Ajker Patrika

কালো-সাদা

সম্পাদকীয়
কালো-সাদা

বগুড়ার আদমদীঘির নশরতপুর গ্রামের ২৮ বছর বয়সী এক নারীকে নির্যাতন করছেন তাঁর শাশুড়ি আর দেবর। ১১ বছর আগে এই সংসারে এসেছেন মেয়েটি। ৯ বছর বয়সী একটি ছেলেসন্তান আছে তাঁর। স্বামী বিদেশে গেছেন পাঁচ বছর আগে। এরপর থেকেই শাশুড়ি আর দেবরের নির্যাতন সহ্য করতে হচ্ছে তাঁকে!

নিশ্চয়ই নতুন কোনো কথা শুনছেন না। আমরা পশ্চিমা শ্বেতাঙ্গ মানুষদের তৈরি করা বর্ণবাদকে তুলোধুনো করে থাকি, কিন্তু আমাদের এই বাদামি শরীর আর মগজেও যে বর্ণবাদের বসবাস, সেটা বেমালুম ভুলে যাই। এ ধরনের এক-আধটা খবর যখন সামনে আসে, তখনই কেবল মনে পড়ে, তাই তো! আমাদের মগজও তো বর্ণবাদী মগজ! সাধারণ সময় তা টেরই পাওয়া যায় না।

রূপকথার গল্পগুলোর দিকে তাকালেই কিন্তু অনেক কিছু পরিষ্কার হয়। রাজপুত্র, রাজকন্যা, রাজা, রানি সবাই ফরসা। আর দৈত্য, দানব, রাক্ষসেরা কালো। কালোদের ঠোঁট মোটা, শরীর স্থূল। বেড়ে ওঠার সময়টাতেই মাথার মধ্যে সাদা-কালোর এই যে পার্থক্য গড়ে দেওয়া হয়, তা আর মন থেকে সরে না। দুধে-আলতা রঙের কদর কি শুধু পশ্চিমা দেশে? আমাদের দেশে নয়? বিয়ের সময় যখন কনে খোঁজা হয়, তখন সাদা মেয়ে-কালো মেয়ের মধ্যে কাকে বেছে নেওয়া হয়? জন্মের পর থেকেই কালো রঙের মানুষ যে কত রকম নিগ্রহের শিকার হয়, তা ভুক্তভোগী ছাড়া আর কেউ জানতেও চায় না।

কালো রংটি যে ভালো রং নয়, সেটা প্রমাণের জন্য তো বিভিন্ন ক্রিম কোম্পানির ক্রিমের বিজ্ঞাপনগুলোই যথেষ্ট। কালো রং সাদা করার সে কী আপ্রাণ চেষ্টা এবং বিজ্ঞাপনে দেখা যায়, কালোরা সাদা হয়ে গেলেই জগতের সব পুরুষ তাদের দিকে অবাক দৃষ্টিতে চেয়ে থাকে! পৃথিবীর সেরা সৌন্দর্যের নাগাল পাওয়ার অর্থই হলো ফরসা হওয়া!

এই অসভ্যতাকে কষে থাপ্পড় দিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ, তাঁর চিত্রাঙ্গদা নৃত্যনাট্যে। আপাতকুৎসিত মেয়ে চিত্রাঙ্গদা মদনের শরণাপন্ন হয়ে বর পেয়ে হলেন অপরূপ সুন্দরী। অর্জুনের ভালোবাসা জয় করলেন। কিন্তু একসময় তিনি বুঝলেন, এই আপাতসৌন্দর্য ভেতরের সৌন্দর্য নয়। সুন্দর হতে হলে নিজের ভেতরের রূপটাই প্রয়োজনীয়। আর তাই তিনি নিজের কুৎসিত রূপে ফিরে গিয়ে অর্জুনের কাছে এসে বললেন, ‘আমি চিত্রাঙ্গদা, রাজেন্দ্রনন্দিনী/পূজা করে মোরে রাখিবে ঊর্ধ্বে/সে নহি নহি/হেলা করি মোরে রাখিবে পিছে/সে নহি নহি।’

এই ভেতরের রূপকে অগ্রাহ্য করা হয় বলেই কালো-সাদা দ্বন্দ্ব বাড়ে। দ্বন্দ্বটা আরোপিত। সাদা মানেই ভালো, কালো মানেই খারাপ—এই ভাবনাটা অতি সুকৌশলে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে মস্তিষ্কের মধ্যে। যেহেতু পশ্চিমা সভ্যতা তার উপনিবেশবাদ দিয়ে করায়ত্ত করেছিল প্রায় গোটা দুনিয়া, তাই তাদের তৈরি ভাবনাগুলোই আজও করে খাচ্ছে। কালোকে অবমাননা করার অভ্যাস যাচ্ছে না।

বগুড়ার ঘটনায় দোষীদের শাস্তিই শুধু কাম্য নয়, আমাদের মস্তিষ্কে যে সাদা মহারাজ বসে আছে, তাকেও টেনেহিঁচড়ে মাথা থেকে নামিয়ে সাদা-কালোকে এককাতারে আনা প্রয়োজন। নইলে সাদার শোষণ চলতেই থাকবে অবিরাম। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

গাজীপুরে রাস্তা বন্ধ করে চলাচল করা সেই পুলিশ কমিশনারকে প্রত্যাহার

জামায়াত আমিরের বাসায় জ্যেষ্ঠ নেতাদের বৈঠক, পিআর নিয়ে অনড় অবস্থান

মির্জাপুরে বিএনপি নেতার পোস্টার ছেঁড়াকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের সংঘর্ষ, আহত ৭

নীলফামারীর উত্তরা ইপিজেডে শ্রমিকদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ, গুলি, এক শ্রমিক নিহত

কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান পদ থেকে ইবরাহিমের নাম বাদ দিতে ইসিকে চিঠি

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত