Ajker Patrika

সৌমিত্র না অপু?

সম্পাদকীয়
সৌমিত্র না অপু?

২০০৯ সালে চিকিৎসার জন্য দীর্ঘকাল সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় ছিলেন লন্ডনে। সেখানে শুশ্রূষার পাশাপাশি ঝকঝকে ঢাউস টেলিভিশনে রোজ একটি করে সিনেমা দেখতেন। যে বাড়িতে থাকতেন, সেই বাড়ি মালিক ছিলেন পেশায় চিকিৎসক। একদিন যখন সেই চিকিৎসক অমিত রঞ্জন বিশ্বাস সস্ত্রীক বাড়ি ফিরেছেন, তখন সৌমিত্র কথায় কথায় তাঁদের বললেন, ‘আজকের তারিখটা আমার জীবনে একটা বিশেষ দিন, জানো?’

কথাটা বুঝতে পারলেন না অমিত রঞ্জন বিশ্বাস। বললেন, ‘আজ, মানে ১ মে ২০০৯?’

সৌমিত্র দুদিকে মাথা নাড়লেন। তারপর বললেন, ‘না। ১ মে ১৯৫৯। ৫০ বছর আগে ঠিক এই দিনটিতে মুক্তি পেয়েছিল আমার প্রথম ছবি।’

স্বামী-স্ত্রী দুজনই সোল্লাসে চিৎকার করে উঠলেন, ‘এমন একটা অকেশন আগে বলেননি!’

সৌমিত্র বললেন, ‘আগে বলব, খেয়ালই করিনি কোথা দিয়ে চলে গেল আধখানা শতক। কোন পথে গেল!’

সেদিন অমিত রঞ্জনের বাসায় ডিভিডিতে ‘অপুর সংসার’ সিনেমাটা চালানো হলো। দেখতে দেখতে সৌমিত্রের মনে হলো, কী জানি এই যুবক অপুই বোধ হয় সত্য, আজকের এই বৃদ্ধ পঁচাত্তর পেরোনো সৌমিত্র নয়।

তবে নিজের প্রবীণ লুক নিয়ে কোনো ধরনের আক্ষেপ ছিল না সৌমিত্রের। কোনো গ্লানি ছিল না; বরং তিনি আয়নায় দেখা বৃদ্ধ সৌমিত্রকেই বেশি ভালোবাসতেন।পরে গৌতম ঘোষের দেখা ছবিতে এক দৃষ্টিহীন ব্যক্তির ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। এক লোকের দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী হয়ে যাওয়া নিয়ে সেই সিনেমা। হোমওয়ার্ক করার জন্য বিভিন্ন চক্ষু চিকিৎসকের সঙ্গে তখন কথা বলেছিলেন সৌমিত্র। জেনেছিলেন কোনো চক্ষুষ্মান ব্যক্তি যদি হঠাৎ অন্ধ হয়ে যান এবং বেশ কিছুকাল অন্ধত্বের পরে যদি দৃষ্টি ফিরে আসে, তখন তাঁরা নিজের বদলে যাওয়া চেহারাটা কিছুতেই মানতে পারেন না। যে চেহারাটা ছিল চোখের তারায় আগে, সেটাই তারা খোঁজেন সর্বক্ষণ।

সৌমিত্রর ব্যক্তিগত জীবনে অন্ধত্ব বা দৃষ্টিহীনতা আসেনি, কিন্তু কলকাতা থেকে বহু দূরে অপুর সংসার দেখতে বসে তাঁর মনে হলো, অপুই তো সত্যিকারের সৌমিত্র। 

সূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা, ২৯-১১-২০০৯, পৃষ্ঠা ৪

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

সমাবেশে দলীয় স্লোগান ও জাতীয় সংগীত পরিবেশনে বাধা দেওয়া প্রসঙ্গে এনসিপির বিবৃতি

তোরা যারা রাজাকার, সময় থাকতে বাংলা ছাড়: বাকের মজুমদার

কঠোর হচ্ছে যুক্তরাজ্যের অভিবাসন নীতি, স্থায়ী বসবাসের আবেদনে অপেক্ষা ১০ বছর

চাকরিতে কোটা: সমতলের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর জন্য আসছে সমান সুযোগ

যুদ্ধবিরতি ঘোষণার কারণে এক্সে তোপের মুখে ভারতের পররাষ্ট্রসচিব ও তাঁর মেয়ে

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত