকে পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টায় এ পাঁচজন মারা যান। 

চট্টগ্রামের বহদ্দারহাটে ১৮ জুলাই কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশ ও যুবলীগের নেতা-কর্মীদের ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। এ সময় পুলিশ গুলি, কাঁদানে গ্যাসের শেল ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে। সেদিন পুলিশের পাশাপাশি যুবলীগের নেতা-কর্মীরাও গুলি চালিয়েছিলেন। ওই দিন রিভলবার ও শটগান ব্যবহার করে অন্তত চার যুবলীগের কর্মী গুলি ছোড়েন। ওই দিন সন্ধ্যায় গুলিবিদ্ধ হন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) শিক্ষার্থী হৃদয় চন্দ্র তরুয়া (২২)। গতকাল সকাল ৭টায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তিনি মারা যান। 

হৃদয় কোটা সংস্কার আন্দোলনে অংশ নিয়েছিলেন। তিনি চবির ইতিহাস বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। তাঁর বাড়ি পটুয়াখালীতে।
গুলিবিদ্ধ হৃদয়কে প্রথমে চট্টগ্রামের একটি বেসরকারি হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানকার চিকিৎসকেরা তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (ডিএমসি) পাঠানোর পরামর্শ দেন। পরে ১৯ জুলাই হৃদয়কে ঢাকায় পাঠানো হয়। ডিএমসির নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চার দিন থাকার পর মারা গেলেন তিনি। এ প্রসঙ্গে চবির ইতিহাস বিভাগের সভাপতি শামীমা হায়দার আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আহত হওয়ার পরের দিন পার্কভিউতে দেখতে গিয়েছিলাম। সেখানকার চিকিৎসকেরা জানান, হৃদয় চন্দ্র তরুয়ার বুকে গুলি এক পাশে ঢুকে অন্য পাশ দিয়ে বের হয়ে গেছে। আমরা তাঁকে সার্বক্ষণিক সহযোগিতা করছিলাম। কিন্তু আজ (গতকাল) সকালে আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন।’ 

ঢাকার মিরপুর-১-এ থাকতেন চুয়াডাঙ্গার শাহরিয়ার শুভ (২৮)। বেসরকারি কোম্পানিতে ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কর্মরত ছিলেন তিনি। সবজি কিনতে গত শুক্রবার বাসা থেকে বের হলে মাথায় গুলি লাগে তাঁর। গতকাল সন্ধ্যা ৭টায় আগারগাঁওয়ে নিউরোসায়েন্স হাসপাতালের আইসিইউতে তিনি মারা যান। 

শাহরিয়ারের বাড়ি চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার শংকরচন্দ্র ইউনিয়নের শংকরচন্দ্র গ্রামে। তাঁর মা চম্পা খাতুন বলেন, ‘আমার ছেলের সাথেই এমন কেন হলো। তার কোনো দোষ ছিল না। সে বাড়িতেই ছিল। শুধু সবজি-মাছ কিনতে বের হয়েছিল। শুনেছি হেলিকপ্টার থেকে গুলি করা হয়েছে।’

শুভর বাবা আবু সাঈদ বলেন, ‘পাঁচ দিন ধরে আমার ছেলে আইসিইউতে মৃত্যুর সাথে লড়াই করেছে। একে তো কারফিউ, তারপর আবার ইন্টারনেট নেই। আমরা তার পাশেও থাকতে পারিনি।’ 

গত শনিবার ঢাকার সাভারে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন পোশাককর্মী শুভ শীল (২৫)। এরপর সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। হাসপাতালের ডিউটি ম্যানেজার ইউসুফ আলী জানিয়েছেন, হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল ভোরে শুভ শীল মারা যান। তিনি ঝিনাইদহের বিকাশ শীলের ছেলে। শুভ সাভার পৌর এলাকার দক্ষিণ পাড়ায় থেকে একটি পোশাক কারখানায় চাকরি করতেন।

এদিকে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের মনির হোসেন নামের একজন গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন গত শনিবার। এরপর তাঁকে ধানমন্ডি পপুলার হাসপাতালে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়। গত সোমবার বিকেলে তিনি মারা যান। গতকাল তাঁর মরদেহের ময়নাতদন্ত করতে ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গে নেওয়া হয়। 

লক্ষ্মীপুরের নাসির হোসেন গত শনিবার যাত্রাবাড়ীর রায়েরবাগে গুলিবিদ্ধ হন। এরপর তাঁকে মুগদা জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল সকালে তাঁর মৃত্যু হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত