Ajker Patrika

ব্যবসায়ীদের আপত্তির মুখে মাশুল বাড়াচ্ছে বন্দর

আবু বকর ছিদ্দিক, চট্টগ্রাম
আপডেট : ২৫ মে ২০২২, ০৯: ৪৫
ব্যবসায়ীদের আপত্তির মুখে মাশুল বাড়াচ্ছে বন্দর

দেশে একদিকে বাড়ছে নিত্যপণ্যের দাম অন্যদিকে বন্দরে বাড়ানো হচ্ছে মাশুল। মাশুল বাড়ানোসংক্রান্ত পরামর্শক প্রতিষ্ঠান গত ২৯ এপ্রিল নতুন প্রস্তাবিত মাশুল চূড়ান্ত করে বন্দর কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দিয়েছে। এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হলে দ্রব্যমূল্য আরও এক ধাপ বৃদ্ধি পাবে। যার শিকার হবে সাধারণ মানুষ।

তবে এ সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে আসছেন ব্যবসায়ী ও অংশীজনেরা। চট্টগ্রাম চেম্বার, বিজিএমইএ, বাংলাদেশ শিপিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশন, চট্টগ্রাম কাস্টম এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশন ও ফ্রেইড ফরোয়ার্ডাস অ্যাসোসিয়েশনসহ অনেক সংস্থা লিখিতভাবে চট্টগ্রাম বন্দরকে ট্যারিফ না বাড়ানোর অনুরোধ করেছে।

চট্টগ্রাম চেম্বারের সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, ‘বন্দরের কাজ সার্ভিস দেওয়া, মাশুল বাড়িয়ে ব্যবসা করা নয়। বিশ্বের বিভিন্ন বন্দর মডার্ন ইকুইপমেন্ট সংযোজন করছে। চট্টগ্রাম বন্দরেও যাতে এসব ইকুইপমেন্ট সংযোজন করা হয়, আমরা পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের সেই প্রস্তাব দিয়েছি।’

আমদানি খাতে জাহাজভাড়া কয়েক গুণ বৃদ্ধির পর দেশের বেসরকারি কনটেইনার ডিপোগুলোতে (আইসিডি অফডক) মাশুল এবং লাইটার জাহাজ ও পণ্য পরিবহনে ভাড়া বাড়ানো হয়েছিল। সেই ভাড়া বৃদ্ধির ধকল কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই এবার চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষও মাশুল বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে।

সর্বশেষ গত ২৭ এপ্রিল বন্দর চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এম শাহজাহানের নেতৃত্বে বন্দর ভবনে ট্যারিফ আধুনিকায়ন ও সময়োপযোগী করার লক্ষ্যে অংশীজনদের নিয়ে এক কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে বিজিএমইএ, শিপিং এজেন্ট, ফ্রেইড ফরোয়ার্ডার, সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট ও বন্দরের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। সভায় বন্দরের নিয়োগ করা কনসালট্যান্টরা মাশুল বাড়ানোর বিষয়ে প্রস্তাব তুলে ধরেন। সভায় অংশীজনেরা বন্দরের প্রস্তাবিত ট্যারিফ না বাড়ানোর দাবি করেন।

বাংলাদেশ ফ্রেইড ফরোয়ার্ডার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি কবির আহমেদ ২৮ এপ্রিল বন্দর চেয়ারম্যানের কাছে প্রস্তাবিত মাশুল কার্যকর স্থগিত রাখতে অনুরোধ জানিয়ে চিঠি দেন।

চট্টগ্রাম বন্দর সূত্র জানায়, যুগোপযোগী ও বাস্তবসম্মত মাশুল নির্ধারণে ২০১৮ সালের ১৮ অক্টোবর স্পেনের পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ইডম (আইডিওএম) এবং ঢাকার মেসার্স লোজিক ফোরাম লিমিটেডের সঙ্গে চুক্তি সই করে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। চুক্তি অনুযায়ী চট্টগ্রাম বন্দরের মাশুল হালনাগাদ, পুনর্নির্ধারণের জন্য কি পার্সোনাল হিসেবে নিয়োজিত থেকে কার্যক্রম সম্পাদন করবে ওই দুই পরামর্শক প্রতিষ্ঠান।

বাংলাদেশ শিপিং এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ মোহাম্মদ আরিফ বলেন, ‘আমাদের নজরে আসছে। আমরা আপত্তি জানিয়ে বন্দর চেয়ারম্যানকে চিঠি দিয়েছি। আমরা একটি কমিটি গঠন করেছি, কোন কোন খাতে মাশুল বাড়ানো হচ্ছে, তা নির্দিষ্ট করে লিখিতভাবে বন্দরকে জানাব।’

সৈয়দ মোহাম্মদ আরিফ আরও জানান, মাশুল পরিশোধ করতে হয় ইউএস ডলারের হিসেবে। ১৯৮৬ সালে যখন মাশুল নির্ধারণ করা হয়েছিল তখন ডলারের বিপরীতে বাংলাদেশি টাকার মান ছিল ২২ থেকে ২৬ টাকা। বর্তমানে সেটি বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৮৭ টাকা। ডলারের মূল্যবৃদ্ধির কারণে টাকার হিসাবে এমনিতেই ৭০ গুণ বেশি মাশুল পরিশোধ করতে হচ্ছে। জাহাজভাড়া কয়েক গুণ বৃদ্ধির কারণে আমদানিকারকেরা দিশেহারা। সেখানে মাশুল বাড়লে তাঁরা আরও ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।’ তাঁরা সেবার মান বৃদ্ধির পাশাপাশি সেবা না দিয়ে মাশুল আদায়ের খাতগুলোকে ট্যারিফ থেকে বাদ দিতে লিখিতভাবে প্রস্তাব দিয়েছেন বলেও জানিয়েছেন।

বাংলাদেশ শিপিং এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে ১১ মে চট্টগ্রাম বন্দর চেয়ারম্যানকে দেওয়া পত্রে জানা যায়, ‘আমাদের কোনো মতামত ছাড়া বন্দরে মাশুল বাড়ানো হলে বৈদেশিক বাণিজ্য ব্যাহত হবে।’

পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর প্রথম সহসভাপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম জানান, আমদানিকারকেরা জাহাজভাড়া কয়েক গুণ বৃদ্ধির পর দেশের বেসরকারি আইসিডি মাশুল বৃদ্ধি, লাইটার জাহাজ ও পণ্য পরিবহনে ভাড়া বৃদ্ধি করেছে। করোনা মহামারির ধকল কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই এ সময় বন্দরের মাশুল বাড়ানো হলে পোশাকশিল্প চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এর খরচসমূহ বায়াররা কেটে নেবে।

চট্টগ্রাম কাস্টমস এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক কাজী মাহমুদ ইমাম বিলু বলেন, ‘চট্টগ্রাম বন্দরের ট্যারিফ না বাড়ানোর জন্য আমরা চট্টগ্রাম বন্দরকে একটি চিঠি দিয়াছি।’

বন্দরের ট্যারিফ আধুনিকায়ন ও সময়োপযোগী করার জন্য নিয়োগকৃত পরামর্শক দলের সদস্য ও বন্দরের সাবেক কর্মকর্তা মো. নাজমুল হক বলেন, ‘আমাদের পরামর্শক দলের কাজ শেষ করে আমরা রিপোর্ট বন্দর কর্তৃপক্ষের কাছে বই আকারে জমা দিয়েছি।’

বর্তমানে চট্টগ্রাম বন্দরে মাশুল আদায়ের জন্য ৬০টি আইটেম রয়েছে। এর মধ্যে ২৫টি আইটেমের ডলারে মাশুল আদায় হয়। ৩৫টি আইটেমের বাংলাদেশি টাকায় মাশুল আদায় হয়।

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মো. ওমর ফারুক জানান, বন্দরের সর্বশেষ ট্যারিফ নির্ধারণ করা হয়েছিল ১৯৮৬ সালে। এর পরে আর হালনাগাদ করা হয়নি। বর্তমানে বন্দরের ট্যারিফ হালনাগাদ করার জন্য পরামর্শক নিয়োগ করা হয়েছে। তারা কাজ করছে এবং প্রাথমিক প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। তবে এটি বাস্তবায়ন হতে সময় লাগবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত