Ajker Patrika

জসীম উদ্দীন মণ্ডল

সম্পাদকীয়
জসীম উদ্দীন মণ্ডল

বাবার রেলের চাকরিতে ১৩ টাকা বেতনে সংসারে ঠিকমতো অন্ন-বস্ত্রের ব্যবস্থা হতো না। শৈশবে নিজের ঘরে দারিদ্র্য দেখেছেন। আর কৈশোরে দেখেছেন মানুষের ‘আজাদী’র জন্য লড়াই। তাই তিনি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে সৈনিক হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন। এভাবে তিনি জীবন ঘষে আগুনের মতো প্রজ্বালিত হয়ে জনমানুষের মুক্তির আন্দোলনে যুক্ত হয়েছেন। পরিবারে দারিদ্র্যের কারণে বেশি দূর পড়াশোনা করতে পারেননি। কিন্তু রাজনীতির প্রয়োজনে স্বশিক্ষিত হয়েছেন।

১৯৪০ সালে পশ্চিম বাংলার শিয়ালদহে ১৫ টাকা বেতনে রেলের চাকরি শুরু করেন। তাঁর কাজ ছিল ট্রেনের ইঞ্জিনের বয়লারে কয়লা ভরা। কাজটি কঠিনই ছিল। জীবনের ভাগ্য স্বউদ্যোগে যে নির্মাণ করতে হয়, সেই বোধ জাগ্রত হয়েছে বাস্তব জীবনের কশাঘাতে এবং রাজনীতি করতে গিয়ে। তাই রাজনীতি হয়ে ওঠে তাঁর কাছে জীবনের বড় ঠিকানা। এরপর তিনি মার্ক্সবাদে দীক্ষিত হন। ১৯৪০ সালে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির সদস্যপদ লাভ করেন।

১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর জসীম মণ্ডল পার্বতীপুরে বদলি হয়ে আসেন। ১৯৪৯ সালে রেলের রেশনে চালের পরিবর্তে খুদ (চালের কুঁড়া) সরবরাহ করলে রেল শ্রমিক ইউনিয়নের ‘খুদ স্টাইকের’ অপরাধে তাঁকেসহ ছয় নেতার বিরুদ্ধে হুলিয়া জারি হয়। এরপর পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করে। এ কারণে রেল কর্তৃপক্ষ তাঁকে চাকরিচ্যুত করে। ১৯৫৪ সালে তিনি মুক্তি পান। এরপর সব মিলিয়ে তিনি ১৭ বছর জেলবন্দী ছিলেন।

একাত্তরের স্বাধীনতাযুদ্ধে ভারতে অবস্থান করে তিনি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে ভূমিকা রাখেন।

আজীবন নিজে আর্থিকভাবে অসচ্ছল থেকেও নিজের ভাগ্যবদলের জন্য কখনো চেষ্টা করেননি। সরকারের কাছ থেকে বন্দোবস্ত পাওয়া একখণ্ড জায়গায় তিনি বসবাস করতেন। বাড়ির পাশেই নিজ উদ্যোগে ১৯৯৬ সালে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। একদম সাধারণ মানুষের মুখের ভাষা ব্যবহার করে অসাধারণ বক্তৃতা দিয়ে মানুষকে আকর্ষণ করার ক্ষমতা ছিল তাঁর। ২০১৭ সালের ২ অক্টোবর ঢাকায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত