মানবর্দ্ধন পাল
শব্দ রহস্যের আকর। সব শব্দের ভেতরেই থাকে কমবেশি রহস্যের ঝাঁপি! শব্দের সৃষ্টিতে, ব্যুৎপত্তিতে, রূপ-রূপান্তরে, কালানুক্রমিক অর্থান্তরে নিহিত থাকে এই রহস্য। কিন্তু শব্দ নিয়ে যে লঙ্কাকাণ্ডও ঘটে, ‘টিপকাণ্ড’ না ঘটলে তা বোঝা যেত না! শব্দ-বাক্য-ভাষার কোনো জাত-ধর্ম-বর্ণ নেই। ভাষা সব ধর্মের, সব জাতির, পৃথিবীর সব মানুষের। ভাষার কোনো ধর্ম নেই। পৃথিবীর সব ভাষার ওপরই মানবজাতির সমান অধিকার। কিন্তু কূপমণ্ডূকতায় আমরা ভাষাকে বৃত্তাবদ্ধ করে ফেলি ছোট ছোট গণ্ডিতে। জল-পানি, মাংস-গোশত, স্নান-গোসল নিয়ে আমরা এন্তার তর্ক-বিবাদ করেছি। শব্দের শরীরে সংখ্যাগরিষ্ঠের ধর্মের আলখাল্লা পরিয়েছি, কিন্তু কালের বিচারে তা ছিল সাময়িক খোলসমাত্র। তাই টিপ নিয়ে সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ডও এ দেশে মৌলবাদের সঙ্গে মুক্তবুদ্ধির সাংস্কৃতিক সংগ্রামেরই অংশ।
আবহমানকাল থেকে ‘টিপ’ আমাদের চৌদ্দ পুরুষের পরিচিত শব্দ। তাই প্রাচীনকালের লৌকিক ছড়ায় পাই: ‘আয় আয় চাঁদমামা টিপ দিয়ে যা/ চাঁদের কপালে চাঁদ টিপ দিয়ে যা...’। শৈশবে নজরুলের ‘প্রভাতি’ কবিতায়ও পড়েছি, ‘আলসে নয় সে ওঠে রোজ সকালে/ রোজ তাই চাঁদা ভাই টিপ দেয় কপালে...’।
প্রাচীনকাল থেকে ধর্মনির্বিশেষে সব শিশুকে কুনজর থেকে এড়াতে কপালে কালো টিপ দেওয়ার প্রথা বাঙালিসমাজে প্রচলিত। আমরা কেবল কপালে টিপ পরি না; মুখ টিপে হাসি, চোখ টিপে ও গায়ে আঙুল টিপে সংকেত দিই। টর্চলাইটকে টিপবাতি বলি, টিউবওয়েলকে টিপকল বলি। আঙুলের ডগার ছাপকে বলি টিপসই। খাবার আলুনি হলে এক টিপ লবণ চাই। টিপের দ্বিত্ব প্রয়োগও করি। টিপটিপ বৃষ্টিতে কর্দমাক্ত পথে পা টিপে টিপে চলি। সেজেগুজে ‘টিপটপ’ থাকতে কে না পছন্দ করে! আমরা টিপ পরি আবার নানা রকম ‘টিপস’ও পড়ি। টিপ বাঙালির প্রসাধন ও সৌন্দর্যচর্চারই আবহমানকালের অঙ্গ। নারীরা পরেন, বাউল-বৈষ্ণব এবং সাধকেরাও পরেন। পোশাকের সঙ্গে টিপের সমন্বয় আধুনিক রূপচর্চার অঙ্গ। রং ও আকার-আকৃতির তফাত থাকলেও টিপ মূলত সৌন্দর্যচেতনারই প্রতীক। হিন্দু সধবা নারীদের সিঁদুরের টিপ কেবল বিবাহিতার চিহ্ন—সমাজতাত্ত্বিক দৃষ্টিতে যা রজঃস্বলা হওয়ার প্রতীক। ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্ অবিভাজ্য বাঙালি জাতিসত্তার স্বরূপ সম্পর্কে ১৯৪৯ সালে পূর্ব পাকিস্তান সাহিত্য সম্মেলনে মূল সভাপতির ভাষণে বলেছিলেন: ‘আমরা হিন্দু বা মুসলমান যেমন সত্য, তার চেয়েও বেশি সত্য আমরা বাঙালি।...মা প্রকৃতি নিজের হাতে আমাদের চেহারায় ও ভাষায় বাঙালিত্বের এমন ছাপ মেরে দিয়েছেন যে মালা-তিলক-টিকিতে কিংবা টুপি-দাড়ি-লুঙ্গিতে ঢাকার জো-টি নেই।’
‘টিপ’ বিশেষ্য বা নামপদ। অভিধান বলছে, সংস্কৃত টিপ্, বা হিন্দি ‘টীপ’ কিংবা প্রাকৃত ‘টিপ্পি’ থেকে টিপ শব্দটি বাংলায় এসেছে। অভিধানে শব্দটির একাধিক ভুক্তি আছে। বহু অর্থে ও বিচিত্র ভাব প্রকাশে আমরা টিপ শব্দটি ব্যবহার করি। মহাজন কবি-লেখকদের দোহাই দিয়ে টিপ শব্দটির প্রয়োগ:
টিপের সরলার্থগুলো হচ্ছে: কপালের ফোঁটা, তিলক, টিকা, বুড়ো আঙুলের ছাপ, দুই আঙুলের অগ্রভাগ দিয়ে চেপে রাখা যায় এমন পরিমাণ, লক্ষ্য, নিশানা, গুপ্ত সংকেত, ভাংচি, হোটেল-রেস্তোরাঁর পরিচারককে দেওয়া বকশিশ ইত্যাদি।
টিপের এত সমাহার আমাদের জাতীয় কবি নজরুলের রচনায়! তবে কি তাঁর রচনা নিষিদ্ধ হবে এই দেশে?
মানবর্দ্ধন পাল, গ্রন্থকার, অবসরপ্রাপ্ত কলেজশিক্ষক
শব্দ রহস্যের আকর। সব শব্দের ভেতরেই থাকে কমবেশি রহস্যের ঝাঁপি! শব্দের সৃষ্টিতে, ব্যুৎপত্তিতে, রূপ-রূপান্তরে, কালানুক্রমিক অর্থান্তরে নিহিত থাকে এই রহস্য। কিন্তু শব্দ নিয়ে যে লঙ্কাকাণ্ডও ঘটে, ‘টিপকাণ্ড’ না ঘটলে তা বোঝা যেত না! শব্দ-বাক্য-ভাষার কোনো জাত-ধর্ম-বর্ণ নেই। ভাষা সব ধর্মের, সব জাতির, পৃথিবীর সব মানুষের। ভাষার কোনো ধর্ম নেই। পৃথিবীর সব ভাষার ওপরই মানবজাতির সমান অধিকার। কিন্তু কূপমণ্ডূকতায় আমরা ভাষাকে বৃত্তাবদ্ধ করে ফেলি ছোট ছোট গণ্ডিতে। জল-পানি, মাংস-গোশত, স্নান-গোসল নিয়ে আমরা এন্তার তর্ক-বিবাদ করেছি। শব্দের শরীরে সংখ্যাগরিষ্ঠের ধর্মের আলখাল্লা পরিয়েছি, কিন্তু কালের বিচারে তা ছিল সাময়িক খোলসমাত্র। তাই টিপ নিয়ে সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ডও এ দেশে মৌলবাদের সঙ্গে মুক্তবুদ্ধির সাংস্কৃতিক সংগ্রামেরই অংশ।
আবহমানকাল থেকে ‘টিপ’ আমাদের চৌদ্দ পুরুষের পরিচিত শব্দ। তাই প্রাচীনকালের লৌকিক ছড়ায় পাই: ‘আয় আয় চাঁদমামা টিপ দিয়ে যা/ চাঁদের কপালে চাঁদ টিপ দিয়ে যা...’। শৈশবে নজরুলের ‘প্রভাতি’ কবিতায়ও পড়েছি, ‘আলসে নয় সে ওঠে রোজ সকালে/ রোজ তাই চাঁদা ভাই টিপ দেয় কপালে...’।
প্রাচীনকাল থেকে ধর্মনির্বিশেষে সব শিশুকে কুনজর থেকে এড়াতে কপালে কালো টিপ দেওয়ার প্রথা বাঙালিসমাজে প্রচলিত। আমরা কেবল কপালে টিপ পরি না; মুখ টিপে হাসি, চোখ টিপে ও গায়ে আঙুল টিপে সংকেত দিই। টর্চলাইটকে টিপবাতি বলি, টিউবওয়েলকে টিপকল বলি। আঙুলের ডগার ছাপকে বলি টিপসই। খাবার আলুনি হলে এক টিপ লবণ চাই। টিপের দ্বিত্ব প্রয়োগও করি। টিপটিপ বৃষ্টিতে কর্দমাক্ত পথে পা টিপে টিপে চলি। সেজেগুজে ‘টিপটপ’ থাকতে কে না পছন্দ করে! আমরা টিপ পরি আবার নানা রকম ‘টিপস’ও পড়ি। টিপ বাঙালির প্রসাধন ও সৌন্দর্যচর্চারই আবহমানকালের অঙ্গ। নারীরা পরেন, বাউল-বৈষ্ণব এবং সাধকেরাও পরেন। পোশাকের সঙ্গে টিপের সমন্বয় আধুনিক রূপচর্চার অঙ্গ। রং ও আকার-আকৃতির তফাত থাকলেও টিপ মূলত সৌন্দর্যচেতনারই প্রতীক। হিন্দু সধবা নারীদের সিঁদুরের টিপ কেবল বিবাহিতার চিহ্ন—সমাজতাত্ত্বিক দৃষ্টিতে যা রজঃস্বলা হওয়ার প্রতীক। ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্ অবিভাজ্য বাঙালি জাতিসত্তার স্বরূপ সম্পর্কে ১৯৪৯ সালে পূর্ব পাকিস্তান সাহিত্য সম্মেলনে মূল সভাপতির ভাষণে বলেছিলেন: ‘আমরা হিন্দু বা মুসলমান যেমন সত্য, তার চেয়েও বেশি সত্য আমরা বাঙালি।...মা প্রকৃতি নিজের হাতে আমাদের চেহারায় ও ভাষায় বাঙালিত্বের এমন ছাপ মেরে দিয়েছেন যে মালা-তিলক-টিকিতে কিংবা টুপি-দাড়ি-লুঙ্গিতে ঢাকার জো-টি নেই।’
‘টিপ’ বিশেষ্য বা নামপদ। অভিধান বলছে, সংস্কৃত টিপ্, বা হিন্দি ‘টীপ’ কিংবা প্রাকৃত ‘টিপ্পি’ থেকে টিপ শব্দটি বাংলায় এসেছে। অভিধানে শব্দটির একাধিক ভুক্তি আছে। বহু অর্থে ও বিচিত্র ভাব প্রকাশে আমরা টিপ শব্দটি ব্যবহার করি। মহাজন কবি-লেখকদের দোহাই দিয়ে টিপ শব্দটির প্রয়োগ:
টিপের সরলার্থগুলো হচ্ছে: কপালের ফোঁটা, তিলক, টিকা, বুড়ো আঙুলের ছাপ, দুই আঙুলের অগ্রভাগ দিয়ে চেপে রাখা যায় এমন পরিমাণ, লক্ষ্য, নিশানা, গুপ্ত সংকেত, ভাংচি, হোটেল-রেস্তোরাঁর পরিচারককে দেওয়া বকশিশ ইত্যাদি।
টিপের এত সমাহার আমাদের জাতীয় কবি নজরুলের রচনায়! তবে কি তাঁর রচনা নিষিদ্ধ হবে এই দেশে?
মানবর্দ্ধন পাল, গ্রন্থকার, অবসরপ্রাপ্ত কলেজশিক্ষক
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
৩ দিন আগেপাকিস্তানে ভারতের হামলার সমালোচনা করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। চীনও এই হামলাকে ‘দুঃখজনক’ বলে অভিহিত করেছে। উদ্বেগ জানিয়েছে জাতিসংঘও। উত্তেজনা যেন আরও না বাড়ে, সে জন্য দুই পক্ষকে সংযত থাকার আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ, ফ্রান্সসহ বিভিন্ন দেশ। এদিকে ভারতের অবস্থানকে সমর্থন করেছে...
৩ দিন আগেভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলা নিয়ে দুই চিরবৈরী প্রতিবেশীর মধ্যে উত্তেজনার পারদ ক্রমেই চড়ছিল। তা তুঙ্গে উঠল এবার পাকিস্তানের ভূখণ্ডে ভারতের ‘অপারেশন সিঁদুর’ নামের ক্ষেপণাস্ত্র ও বিমান হামলা দিয়ে। পাশাপাশি সীমান্তেও দুই দেশের সামরিক বাহিনীর মধ্যে ব্যাপক গোলাগুলি হয়েছে...
৪ দিন আগেঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লা এলাকায় যাত্রীবাহী বাসে ডাকাতি বেড়েই চলছে। এ কারণে চালক ও যাত্রীদের কাছে আতঙ্কের নাম হয়ে উঠছে এই সড়ক। ডাকাতির শিকার বেশি হচ্ছেন প্রবাসফেরত লোকজন। ডাকাতেরা অস্ত্র ঠেকিয়ে লুট করে নিচ্ছে সর্বস্ব। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়েও ঘটছে ডাকাতির ঘটনা।
০২ মার্চ ২০২৫