Ajker Patrika

আন্তর্জাতিক শিল্প প্রদর্শনীতে বাংলাদেশের ‘পাকঘর’

তরিকুল ইসলাম, কাসেল (জার্মানি)
আপডেট : ২৬ জুন ২০২২, ১২: ৪০
আন্তর্জাতিক শিল্প প্রদর্শনীতে বাংলাদেশের ‘পাকঘর’

১৮ জুন থেকে মধ্য জার্মানির কাসেল শহরে শুরু হয়েছে পৃথিবীর গুরুত্বপূর্ণ একটি ‘কন্টেম্পোরারি আর্ট’ উৎসব ‘ডকুমেন্টা ফিফটিন’। এটি মূলত একটি বৈশ্বিক ‘সমকালীন শিল্প’ প্রদর্শনী। পাঁচ বছর পর পর বসে এই উৎসব, চলে টানা ১০০ দিন। এ জন্য এই প্রদর্শনীকে ‘১০০ দিনের মিউজিয়াম’ও বলা হয়। বর্তমান প্রদর্শনী আগামী ২৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত

এ বছর ‘ডকুমেন্টা ফিফটিন’ প্রদর্শনীতে যোগ দিয়েছে বাংলাদেশের ১৭ জন শিল্পীর একটি দল। এ মাসের শুরুতে প্রদর্শনীতে আসা বাংলাদেশি শিল্পীরা তৈরি করেছেন নান্দনিক শিল্পকর্ম ‘পাকঘর: দ্য সোশ্যাল কিচেন’। বিশাল এলাকাজুড়ে সাজানো হয়েছে এই ইনস্টলেশন আর্ট। বাঁশের চাটাইয়ের তৈরি এই শিল্পকর্ম দেখতে ঠিক বাংলাদেশের গ্রামের একটি রান্নাঘরের আঙিনার মতো। এখানে মূল রন্ধনশালাকে কেন্দ্র করে সাজানো হয়েছে আরেকটি স্থাপনা, যার নাম ‘পালান’ বা সবজিবাগান। এই সবজিবাগানে আছে বাংলাদেশি নানান জাতের শাক-সবজি ও হরেক রকমের ফুল। বাঁশের চটা ও রশি দিয়ে তৈরি করা হয়েছে মাচা। তাতে বেয়ে উঠছে লাউ বা শসাগাছ। পুরো ইনস্টলেশনটি দেখলে মনে হবে জর্মন দেশে অবস্থিত কোনো বাঙালি গাঁয়ে ঢুকে পড়েছি। রন্ধনশালায় প্রবেশের জন্য তৈরি করা হয়েছে চাটাইয়ের ছাউনি দেওয়া চলার পথ। এর দুই পাশে সাজানো পালান।

চমকপ্রদ বিষয় হলো, এই পাকঘর ও পালান নির্মাণে যেসব বাঁশ, চাটাই, রশি, শাক-সবজি ও ফুলের গাছ, তার সবই বাংলাদেশ থেকে বয়ে আনা হয়েছে জাহাজে করে। এমনকি রান্নাঘরের মেঝে তৈরিতে যে মাটির ইট ব্যবহার করা হয়েছে, তা-ও বাংলাদেশ থেকে আনা। সেগুলো জার্মানিতে পৌঁছাতে প্রায় এক মাস সময় লেগেছে। এই রন্ধনশালার নাম সোশ্যাল কিচেন বা সামাজিক রান্নাঘর রাখা হয়েছে, কারণ এখানে দর্শনার্থীরা তাঁদের নিজেদের পছন্দের খাবার রান্না করে খেতে পারবেন।

ঢাকার বৃত্ত আর্টস ট্রাস্টের শিল্পীরা এই বাংলাদেশ প্রদর্শনীর মূল কারিগর। তাঁরা প্রায় দেড় বছর ধরে এই শিল্পকর্মগুলো তৈরি করেছেন। বাংলাদেশের প্রজেক্ট সম্পর্কে জানতে চাইলে এই প্রকল্পের অন্যতম শিল্পী শিমুল সাহা বলেন, ‘পুরো প্রকল্পটি মূলত ছয় ভাগে বিভক্ত। এখানকার সবজিগুলো অর্গানিকভাবে উৎপাদিত। এই পাকঘরের উদ্দেশ্য হলো, এই ১০০ দিনের ডকুমেন্টাতে ১০০টা জাতি তাদের নিজস্ব খাবার রান্না করবে। যেমন—প্রথম দিন রান্না করা হয় বাংলাদেশের খাবার, দ্বিতীয় দিনে ছিল শ্রীলঙ্কান খাবার এবং তৃতীয় দিন রান্না করা হয়েছিল নেপালি খাবার। প্রতিদিন দুপুরে এই রান্নার আয়োজন হয়।’

‘পাকঘর: দ্য সোশ্যাল কিচেন’ তৈরির সব উপকরণ গেছে বাংলাদেশ থেকেশিল্পী শিমুল সাহা আরও বলেন, ‘আরেকটি প্রজেক্টের বাংলা নাম দিয়েছি ‘ছায়াছবি’। এটাকে ইংরেজিতে আমরা মুরাল পেইন্টিং বলছি। আরেকটি প্রজেক্টের নাম ‘রসদ’। রসদে আছে মোটামুটি আড়াই হাজারের মতো ছোট ছোট ভাস্কর্য বা অবজেক্ট। এই অবজেক্টগুলো দিয়ে একটি বাজার তৈরি করার চেষ্টা করেছি আমরা। বাজার মানেই খাবারের সঙ্গে যুক্ত একটি বিষয়। প্রতিটি অবজেক্টের একটা মেসেজ আছে, যার মধ্যে দর্শনার্থীরা ‘ফুড পলিটিকস’ ও ‘ফুড ক্রাইসিস’-এর কিছু গল্প পাবেন। এর অধিকাংশ অবজেক্ট সিরামিকের তৈরি।’

এই বাজারের প্রদর্শনীটি তিনভাবে সাজানো হয়েছে। এক অংশ সুপারশপের মতো। আরেকটা অংশ জাদুঘরে প্রদর্শিত অবজেক্টের মতো। শেষ অংশটি বাংলাদেশের গ্রাম্য বাজারের আদলে সাজানো হয়েছে। এর সঙ্গে আরও আছে খাবারের রাজনীতি ও সংকট নিয়ে যে সিনেমাগুলো নির্মিত  হয়েছে, সেই সিনেমাগুলোর কিছু উপস্থাপনা।

এই প্রজেক্টের আরেকটি অংশ হলো থ্রি চ্যানেল ফিল্ম। এটি বাংলাদেশের আদিবাসীদের জীবনী নিয়ে একটি সংক্ষিপ্ত উপস্থাপনা। প্রজেক্টের আরেকটি অংশ একটি ডকুমেন্টারি। শিমুল জানান, ‘এই প্রজেক্ট দাঁড় করানোর জন্য আমরা দেড় বছর ধরে যে পরিশ্রম করেছি, তার একটা চিত্র সেখানে পাবেন। এ ছাড়া আছে আদিবাসীদের নিয়ে একটা ব্যতিক্রমী চিত্র প্রদর্শনী।’

শিল্পী শিমুল সাহা জানান, প্রদর্শনীতে যতগুলো শিল্প স্থাপনা রয়েছে, ‘পাকঘর’ তার মধ্যে নান্দনিক ইনস্টলেশন। প্রতিদিন শত শত দর্শনার্থী আসছেন এই প্রদর্শনী দেখতে। উৎসুক মনে ঘুরে ঘুরে দেখছেন এই পালান ও পাকঘর।

পুরো ইনস্টলেশনটি দেখলে মনে হবে, জর্মন দেশে অবস্থিত কোনো বাঙালি গাঁয়ে ঢুকে পড়েছিবাংলাদেশের এই স্থাপনা ঠিক কাসেল শহরের কেন্দ্রস্থলে ঐতিহাসিক কার্লসুয়া পার্কের পাশেই আবস্থিত। ডকুমেন্টা ওয়েবসাইটের তথ্যমতে, গতবার অর্থাৎ ডকুমেন্টা-১৪-এর প্রদর্শনী দেখতে এসেছিলেন ৮ লাখ ৯১ হাজার ৫০০ জন। জার্মানিসহ সেবার মোট ৭৭টি দেশের মানুষ সেই প্রদর্শনী দেখতে আসেন। শহরজুড়ে বিভিন্ন জায়গায় ছড়ানো-ছিটানো থাকে প্রদর্শনীগুলো। এ বছর প্রদর্শনীগুলো শহরের চারটি অংশকে কেন্দ্র করে সাজানো হয়েছে—শহরের কেন্দ্রস্থল (মিট্টে), ফুলদা নদী এলাকা, নর্ডস্টাট পার্ক ও বিটেনহাউসেন এলাকা। ট্রামে করেই এসব জায়গায় যাতায়াত করা যায়। শহরের কেন্দ্রস্থলের ১৬টি জায়গায়, ফুলদা নদী এলাকার আট জায়গায়, বিটেনহাউসেন এলাকার পাঁচ জায়গায় এবং নর্ডস্টাট পার্কের তিন জায়গায় এই প্রদর্শনীগুলো দেখা যাচ্ছে। তবে কিছু কিছু স্থাপনা প্রদর্শন ফ্রি হলেও অধিকাংশই টিকিট কেটে দেখতে হচ্ছে। বয়স, সময় ও স্থানভেদে এ বছর টিকিটের মূল্য রাখা হয়েছে ৭ থেকে ১২৫ ইউরো পর্যন্ত।

এবারের ‘ডকুমেন্টা ফিফটিন’-এর কিউরেটর হিসেবে কাজ করছে ইন্দোনেশিয়ার শিল্পীদের একটি দল, যাদের ‘রুয়ানগ্রুপা’ বলা হয়। ইন্দোনেশিয়ান এই শব্দের ইংরেজি অর্থ করলে দাঁড়ায় ‘আর্ট স্পেস’ বা বাংলায় যাকে ‘শিল্প স্থল’ বলা যেতে পারে। এই শিল্পীগোষ্ঠীর ৯জন সরাসরি এই মূল আয়োজনের সঙ্গে জড়িত।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘তুমি ঘুমাও কীভাবে’, সৌদি যুবরাজকে নিয়ে ট্রাম্পের বিস্ময়

ফরিদপুরে পালিয়ে যাওয়া আ.লীগ নেতা গ্রেপ্তার, থানার ওসিকে বদলি

বিদায় বিশ্বের দরিদ্রতম প্রেসিডেন্ট

সৌদি আরবের সঙ্গে ১৪২ বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র বিক্রির চুক্তি করে নিজের রেকর্ড ভাঙল যুক্তরাষ্ট্র

বিদ্যালয়ে সময় দেন না শিক্ষক, ইউএনওর কাছে অভিযোগ করায় সহকর্মীকে মারধর

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত