Ajker Patrika

সুফিয়া কামাল

সম্পাদকীয়
সুফিয়া কামাল

হাতেম তাইয়ের গল্প শুনে রূপবতী হাসনা বানুর কথা জেনেছিলেন সুফিয়া কামালের নানি। তাই জন্মের আগেই সুফিয়ার নাম ঠিক হয়ে যায়—হাসনা বানু। পরিবারের সবাই এ নামেই ডাকতেন তাঁকে। তবে সুফিয়া নামটা নানার দেওয়া, আর এ নামেই পরে পরিচিত হন তিনি।

১৯১১ সালের ২০ জুন জন্ম নেওয়া সুফিয়া কামাল বড় হন নানাবাড়িতে। কিশোরী সুফিয়ার বিয়েও হয় মামাতো ভাই সৈয়দ নেহাল হোসেনের সঙ্গে। নেহাল ছিলেন উদার। তিনি রক্ষণশীল পরিবারে বেড়ে ওঠা স্ত্রীকে সাহিত্যচর্চা ও সমাজসেবায় উদ্বুদ্ধ করেন।

পরিবারে উর্দু ভাষার ব্যবহার থাকলেও মায়ের কাছ থেকে বাংলাটা শিখে নিয়েছিলেন সুফিয়া কামাল। বড় মামার বিরাট লাইব্রেরি থেকে বই পড়ার সুযোগ হাতছাড়া করেননি। নেহালও তাঁকে সাহায্য করতেন। সাহিত্য ও সমসাময়িক পত্রিকার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন সুফিয়াকে। এভাবেই ধীরে ধীরে সুফিয়া কামাল বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে আগ্রহী হয়ে ওঠেন। সাহিত্যচর্চার ফলে তাঁর সচেতন মন নারীদের জন্যও কাজ করতে ব্রতী হয়।

মাত্র ১৫ বছর বয়সে তাঁর প্রথম কবিতা ‘বাসন্তী’ প্রকাশিত হয় সওগাত পত্রিকায়। দ্রুতই তিনি নজরে আসেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম, বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন, মোহাম্মদ নাসিরউদ্দিন প্রমুখের। তাঁদের প্রভাব ও সহযোগিতায় তিনি সাহিত্যের পথে এগিয়ে যেতে থাকেন।

লীলা রায়ের আহ্বানে তিনি সমাজকল্যাণের উচ্চতর ধাপে এগিয়ে যান। জড়িয়ে পড়েন ভাষা আন্দোলন, গণ-আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধে। মুক্তিকামী মানুষের আন্দোলনকে তিনি তুলে ধরেছিলেন তাঁর কবিতায়, লেখায়। তাই তো তাঁর উপাধি ‘জননী সাহসিকা’।

কাব্যগ্রন্থ ছাড়াও সুফিয়া কামাল লিখেছেন গদ্যগ্রন্থ এবং ক্ষুদ্র উপন্যাস। তাঁর আত্মজীবনীমূলক রচনা ‘একালে আমাদের কাল’। তাঁর লেখা ‘একাত্তরের ডায়েরী’ থেকে জানা যায় মুক্তিযুদ্ধের কথা।

নেহালের আকস্মিক মৃত্যুর পর তিনি কামালউদ্দিন আহমেদের সঙ্গে জীবন শুরু করেন। ১৯৯৯ সালের ২০ নভেম্বর তাঁর জীবনের অবসান হয়। আমৃত্যু তিনি সংগ্রাম করে গেছেন সাম্প্রদায়িকতা ও মৌলবাদের বিপক্ষে, মুক্তবুদ্ধির পক্ষে। তাই পাকিস্তানের দেওয়া জাতীয় পুরস্কার ‘তঘমা-ই-ইমতিয়াজ’ বর্জন করতেও দ্বিধা করেননি। অর্জন করেছেন বাংলা একাডেমি পুরস্কার, বেগম রোকেয়া পদক, একুশে পদক ইত্যাদি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত