Ajker Patrika

রোবোটিকস কমাবে কৃষি খরচ

হাবিবুর রনি, বাকৃবি
আপডেট : ২৩ নভেম্বর ২০২১, ১৫: ৫২
রোবোটিকস কমাবে কৃষি খরচ

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) কৃষি অর্থনীতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক এ কে এম আবদুল্লাহ আল আমিন। তিনি বর্তমানে যুক্তরাজ্যের হার্পার অ্যাডামস বিশ্ববিদ্যালয়ে এলিজাবেথ ক্রিক ফেলো হিসেবে ‘ফসল উৎপাদনে স্বায়ত্তশাসিত কৃষি রোবোটিকসের অর্থনৈতিক বিশ্লেষণ’ নিয়ে গবেষণা করছেন। দেড় বছর ধরে গবেষণা করছেন কৃষিতে রোবোটিকসের ব্যবহারের ওপর। কৃষিতে রোবোটিকস ব্যবহারে বাংলাদেশের প্রচলিত ধারার কৃষি পদ্ধতি বদলে দেওয়া সম্ভব বলে মনে করছেন এই গবেষক।

গবেষণায় এ কে এম আবদুল্লাহ আল আমিন দেখেছেন, প্রচলিত কৃষি যন্ত্র ব্যবহারের চেয়ে রোবোটিকস ব্যবহারে সময়, শ্রম ও খরচ অনেকাংশে কমে যায়। কৃষিতে রোবোটিকস ব্যবহারে উৎপাদন খরচ কমে যাওয়ার কারণে কৃষি পণ্যে টন প্রতি প্রায় ৩ হাজার ৪৪২ টাকা থেকে ৪ হাজার ৫৯০ টাকা পর্যন্ত লাভ হয়।

গবেষণায় দেখা যায়, প্রচলিত কৃষিযন্ত্র দিয়ে ছোট জমিতে সময় এবং শ্রমিক অনেক বেশি প্রয়োজন হয়। অন্যদিকে রোবোটিকস ব্যবহারে উৎপাদন অনেক বেশি পাওয়া যায়, যা জমির আকারের ওপর নির্ভর করে না।

গবেষণায় আরও দেখা যায় যে, গম উৎপাদনের ক্ষেত্রে প্রচলিত কৃষি যন্ত্র ব্যবহারে জমির আকারের সুবিধা কম। ছোট জমিতে রোবোটিকস ব্যবহার অনেক লাভজনক। পাশাপাশি অনেকগুলো রোবোটিকস একসঙ্গে ব্যবহার করা লাভজনক বড় জমিতে।

এই গবেষক জানান, স্বায়ত্তশাসিত কৃষি রোবোটিকস বলতে এমন মেকাট্রনিক যন্ত্রকে বোঝায়, যা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে পূর্ব নির্ধারিত পরিকল্পনা অনুযায়ী কৃষি কাজ সম্পন্ন করে। এতে কোনো যন্ত্রচালকের দরকার হয় না। শুধু নিরাপত্তাজনিত কারণে মানুষের সামান্য তত্ত্বাবধানের প্রয়োজন হয়। মূলত টেকসই কৃষির জন্য এই প্রযুক্তি ব্যবহৃত হচ্ছে।

এ কে এম আবদুল্লাহ আল আমিন আরও জানান, প্রযুক্তিগতভাবে এগিয়ে থাকা দেশগুলো কৃষি পণ্য উৎপাদনের ব্যয় বিবেচনায় কৃষি যান্ত্রিকীকরণের মাধ্যমে কৃষিকে বাণিজ্যিক কৃষিতে রূপান্তরিত করেছে। কিন্তু ক্রমাগত কৃষি শ্রমিকের অপ্রতুলতা, ছোট বা খণ্ডিত আকারের জমি, জীববৈচিত্র্য হ্রাস এবং পরিবেশের ক্রমাগত অবনতি হচ্ছে। এটি কৃষি যান্ত্রিকীকরণে অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই বিবেচনায় ‘প্রেসিশন এগ্রিকালচার বা নির্ভুল কৃষি’ বিশেষ করে কৃষি রোবোটিকস ব্যবহারের মাধ্যমে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হওয়ার ওপর গুরুত্ব আরোপ করা হচ্ছে বলে তিনি জানান।

বাংলাদেশের কৃষিতে রোবোটিকসের সম্ভাব্যতা সম্পর্কে এ কে এম আবদুল্লাহ আল আমিন বলেন, ‘বাংলাদেশ উন্নত প্রযুক্তির সুযোগ ও ব্যয় বিবেচনায় লাভজনকভাবে কৃষি বাণিজ্যিকীকরণের দিকে যেতে পারবে বলে আশা করা যাচ্ছে।’

এর কারণ হিসেবে বাকৃবি শিক্ষক বলেন, বাংলাদেশের জমিগুলো ছোট আকারের এবং খণ্ডিত। রোবোটিকস ব্যবহারে জমির আকারের কোনো পরিবর্তন করতে হবে না। এ ছাড়া কৃষি রোবোটিকসের ফলে কম ইনপুট দরকার হয়। অর্থাৎ শতকরা ৯০ ভাগ পর্যন্ত ইনপুট সাশ্রয় হয়।’

এ ক্ষেত্রে ইনপুটে বাংলাদেশ সরকার যে ভর্তুকি দেয় তা কমিয়ে আনা সহজ হবে জানিয়ে এই গবেষক বলেন, ‘নির্ভুল তথ্য-উপাত্ত পাওয়া সহজ হবে এই প্রযুক্তি ব্যবহারে। এটি দেশের দেশের চাহিদা এবং জোগান নিয়ন্ত্রণে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। মূল কথা, পণ্যের বাজার সম্পর্কে পূর্বেই ধারণা করা যাবে এবং পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণও সহজ হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত