Ajker Patrika

মুক্তিযোদ্ধা ভাতা বন্ধ ১২৬ জনের

রিমন রহমান, রাজশাহী
আপডেট : ১৬ মার্চ ২০২২, ১৪: ০৪
মুক্তিযোদ্ধা ভাতা বন্ধ ১২৬ জনের

বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে গেজেটভুক্ত হয়ে দীর্ঘ সময় ভাতা পেয়েছেন। তবে পুনরায় যাচাই-বাছাই কমিটির সুপারিশ না পাওয়ায় রাজশাহী মহানগর এলাকার ১২৬ জনের ভাতা বন্ধ হয়ে গেছে। তাঁরা মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে গত মাসের ভাতা পাননি। বীর মুক্তিযোদ্ধারা এখন প্রতি মাসে ২০ হাজার টাকা ভাতা পান। গত রোববার সোনালী ব্যাংকের মাধ্যমে রাজশাহীর বীর মুক্তিযোদ্ধারা ভাতা পেয়েছেন। তবে ভাতা পাননি এই ১২৬ জন।

গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে বিষয়টি স্বীকার করেছেন রাজশাহীর জেলা প্রশাসক আবদুল জলিল। তিনি বলেন, ‘বিষয়টা শুনলাম। ভাতা বন্ধ হওয়ার পর দু-একজন আমার কাছে এসেছিলেনও। কিন্তু এখানে তো আমার কিছু করার নেই। এটা জাতীয় মুক্তিযুদ্ধ কাউন্সিলের (জামুকা) সিদ্ধান্ত।’

ভাতা বন্ধ হওয়া ১২৬ জনের মধ্যে আছেন জাতীয় শ্রমিক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি নূর কুতুব আলম মান্নান। ২০০৬ সালে বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে গেজেটভুক্ত হয়ে তিনি নিয়মিত ভাতা পাচ্ছিলেন। ভাতা বন্ধ হওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে তিনি বলেন, ‘যাচাই-বাছাই কমিটি সুপারিশ না করার পর আমি আপিল করেছি। সেই শুনানি এখনো হয়নি। এর মধ্যেই ভাতা বন্ধ করে দেওয়া হলো। এটা আমি আইনগতভাবেই দেখব।’

ভাতা বন্ধ হয়েছে রাজশাহী মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক এরশাদ আলী ঈসারও। ১২৬ জনের মধ্যে রাজশাহীর সুপরিচিত অনেক মুখই আছেন। তাঁদের কেউ কেউ অত্যন্ত প্রভাবশালী। বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে তাঁদের মাঝেমধ্যেই ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা’ হিসেবে সংবর্ধনাও দেওয়া হয়। এ নিয়ে ক্ষোভ আছে রাজশাহীর প্রকৃত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের।  

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে গেজেটভুক্তির জন্য ৩৩ ধরনের প্রমাণ প্রয়োজন। এর মধ্যে প্রয়োজন জামুকার সুপারিশও। কিন্তু বিভিন্ন সময়ে গেজেটভুক্ত হওয়া রাজশাহী মহানগরীর ৫৫২ জনের মধ্যে ১৬০ জনের বিষয়ে জামুকার সুপারিশ ছিল না। সে কারণে জামুকা গত বছর তাঁদের যাচাই-বাছাই করার উদ্যোগ নেয়। জামুকার নির্দেশনায় জেলা প্রশাসন একটি কমিটি করে এই ১৬০ জনকে নতুনভাবে যাচাই-বাছাই করে।

চার সদস্যের ওই যাচাই-বাছাই কমিটির সভাপতি ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা সফিকুর রহমান। সদস্যসচিব ছিলেন তৎকালীন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মুহাম্মদ শরিফুল হক। বীর মুক্তিযোদ্ধা মীর ইকবাল ও চৌধুরী এস মনিরুল ইসলাম সদস্য হিসেবে ছিলেন। গত বছরের শুরুতে এই কমিটি আপত্তি ওঠা ব্যক্তির জবানবন্দি নেয়। এ ছাড়া ওই ব্যক্তির পক্ষে কোনো সাক্ষী থাকলে তাঁরও সাক্ষ্য নেওয়া হয়।

এরপর গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে কমিটি জামুকায় প্রতিবেদন পাঠায়। যাচাই-বাছাইয়ের আওতায় আসা মোট ১৬০ জনের মধ্যে ৩৪ জনকে সরাসরি বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে গেজেট নিয়মিত করার জন্য সুপারিশ করে কমিটি। গেজেট নিয়মিতকরণের সুপারিশ থেকে বঞ্চিত হন ১২৬ জন। এই ১২৬ জনেরই ফেব্রুয়ারি মাস থেকে মুক্তিযোদ্ধা ভাতা বন্ধ হয়ে গেছে।

এই ১২৬ জন এত দিন যে ভাতা গ্রহণ করেছেন তা ফেরত নেওয়া হবে কি না, জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক আবদুল জলিল বলেন, ‘সরকার তাঁদের গেজেটভুক্ত করেছিল, সরকারই বাতিল করেছে। আমার কোনো সিদ্ধান্ত নেই। আমি এ বিষয়ে এখন কোনো কিছু বলতেও পারি না।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত