Ajker Patrika

এস এম সুলতান

সম্পাদকীয়
এস এম সুলতান

আমরা যাঁকে এস এম সুলতান নামে চিনি তাঁর পুরো নাম শেখ মোহাম্মদ সুলতান। তাঁকে আবার ডাকা হতো লাল মিয়া বলে। তিনি জন্মগ্রহণ করেছিলেন অসচ্ছল পরিবারে। তারপরও সামর্থ্যহীন অবস্থায় তাঁর বাবা ১০ বছর বয়সে তাঁকে নড়াইলের ভিক্টোরিয়া কলেজিয়েট স্কুলে ভর্তি করে দেন। এখানে ৫ বছর চলে তাঁর শিক্ষাজীবন। এরপর বাবার সঙ্গে রাজমিস্ত্রির কাজ শুরু করেন।

আঁকাজোকার ঝোঁক দেখে স্থানীয় জমিদার ধীরেন্দ্রনাথ রায় তাঁকে কলকাতায় পাঠিয়ে দেন। এন্ট্রান্স পাস না করার পরেও শুধু মেধা দেখে প্রখ্যাত শিল্প সমালোচক এবং কলকাতা আর্ট স্কুলের পরিচালনা পরিষদের সদস্য শাহেদ সোহরাওয়ার্দী তাঁকে কলকাতা আর্ট কলেজে ভর্তি করে দেন। যদিও কোর্স শেষ না করেই ভারতের নানা জায়গায় ঘুরতে বেরিয়ে পড়েন তিনি। তাঁর ভবঘুরে ও বোহিমিয়ান জীবনের শুরু এখান থেকেই।

তাঁর প্রথম প্রদর্শনী হয় ১৯৪৭ সালে শিমলায়। কানাডিয়ান শিল্পপ্রেমী এক নারী এই প্রদর্শনীর আয়োজক ছিলেন। ১৯৫০ সালে দ্বিতীয় প্রদর্শনী হয় লাহোরে। বিলেতের লেইস্টার গ্যালারিতে তাঁর ছবি প্রদর্শিত হয়েছিল পিকাসো, সালভাদর দালির চিত্রকর্মের সঙ্গে। ১৯৮২ সালে কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে ‘ম্যান অব অ্যাচিভমেন্ট’ সম্মাননা দেয়।

ভারত বিভাগের পর সুলতান দেশে ফিরে আসেন। ১৯৭৪ সালে শিল্পকলা একাডেমিতে তাঁর একক প্রদর্শনী হয়। এই প্রদর্শনী থেকে তিনি দেশের বিশিষ্টজনদের নজরে আসেন। এরপর তিনি নড়াইলের নিজ গ্রামে চলে যান। এখানে তিনি শিশুদের জন্য ‘শিশুস্বর্গ’ স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি তাঁর চিত্রকর্মগুলো আঁকতেন জঙ্গল থেকে সংগ্রহ করা বিভিন্ন উপকরণ দিয়ে। পার্থিব বিষয় সম্পর্কে উদাসীনতা, প্রচারবিমুখতা, নিজ সৃষ্টি সম্পর্কে একধরনের নির্মোহ দৃষ্টি এবং শহরকেন্দ্রিক জীবনযাপনে অনীহা ছিল তাঁর জীবনের অন্যতম চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য।

১৯৮২ সালে তিনি একুশে পদক পান। ১৯৮৪ সালে শিল্পকলা একাডেমি তাঁকে আবাসিক শিল্পী হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। ১৯৯৪ সালের জানুয়ারি মাসে ঢাকার ‘গ্যালারি টনে’ ছিল সুলতানের শেষ চিত্র প্রদর্শনী।

শুধু ছবি আঁকা নয়, অপূর্ব বাঁশিও বাজাতেন তিনি। ১৯৯৪ সালের ১০ অক্টোবর মারা যান এই প্রখ্যাত শিল্পী।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত