Ajker Patrika

ভোটে নজর মেয়র সাদিকের

খান রফিক, বরিশাল
আপডেট : ২৩ মে ২০২২, ১৪: ৫৫
ভোটে নজর মেয়র সাদিকের

আগামী সিটি নির্বাচনের ক্ষণগণনা বা কাউন্টডাউন শুরুর আভাস দিয়েছেন আওয়ামী লীগ নেতারা। প্রধানমন্ত্রীর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসের অনুষ্ঠানে মেয়রের উপস্থিতিতে সে রকম ইঙ্গিত দেন তাঁরা। ক্ষমতাসীন দলটির এই প্রস্তুতি বর্তমান সিটি মেয়র ও নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহকে ঘিরে। মেয়র সাদিকও এ জন্য এক বছর আগেই তাঁর ভোট ব্যাংক বাড়ানোর দিকে নজর দিয়েছেন। নানা উন্নয়ন কর্মসূচির মাধ্যমে ছুটছেন জনগণের দ্বারে দ্বারে।

ভোটের আগে মেয়র নগরবাসীকে নানা স্বপ্নও দেখাচ্ছেন। অবশ্য সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, আগামী সিটি নির্বাচনে বাইরের পাশাপাশি ঘরের সমস্যাও পোড়াবে মেয়র সাদিককে।

২০১৮ সালের ৩০ জুলাই বরিশাল সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে মেয়র হন সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ। চার বছরে তাঁকে সবচেয়ে বেশি ভুগিয়েছে সদর উপজেলা ইউএনওর কার্যালয়ের হাঙ্গামা এবং উন্নয়ন বরাদ্দ না পাওয়া। তবে তাঁর অনুসারীরা মনে করেন, পাঁচ বছরের গ্যারান্টিতে সড়ক নির্মাণ, টিকাদান কর্মসূচির মতো কার্যক্রমের কারণে মেয়র সাদিকের জনপ্রিয়তা বেড়েছে।

যদিও মেয়র সাদিকের বিরুদ্ধে দলীয় ১০ জন কাউন্সিলর অবস্থান নেওয়ায় বিরোধ বাড়ছেই। ওই কাউন্সিলররা পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী কর্নেল (অব.) জাহিদ ফারুক শামীমের অনুসারী। তবে মেয়র সাদিক ১৪ মে কমিউনিটি পুলিশিং সভায় প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে তাঁর কোনো বিভক্তি নেই বলে সাফ জানিয়ে দেন।

এদিকে ১৭ মে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসের বক্তব্যে ছাত্রলীগ নেতা রইজ আহমেদ মান্না বলেন, ‘সামনে নির্বাচন, সাদিক ভাইয়ের বিরুদ্ধে কেউ ষড়যন্ত্র করলে ছাত্রলীগই প্রতিহত করবে।’ নগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি এবং প্যানেল মেয়র গাজী নঈমুল হোসেন লিটু বলেন, ‘এ মাস থেকেই নির্বাচনী হিসাবনিকাশ হয়ে যাবে। আগামীতেও সাদিক আবদুল্লাহকে মেয়র নির্বাচনে বিজয়ী করব।’ নগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আফজালুল করিম বলেন, ‘সিটি নির্বাচনের মাত্র এক বছর বাকি। কাউন্টডাউন শুরু হয়ে গেছে। এ নির্বাচনে বিজয় না এলে বরিশালের ২৩টি আসন ঝুঁকিতে পড়বে।’ সভায় জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তালুকদার মো. ইউনুস বলেন, ‘আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে সিটি, জাতীয় নির্বাচনে নৌকার প্রার্থীকে বিজয় করব। আমাদের শত্রু অনেক, মিত্র কম। যাঁরা ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে কথা বলেন তাঁদের বিশ্বাস করব না।’

ওই সভায় উপস্থিত বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আনোয়ার হোসাইন এ প্রসঙ্গে আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘বাস্তবিকই আগামী নির্বাচন হবে কঠিন। এ জন্য বরিশাল সিটিতে জিততে জনগণের সঙ্গে নেতা-কর্মীদের আচরণ হতে হবে সংযত।’ তিনি আরও বলেন, ‘রাজনীতিতে ষড়যন্ত্র থাকবেই। ঘরে-বাইরে সব জায়গায়ই ষড়যন্ত্র হতে পারে। এটি মোকাবিলায় নেতা-কর্মীদের সতর্ক থাকতে হবে।’

দলীয় নেতাদের মতো সিটি ভোটকে সামনে রেখে সাম্প্রতিক সময়ে মেয়র সাদিকও নানা উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে প্রতিশ্রুতি দিয়ে জনগণের কাছে ছুটছেন। এর মধ্যে ময়লাখোলায় বসুন্ধরার মতো আধুনিক সিটি মার্কেট করা এবং ১০ হাজার অটোরিকশার লাইসেন্স দেওয়ার ঘোষণায় নগরে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের নায়েবে আমির সৈয়দ মোহাম্মদ ফয়জুল করিম ১৮ মে সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, ‘মেয়র কীভাবে অটোরিকশায় লাইসেন্স দেবেন? লাইসেন্স তো দেবে বিআরটিএ?’

গত সিটি নির্বাচনে বাসদের মেয়র প্রার্থী মনীষা চক্রবর্তী বলেন, ‘চার বছরে যথেষ্ট সময় পেয়েছেন বর্তমান মেয়র। নির্বাচনের শেষ বছরে প্রতিশ্রুতি দিয়ে রাজনৈতিক খেলায় নেমে লাভ নেই।’ মনীষা আরও বলেন, ‘কেউ যদি ধর্ষণে অভিযুক্তের পক্ষে সাফাই গায় এবং খাল সংস্কার থামিয়ে দেয়—তাহলে ষড়যন্ত্রের দরকার হবে না, জনগণই প্রতিপক্ষ হবে।’

জাতীয় পার্টির ঘোষিত মেয়র প্রার্থী ইকবাল হোসেন তাপস বলেন, ‘ষড়যন্ত্র কে কার বিরুদ্ধে করে? তাঁর দলের মধ্যেই তো ষড়যন্ত্রের বীজ। চার বছরে এ নগরের উন্নয়নে সরকার এক টাকাও দেয়নি। তাঁরা উন্নয়ন না করলেও বাধাগ্রস্ত করছে।’

এ ব্যাপারে বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আফজালুল করিম বলেন, ‘সিটি নির্বাচনের এক বছর বাকি থাকায় এখনই প্রস্তুতি নেওয়া দরকার। স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসে এ কারণেই সবাইকে এক হয়ে ষড়যন্ত্র মোকাবিলার আহ্বান জানাই।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত