Ajker Patrika

হাসপাতালের মা-বাপ

সম্পাদকীয়
হাসপাতালের মা-বাপ

কেউ যদি নিজেকে হাসপাতালের মা-বাপ বলে পরিচয় দেন, তাহলে তো সেটা আমজনতার জন্য একটা আশীর্বাদ হিসেবেই বিবেচিত হতে পারে। শরীর নিয়ে মানুষের অনিশ্চয়তা অনেক, কে কখন অসুখ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হবেন, সে কথা আগে থেকে বলে দেওয়া যায় না। সুতরাং কোনো হাসপাতালে যদি এ রকম হাসপাতালের মা-বাপ থাকেন, তাহলে তা রোগীদের জন্য সুখবর। কিন্তু চট্টগ্রাম ডায়াবেটিক জেনারেল হাসপাতালের মা-বাপ জাহাঙ্গীর চৌধুরী অর্থাৎ যিনি এই হাসপাতালের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি, তাঁর কাছে রোগীরা এমনকি এই হাসপাতাল কতটুকু নিরাপদ, সে প্রশ্নই উঠেছে এখন। প্রশ্নটি এড়ানো যাবে না।

যেসব অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে, সেগুলোর দিকে তাকালেই বোঝা যাবে তিনি আসলে হাসপাতালের মা-বাপ না হয়ে হতে চেয়েছেন আত্মীয়স্বজন আর দুর্নীতির রক্ষাকারী। প্রতিষ্ঠানে স্বজনদের গুরুত্বপূর্ণ সব পদে নিয়োগ দিয়ে এবং নানা ধরনের দুর্নীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট থেকে তিনি প্রমাণ করেছেন, এ দেশে অনিয়ম আর দুর্নীতি করার জন্য স্রেফ আগ্রহ থাকাটাই যথেষ্ট। সমাজসেবা অধিদপ্তর তাঁর বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ পাওয়ার পর যখন একটি তদন্ত কমিটি গঠন করল, তখন দেখা গেল সেখানেও নানা ধরনের তেলেসমাতি চলছে। এই হাসপাতালে তদন্ত কমিটি যদি অভিযান পরিচালনা করে, তবে অবশ্যই তা হতে হবে গোপনে। নইলে হাসপাতালের নয়ছয় কীভাবে ধরা পড়বে? কিন্তু অবাক বিস্ময়ে আমরা লক্ষ করলাম, এই হাসপাতালে তদন্ত কমিটি কবে আসবে সে খবর চাউর হয়ে গেছে বহু আগেই। কীভাবে চাউর হলো? খুব সহজভাবে।

সমাজসেবা অধিদপ্তরই অভিযানের তারিখ চিঠির মাধ্যমে জানিয়ে দিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে। এরপর যা হয়েছে, সেটা অনুমান করে নেওয়া খুব সহজ। ভেবে দেখুন, আপনি চোরকে বললেন, অ্যাই, তোমার ঘরে চুরির মাল খুঁজতে আসব আমরা সামনের বৃহস্পতিবার! চোর কি সেই চুরির মাল আপনার সামনে এনে দোলাতে থাকবে?

এখানেও ঘটেছে একই ঘটনা। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অভিযানের দিন তদন্ত কমিটির সদস্যদের জন্য দুপুরের খাওয়ার আয়োজন করে এবং ভূরিভোজ সাঙ্গ হলে তাদের নিজেদের কল্পকাহিনিগুলো সবিস্তারে শুনিয়ে দেয়। তদন্ত কমিটির একজন সদস্য এই আতিথেয়তা ভোগ করেননি। সুতরাং এখনো কিয়ৎ আশা আছে, জাহাঙ্গীর চৌধুরীর কীর্তিকলাপ নিয়ে তদন্তের সত্যিকারের ফল পাওয়ার।

বিস্তারিত আলাপে না গিয়ে এটুকু বলা যায়, এই হাসপাতালে চলছে একনায়কতন্ত্র। আমাদের দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এই স্বৈরাচারী আচরণে অভ্যস্ত হয়ে যায়। তাই গুরুত্বপূর্ণ পদে স্বজনদের নিয়োগ, আয়-ব্যয়ের রেজিস্টার না থাকা, নামী চিকিৎসকদের নামে বাণিজ্য কিংবা হাসপাতালের কোনো ব্যাপারে মুখ খুললেই চাকরিচ্যুতির ঘটনাগুলো নতুন কিছু নয়। নতুন কিছু হতে পারে, যদি সত্যিই এই হাসপাতালের মা-বাপকে জবাবদিহির আওতায় আনা যায় এবং সত্যিই তাঁর এবং তাঁর কৃতকর্মের প্রকৃত মূল্যায়নের পর যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হয়। সেটাই আসলে মূল কাজ। সেটা এড়িয়ে গেলে এই মা-বাপ ন্যায়বিচারের মা-বাপের নাম ভুলিয়ে দিতে পারে।   

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

গাজীপুরে রাস্তা বন্ধ করে চলাচল করা সেই পুলিশ কমিশনারকে প্রত্যাহার

জামায়াত আমিরের বাসায় জ্যেষ্ঠ নেতাদের বৈঠক, পিআর নিয়ে অনড় অবস্থান

মির্জাপুরে বিএনপি নেতার পোস্টার ছেঁড়াকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের সংঘর্ষ, আহত ৭

নীলফামারীর উত্তরা ইপিজেডে শ্রমিকদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ, গুলি, এক শ্রমিক নিহত

কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান পদ থেকে ইবরাহিমের নাম বাদ দিতে ইসিকে চিঠি

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত