Ajker Patrika

পরিচ্ছন্নতাকর্মীর হাতে ইসিজি

রিমন রহমান, রাজশাহী
আপডেট : ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১২: ৫৪
পরিচ্ছন্নতাকর্মীর হাতে ইসিজি

রাজশাহী রেলওয়ে হাসপাতালে ইসিজি মেশিন পরিচালনার জন্য কোনো টেকনোলজিস্ট নেই। তাই দীর্ঘদিন ধরেই এটি পরিচালনা করছেন একজন পরিচ্ছন্নতাকর্মী। খোদ রেল কর্তৃপক্ষ ওই পরিচ্ছন্নতাকর্মীকে এ দায়িত্ব দিয়েছে এবং পরিচ্ছন্নতাকর্মী এই দায়িত্ব নিয়েছেন একটি ভুয়া অভিজ্ঞতাপত্র দেখিয়ে।

অসুস্থ হলে এই হাসপাতালে রেলওয়ের কর্মচারীরাই চিকিৎসার জন্য ভর্তি হন। রেলের কর্মকর্তা-কর্মচারীরাই বলছেন, পরিচ্ছন্নতাকর্মীকে দিয়ে ইসিজি মেশিন চালানো একেবারেই হাস্যকর। ওই পরিচ্ছন্নতাকর্মী ঠিকঠাকমতো মেশিন পরিচালনা করতে পারেন কি না, তা নিয়েই তাঁদের সন্দেহ রয়েছে।

হাসপাতালটিতে যিনি ইসিজি মেশিন চালান, তাঁর নাম শারমিন সুলতানা এ্যামিলি। ২০১৯ সালের ২৮ অক্টোবর তিনি রেলওয়ে হাসপাতালে যোগ দেন। এর আগে তিনি ঈশ্বরদীতে রেলের স্যানিটারি পরিদর্শকের অধীন একজন সাধারণ পরিচ্ছন্নতাকর্মী হিসেবে কাজ করতেন। এখনো তিনি একই পদে রয়েছেন। তবে ২০১৯ সালের ৬ নভেম্বর পশ্চিম রেলের তৎকালীন চিফ মেডিকেল অফিসার (সিএমও) এস এ এম এমতেয়াজ এক অফিস আদেশে লেখেন, ‘ইসিজি মেশিন পরিচালনায় প্রশিক্ষণ ও অভিজ্ঞতা থাকায় পরিচ্ছন্নতাকর্মী শারমিন সুলতানা এ্যামিলিকে রাজশাহী রেলওয়ে হাসপাতালের ইনডোরে ইসিজি মেশিন পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হলো।’ ঈশ্বরদীতে যাওয়ার আগেও এ্যামিলি এই হাসপাতালে ইসিজি মেশিন চালাতেন। তাঁর স্বামী ইদ্রিস আলী এই হাসপাতালের একজন নার্স।

রেলসূত্রে জানা গেছে, হাসপাতালে জনবল না থাকলেও রেল কর্তৃপক্ষ ১৫ লাখ টাকায় ইসিজি মেশিন ও মাইক্রোস্কোপ কিনে ফেলে। বাজারমূল্যের চেয়ে অনেক বেশি দামেই এগুলো কেনা হয়। কিন্তু ইসিজি মেশিন পরিচালনার জন্য হাসপাতালে টেকনোলজিস্ট পদের অনুমোদন নেই। ফলে পরিচ্ছন্নতাকর্মী এ্যামিলিকে দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ এই মেশিন পরিচালনা করা হচ্ছে। আর স্বামীর সঙ্গে একই হাসপাতালে থাকতে এ্যামিলি ইসিজি মেশিন পরিচালনার আগ্রহ দেখিয়ে এখানে এসেছেন। এ জন্য রেল কর্তৃপক্ষকে ফরিদপুরের ‘ফরিদপুর দেশ ক্লিনিক’ নামের একটি রোগনির্ণয় কেন্দ্রে ‘ইসিজি টেকনিশিয়ান’ হিসেবে ২০১০ সালের জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ছয় মাস কাজের অভিজ্ঞতাপত্র দিয়েছেন তিনি। এ্যামিলির গ্রামের বাড়ি ফরিদপুরে।

ফরিদপুর দেশ ক্লিনিকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আহাম্মাদুল বারী বাবুলের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, শারমিন সুলতানা এ্যামিলি নামের কেউ তাঁর প্রতিষ্ঠানে কাজ করেছেন বলে মনে পড়ছে না। এ্যামিলির অভিজ্ঞতার সনদটি পাঠানো হলে সেটি দেখে আহাম্মাদুল বারী বলেন, অভিজ্ঞতাপত্রে থাকা স্বাক্ষরটি তাঁর নয়। সেখানে তাঁর মতো করে স্বাক্ষর দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। অভিজ্ঞতাপত্রটি ভুয়া।

এদিকে জনবল না থাকলেও ইসিজি মেশিন ও মাইক্রোস্কোপ কেনায় রেলের আর্থিক ক্ষতি হয়েছে বলে অডিটে আপত্তি এসেছে। ২০১৭-১৮ অর্থবছরের ওপর ২০১৯ সালের মার্চ-এপ্রিলে অডিট হয়। অডিট টিমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘ইসিজি মেশিন ও মাইক্রোস্কোপ ব্যবহারের উপযুক্ত কর্মচারী না থাকা সত্ত্বেও ক্রয় করায় ১৫ লাখ টাকা সরকারি ক্ষতি হয়েছে।’ অতিরিক্ত দামে কেনা প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, ‘বাজারদর যাচাই কমিটি এ বিষয়ে অবহিত ছিল না।’ তবে অডিট টিম বলেছে, জবাব গ্রহণযোগ্য নয়। অডিট টিম আরও বলেছে, ‘অনিয়মিতভাবে ১৫ লাখ টাকা ব্যয় সরকারি ক্ষতি, যা দায়ী পক্ষ থেকে আদায় হওয়া আবশ্যক।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের প্রধান চিকিৎসা কর্মকর্তা সুজিৎ কুমার রায় বলেন, এই অডিট আপত্তির সময় তিনি প্রধান চিকিৎসা কর্মকর্তা ছিলেন না। তাই এ বিষয়ে জানেন না। পরিচ্ছন্নতাকর্মীকে দিয়ে ইসিজি মেশিন চালানোর বিষয়ে তিনি বলেন, জনবল না থাকার কারণে পরিচ্ছন্নতাকর্মী এ্যামিলিকে দিয়ে মেশিনটি চালানো হয়। তাঁর এ বিষয়ে অভিজ্ঞতা আছে। এ্যামিলির অভিজ্ঞতাপত্রটি ভুয়া জানালে তিনি বলেন, বিষয়টি তাঁর জানা নেই। তিনি খোঁজ নিয়ে দেখবেন। তবে ১৬ ফেব্রুয়ারি হাসপাতালে গেলে এ্যামিলি দাবি করেন, তাঁর অভিজ্ঞতাপত্র সঠিক। তাঁর ইসিজি মেশিন চালানোর অভিজ্ঞতা আছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত