Ajker Patrika

একদিন চলে যাব দূরে বহু দূরে..

আপডেট : ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ০৯: ৫০
একদিন চলে যাব দূরে বহু দূরে..

আমি ভাগ্যবান এমন একটি গান পেয়েছি
কুমার বিশ্বজিৎ, সংগীতশিল্পী

কাওসার ভাইয়ের লেখনী নিয়ে কথা বলার ধৃষ্টতা আমার নেই। এটুকু বলতে পারি, স্বাধীনতা-উত্তর বাংলা আধুনিক গানকে যাঁরা কাব্য, সাহিত্য ও অন্ত্যমিলের এক অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন, কাওসার ভাই তাঁদের অন্যতম। তাঁর গানের মাধ্যমে আমরা অনেক সমৃদ্ধ হয়েছি। অনেকে ভেসেছেন আবেগে, অনেকে উপলব্ধিতে, অনেকে বেদনায়। তাঁর গানের মাধ্যমে সাহস পেয়েছি, শক্তি পেয়েছি আমিও।

একটা হতাশায় আমি ভুগি, তাঁদের মতো মেধাবীদের এই চলে যাওয়ায় আমাদের যে শূন্যস্থান তৈরি হয়, তা পূরণের লোক কবে আসবে? আদৌ কি আসবে? মানুষ মরণশীল। সবাইকে যেতে হবে। আমি অনেক ভাগ্যবান তাঁর ‘যেখানে সীমান্ত তোমার’ গানটা পেয়েছি লাকী ভাইয়ের সুরে। একটা শিল্পীর ক্যারিয়ারে এমন একটি গান পাওয়ার চেয়ে বড় কিছু হতে পারে না।

গানটা আমার গাওয়ার আগেই সৃষ্টি হয়েছে। এটা লাকী আখান্দ্‌ ভাই, ফাহমিদা নবী—তাঁরাও গেয়েছেন। তবে কেন যেন শ্রোতারা আমার গাওয়া একটু বেশি পছন্দ করেছেন। যখনই আমি মঞ্চে গান গাইতে উঠি, প্রতিটি গানের আগে গীতিকার ও সুরকারের নাম বলি। যখনই ‘যেখানে সীমান্ত তোমার’ গানের কথা বলি, যে আওয়াজটা পাই তা শিহরিত করার মতো। এমনকি এই গানটা গাওয়া শুরু করলে, আমাকে বেশিক্ষণ গাইতে হয় না। শ্রোতারাই পুরোটা গায়। সব শ্রেণি-পেশার মানুষ গানটি গাইতে পারেন। গানটি কিন্তু সহজ নয়। অনেক কাব্য, সাহিত্য ও অন্ত্যমিল আছে। তারপরও এটি সবার কাছে পৌঁছেছে।

তিনি আমার খুব ভালো বন্ধু ছিলেন
সামিনা চৌধুরী, সংগীতশিল্পী

ভীষণ জনপ্রিয় গীতিকবির পাশাপাশি উনি একজন বরেণ্য জ্যোতিষও। ছোটবেলায় ‘সাতটি রঙের সাতটি সুর’ নামের শিশুতোষ অনুষ্ঠানে তাঁর গান প্রথম গাই। বড় হয়ে গেয়েছি ‘আমায় ডেকো না’ আর ‘কবিতা পড়ার প্রহর’। কাওসার আহমেদ চৌধুরী ও লাকি আখান্দ্‌ চমৎকার এক গানের জুটি ছিলেন। ওনারা একসঙ্গে আমাদের বাসায় আসতেন। চার-পাঁচ বছর যখন আমার বয়স, তখনই দেখতাম আমাদের বাসায় তাঁদের আসা-যাওয়া। আমি কাওসার মামা ডাকতাম। উনি খুব সুন্দর করে লিখতেন। ওনার হাতের লেখা ভীষণ সুন্দর। কয়েক স্টাইলে লেখার দক্ষতা ছিল। মনে আছে, আমাদের ভাই পঞ্চমের এক জন্মদিনে কার্ড বানানো হলো। আমার মা বললেন, কাওসারকে কার্ড লেখার দায়িত্বটা দিই। উনি এত সুন্দর করে কার্ডগুলোতে লিখেছিলেন!

একটা সময় সেই কাওসার মামা আমার খালাকে পছন্দ করলেন। বিয়ের প্রস্তাব দিলেন এবং সম্পর্কে আমার খালু হলেন। তিনি আমার খুব ভালো একজন বন্ধু ছিলেন। তাঁর লেখা অসংখ্য গান জনপ্রিয় হয়েছে। দেশের খ্যাতিমান শিল্পীরা গেয়েছেন তাঁর গান।

টেলিভিশনের কয়েকটি অনুষ্ঠানে কাওসার মামা ও লাকী চাচা গান করতেন। সেখান থেকে অনেক জনপ্রিয় গান বের হলো। আমারও বের হলো ‘কবিতা পড়ার প্রহর এসেছে’, ‘আমায় ডেকো না ফেরানো যাবে না’-এর মতো গান।

গত কয়েক দিন তাঁকে নিয়ে খুব দুশ্চিন্তায় কেটেছে। আইসিইউতে ছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তিনি আর ফিরলেন না। চলেই গেলেন তাঁর লেখা গানের মতো দূরে, বহু দূরে।

কাওসার আহমেদ চৌধুরীর লেখা জনপ্রিয় কিছু গান

  • যেখানে সীমান্ত (কুমার বিশ্বজিৎ)
  • কবিতা পড়ার প্রহর (সামিনা চৌধুরী)
  • রুপালি গিটার ফেলে (আইয়ুব বাচ্চু)
  • আজ এই বৃষ্টির কান্না (নিয়াজ মোহাম্মদ চৌধুরী)
  • আমায় ডেকো না (সামিনা চৌধুরী/ লাকী আখন্দ্)
  • মৌসুমী (ফিডব্যাক)
  • এলোমেলো (নাফিস কামাল)

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

খালদূষণকারী কারখানা পেল পরিবেশবান্ধব পুরস্কার

ঢাকার সঙ্গে সম্পর্ক মেরামতে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে ভারতের সংসদীয় কমিটির দীর্ঘ বৈঠক

ইস্পাহানে বাংকার বাস্টার মারেনি যুক্তরাষ্ট্র, অক্ষত ৬০ শতাংশ সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম

গোষ্ঠীস্বার্থে বহু মানুষের স্বপ্ন নষ্ট করেছে এই প্ল্যাটফর্ম: দায়িত্ব ছেড়ে উমামা ফাতেমার পোস্ট

অপারেশন রেড ওয়েডিং ও নার্নিয়া: ইরানের সেনা কর্মকর্তা ও পরমাণুবিজ্ঞানীদের হত্যায় ইসরায়েলি অভিযান

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত