Ajker Patrika

কার্ডবঞ্চিত জেলেরা

সম্পাদকীয়
কার্ডবঞ্চিত জেলেরা

বাংলাদেশে অনেক ক্ষেত্রেই প্রকৃত পেশার মানুষেরা সরকারি প্রণোদনা ও সহযোগিতা থেকে বঞ্চিত হন। কিছু কিছু তালিকায় তাঁদের নাম ওঠে না। বয়স্ক, প্রতিবন্ধীসহ যেকোনো ভাতার ক্ষেত্রে কথাগুলো সত্যি। বিভিন্ন সময় এ রকম খবর আমরা সংবাদমাধ্যমে দেখে থাকি। বংশপরম্পরায় জেলে, মাছ শিকার যাঁদের জীবিকার প্রধান অবলম্বন, সেই প্রকৃত জেলেরাই সরকারের দেওয়া সহায়তা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। আর যাঁরা জীবনে একবারের জন্যও নদীতে মাছ ধরতে যাননি, তাঁরাই জেলে কার্ডধারী হয়েছেন জেলে হিসেবে। জেলের তালিকায় সবার আগে তাঁদের নাম রয়েছে। ৮ নভেম্বর আজকের পত্রিকায় এ-সংক্রান্ত একটি খবর ছাপা হয়েছে।

লক্ষ্মীপুরের কমলনগরে প্রকৃত জেলেদের বাদ দিয়ে অন্য পেশার মানুষকে জেলে বানানোর অভিযোগ উঠেছে। উপজেলা মৎস্য অফিসের তালিকা অনুযায়ী, জেলে তালিকায় ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য, সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান, প্রবাসী, ব্যবসায়ী, গ্রাম পুলিশ, মেডিকেল প্রমোশন অফিসার, নাপিত, কৃষক, শ্রমিক, রিকশাচালক, গাড়িচালক—কারও নাম বাদ পড়েনি। কিন্তু যাঁদের জন্য এই সরকারি সহায়তা, সেই প্রকৃত জেলেরাই তালিকা থেকে বাদ পড়েছেন। ফলে অসংখ্য প্রকৃত জেলে সরকারের দেওয়া সহায়তা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।

প্রতিবছর সরকারিভাবে ইলিশ মৌসুমে (ইলিশের ডিম ছাড়ার সময়টাতে) জেলেদের নদীতে মাছ ধরার জন্য নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। প্রকৃত জেলেরা এ সময় বেকার বসে থাকেন। অন্য কাজ করতে পারেন না। তাই সরকার এ সময় জেলেদের প্রাত্যহিক সংসারের ব্যয় মেটানোর জন্য বিশেষ খাদ্যসহায়তা দিয়ে থাকে। এ কারণে তাঁদের জন্য জেলে কার্ডের ব্যবস্থা করা হয়।

এ ঘটনার প্রকৃত কারণ খুঁজতে গিয়ে জানা যায়, জেলে-তালিকায় নাম থাকা আবু সিদ্দিক গ্রাম পুলিশ, নুর নবী দুলাল পল্লিচিকিৎসক, জাহিদুর রহমান প্রবাসী, মরণশীল সেলুন ব্যবসায়ী, নুর নবী ব্যবসায়ী, মাকসুদুর রহমান মেডিকেল প্রমোশন অফিসার, মো. রফিকুল ইসলাম কালকিনি ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান, মো. শাহজাহান ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য, মো. আমজাদ হোসেন ধনী ব্যবসায়ী, মো. মনির হোসেন খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ইউনিয়ন ডিলার, শামীম ও মো. হান্নান ব্যবসায়ী।

একজন উপজেলা জ্যেষ্ঠ মৎস্য কর্মকর্তা তালিকায় প্রকৃত জেলেদের নাম না থাকার বিষয়টি স্বীকার করেছেন। আমাদের কথা হলো, কাদের কথায় অন্য পেশার মানুষজনের নাম তালিকাভুক্ত করা হলো, সবার আগে সেই সব ব্যক্তিকে চিহ্নিত করা দরকার। আমাদের দেশে অধিকাংশ ক্ষেত্রে এ ধরনের তালিকা করার সময় কাজটিতে যুক্ত থাকেন জনপ্রতিনিধি, প্রশাসনের কিছু ব্যক্তি এবং সমাজের প্রভাবশালী ব্যক্তিরা। তাঁরাই আসল কুশীলব।

সরকার প্রকৃত অসহায়, দরিদ্র মানুষের সহায়তার জন্য বিভিন্ন প্রকল্প নিয়ে থাকে। কিন্তু যাঁদের হাতে এসব প্রকল্পের দায়িত্ব থাকে, তাঁরাই যদি নয়-ছয় করেন, তাহলে ভুক্তভোগীরা কোথায় যাবেন? এ জন্য প্রকৃত অপরাধীদের বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো দরকার। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত