Ajker Patrika

প্রশাসনের নাকের ডগায় পুকুর ভরাটের মহোৎসব!

সাজন আহম্মেদ পাপন, কিশোরগঞ্জ 
প্রশাসনের নাকের ডগায়  পুকুর ভরাটের মহোৎসব!

প্রাকৃতিক জলাধার সংরক্ষণ আইনের তোয়াক্কা না করে কিশোরগঞ্জ জেলায় একের পর পুকুর ভরাট করা হচ্ছে। প্রশাসনের নাকের ডগায় পুকুর ভরাট করে গড়ে উঠছে স্থাপনা। তবে এসব কাজে জড়িত ব্যক্তিরা প্রভাবশালী হওয়ায় তাঁদের দাপটে কেউ মুখ খুলতে পারছেন না বলে অভিযোগ সচেতন মহলের।

গত ১৫ বছরে জেলায় প্রায় ৪০০ পুকুর ভরাট করা হয়েছে বলে জানা গেছে। এতে মৎস্যসম্পদের ক্ষতি ও পরিবেশ বিপর্যয়ের পাশাপাশি অগ্নিনির্বাপণব্যবস্থা বাধাগ্রস্ত হবে বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। এর কারণ হিসেবে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের উদাসীনতাকে দায়ী করছেন জেলার সচেতন মানুষ।

কিশোরগঞ্জ মৎস্য কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে জেলায় মোট পুকুরের সংখ্যা ৩৪ হাজার ২২৫টি। তবে সেটি কাগজে থাকলেও পুকুর ভরাটের কবলে পড়ে বর্তমানে সংখ্যাটি আরও কমে গেছে বলে মনে করছেন স্থানীয় বাসিন্দা। কারণ, ইতিমধ্যে বেশ কয়েকটি পুকুর ভরাট করা হয়েছে। এ ছাড়া আরও বেশ কয়েকটি পুকুর ভরাটের তোড়জোড় চলছে।

রেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, জেলা শহরের হয়বতনগর সাহেব বাড়ির একটি পুকুর ভরাট করে স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে। খড়মপট্টি জোড়া পুকুর এলাকার একটি পুকুর ভরাট করে স্থাপনা নির্মাণের পাশাপাশি সবজি চাষ করেছেন পুকুরের মালিক। একই এলাকার বুলবুল ভিলা গড়ে উঠেছে পুকুর ভরাট করে। গাইটাল শ্রীনগর রোডের একটি পুকুর ভরাট করে স্থাপনা নির্মাণকাজ চালিয়ে যাচ্ছে মালিকপক্ষ। একই এলাকার হর্টিকালচার সেন্টারের পেছনের মোড়ে একটি পুকুর ভরাটের পাঁয়তারা করছে পুকুরটির মালিকপক্ষ। মেথরপট্টি, রথখলা সিনেমা হলের পাশে ও আলোর মেলায় পুকুর ভরাট করতে তোড়জোড় চলছে। এ ছাড়া করিমগঞ্জ, তাড়াইল, পাকুন্দিয়া, কটিয়াদী, বাজিতপুর, ভৈরব উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় পুকুর ভরাট করা হচ্ছে।

২০০০ সালে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে জারি করা এক আদেশে বলা হয়, প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা, জনগণের আশ্রয়স্থল রক্ষা ও অগ্নিনির্বাপণে সহায়তা করতে কোনো অবস্থায় খাল, বিল, পুকুর-নালাসহ প্রাকৃতিক জলাশয় ভরাট করা যাবে না এবং এর গতিপথ পরিবর্তন করা যাবে না। তবে এসবের তোয়াক্কা না করেই ভরাট করা হচ্ছে পুকুর ও জলাশয়।

গত ১৫ বছরে জেলায় প্রায় ৪০০ পুকুর ভরাট করা হয়েছে বলে জানা গেছে। এতে মৎস্যসম্পদের ক্ষতি ও পরিবেশ বিপর্যয়ের আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

এ বিষয়ে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা রিপন কুমার পাল বলেন, প্রাকৃতিক জলাধার ভরাট করলে মৎস্য আহরণে ভাটা পড়ে। এতে শুধু মৎস্যসম্পদের ক্ষতি হয় না, বাড়িতে আগুন লাগলেও পানির সংকট হয়। পুকুর ভরাট চলতে থাকলে মৎস্য আহরণ কমে যাবে। চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হবে না।

কিশোরগঞ্জ পরিবেশ অধিদপ্তরের সিনিয়র কেমিস্ট রুবাইয়াত তাহরীম সৌরভ বলেন, ‘সর্বশেষ ভূমি জরিপের তথ্যে জায়গাটি পুকুর বা জলাশয় হয়ে থাকলে তা ভরাট করা যাবে না। আগে কী হয়েছে, তা বলতে পারব না। তবে আমরা সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেব।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত