Ajker Patrika

গারো নেতা রিছিলকে ভুলতে বসেছে সবাই

আনোয়ার সাদাৎ ইমরান, মধুপুর
আপডেট : ১৮ মার্চ ২০২২, ১৫: ২২
গারো নেতা রিছিলকে ভুলতে বসেছে সবাই

মধুপুরের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী গারোদের অধিকার আদায়ের নেতা চলেশ রিছিলের ১৫ তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ ১৮ মার্চ, শুক্রবার। এ উপলক্ষে একেবারে ঘরোয়া পরিবেশে তাঁর প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ ও আলোচনা সভার মধ্য দিয়ে তাঁকে স্মরণ হবে।

আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর নির্যাতনের শিকার হয়ে চলেশ রিছিল নিহত হন উল্লেখ করে মধুপুর থানায় তাঁর প্রথম স্ত্রীর দেওয়া অভিযোগ আজও মামলা হিসেবে রেকর্ড হয়নি। এ ছাড়া আলোর মুখ দেখেনি বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন।

জানা গেছে, তৎকালীন জোট সরকার মধুপুর বনাঞ্চলকে ইকো পার্ক করার উদ্যোগ নেয়। ২০০৩ সালের মাঝামাঝিতে মধুপুর গড়ের তিন হাজার একর বনভূমির চারপাশে প্রাচীর নির্মাণের উদ্যোগ নেয় ‘ফরেস্ট কনজারভেশন অ্যান্ড ইকোট্যুরিজম’ প্রকল্পের আওতায়। এর প্রতিবাদে গারোরা আন্দোলন শুরু করেন। ওই আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক ছিলেন উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতা চলেশ রিছিল। ২০০৪ সালের ৩ জানুয়ারি বিক্ষোভ মিছিল বের করেন গারোরা। মিছিলে গুলিতে পীরেন নামের এক গারো যুবক নিহত হন। আহত হন অন্তত আরও ২৫ জন নারী-পুরুষ ও শিশু। এ ঘটনার পর আন্দোলন আরও তীব্র হয়ে ওঠে। জোট সরকার প্রাচীর নির্মাণ বন্ধ রাখতে বাধ্য হয়।

এদিকে ২০০৭ সালে দেশে জরুরি অবস্থা জারি করা হয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মধুপুরের কাকরাইদ এলাকায় বিএডিসির বীজ উৎপাদন খামারে সেনা ক্যাম্প স্থাপন করে। এরপর বন বিভাগ আবার প্রাচীর নির্মাণের চেষ্টা চালায়। সেনাসমর্থিত ওই সরকারের বিরুদ্ধে গারোরা তখন বিক্ষোভ মিছিল করার সাহস করেনি। তবে গণমাধ্যম কর্মীদের কাছে গারো নেতারা তাঁদের ক্ষোভের কথা তুলে ধরেন।

কয়েকটি জাতীয় দৈনিকে এ-সংক্রান্ত প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এতে দেশে ও বিদেশে সমালোচনার ঝড় ওঠে। এমন পরিস্থিতি সরকারের বন ও পরিবেশ উপদেষ্টা সিএস করিম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন এবং প্রাচীর নির্মাণ বন্ধের নির্দেশ দেন।

এরপর আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে মামলা হয়। এই প্রেক্ষাপটে ২০০৭ সালের ১৮ মার্চ ময়মনসিংহ থেকে মধুপুরের দিকে আসার সময় চলেশ রিছিলকে তুলে নেওয়া হয়। তাঁর সঙ্গী প্রতাব জাম্বিলের ভাষ্যমতে, সেদিন মুক্তাগাছা উপজেলায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাদা পোশাকধারী সদস্যরা চলেশ, প্রতাব, তুহিন ও পীরেনকে ধরে পিকআপে তুলে মধুপুরের একটি ক্যাম্পে নিয়ে যান। সেখানে নির্যাতনে চলেশের মৃত্যু হয়।

তবে মধুপুর থানার তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রিয়াজ হোসেন সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, ‘চলেশকে গ্রেপ্তার করতে গেলে দৌড়ে পালানোর সময় সে হোঁচট খেয়ে পড়ে অজ্ঞান হয়ে যায়। হাসপাতালে নেওয়ার পর তাঁর মৃত্যু হয়।’

তবে চলেশকে নির্যাতনে হত্যার অভিযোগ করেন স্বজনেরা। ২০ মার্চ চলেশের প্রথম স্ত্রী বাদী হয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও বন বিভাগের সদস্যদের নাম উল্লেখ করে মধুপুর থানায় লিখিত অভিযোগ দেন। ওই অভিযোগ নিয়মমাফিক গ্রহণ করলেও আজও মামলা হিসেবে রেকর্ড করা হয়নি।

তত্ত্বাবধায়ক সরকার ২০০৭ সালের ৫ মে এক সদস্যের বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি করে। তদন্ত কমিটির দায়িত্ব পান অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. রফিউদ্দিন। কিন্তু সেই তদন্ত আজও আলোর মুখ দেখেনি।

এ ঘটনায় উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ও গারো নেত্রী যষ্ঠিনা নকরেক বলেন, ‘চলেশ রিছিল হত্যাকাণ্ডের বিচার আমরা পাব কিনা জানি না।’ বৃহত্তর ময়মনসিংহ গারো উন্নয়ন ফেডারেশনের সভাপতি অজয় এ মৃ, গারো নেত্রী শান্তি সাংমাও হতাশা ব্যক্ত করেন।

চলেশের প্রথম স্ত্রী সন্ধ্যা রানী সিমসাং বলেন, ‘বিচারের জন্য আর কতকাল চেয়ে থাকতে হবে জানি না।’

মধুপুর থানার ওসি মোহাম্মদ মাজহারুল আমিন বলেন, ‘আমি এখানে সদ্য যোগদান করেছি। এত দিনের পুরোনো বিষয়ে আমি এ মুহূর্তে কিছুই বলতে পারছি না।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত