রজত কান্তি রায়, ঢাকা
দিনটি ছিল বুধবার। শুভক্ষণে সোয়া পাঁচ শ বছরের ইতিহাস থেকে উঠে আসা চরিত্র চান্দ সওদাগর চলেছেন পুত্রবধূ আনতে। সঙ্গে শত-সহস্র মানুষসহ বিশাল লটবহর। উজানি নগরের আকাশে-বাতাসে তখন অদ্ভুত আনন্দ গীত। পাটের শাড়ি পরে বসে আছে ‘ইন্দ্রের অপ্সরী’ বেহুলা। তিথিমতো সে বিয়ে হয়ে গেল। তারপর খাওয়াদাওয়া। কিন্তু কী রান্না হয়েছিল কনে বেহুলার বাড়িতে বর লখিন্দরের জন্য?
চৌদ্দ পদের শাকসবজির নিরামিষ, বারো ধরনের মাছের বারো পদের তরকারি, পাঁচ বা ছয় রকমের মাংস, প্রায় দশ পদের পিঠা ও মিষ্টিজাতীয় খাবারসহ চল্লিশটির বেশি পদ রান্না হয়েছিল সেদিন লখিন্দরের জন্য। সেসব খাবারের অনেকগুলোই কালের গণ্ডি পেরিয়ে এখনো আমাদের রসনা তৃপ্ত করেই চলেছে। কবি নারায়ণ দেব যত্ন করে সেসব খাবারের কথা লিখে গেছেন।
নিরামিষ
মুগ দিয়া মুগ দাইল আর মুগের বড়ি।
ঘৃতে ভাজিয়া কত তুলিল সিঙ্গাড়ি।। […]
মউয়া আলু কথ কাচা কাচা কাটী।
মরিচ রান্ধিল চৈ দিয়া বাটী।।
বেহুলার বিয়ের নিরামিষ অংশের তালিকা করলে পাওয়া যায়, ঘি কিংবা তেলে ভাজা বেতের কচি আগা, বারোমাসি বেগুন ভাজা, তেলে ভাজা পাটশাক, ঘিয়ে ভাজা হেলেঞ্চা শাক, ভাজা কচি লাউশাক, মুগডাল, ঘিয়ে ভাজা মুগের বড়ি, তিলুয়া, তিলের বড়া, তিল দিয়ে রান্না করা মিষ্টিকুমড়া, মেটে আলুর তরকারি, মরিচবাটা দিয়ে চই, পাকা কলার অম্বল বা টক, আদা দিয়ে রান্না করা শুক্তো। প্রায় পনেরোটি আলাদা নিরামিষ খাবারের কথা পাওয়া যায় কবির বর্ণনায়। এই সব খাবারের বেশিরভাগই এখনো আমাদের খাদ্যতালিকায় আছে। কিছু হারিয়ে গেছে কালের গহ্বরে।
আমিষ
ভাজিয়া তুলিল কথ চিতলের কোল।
মাগুর মৎস্য দিয়া রান্ধে মরিচের ঝোল।।
চিতল, মাগুর, কই, মহাশোল, ইচা বা ছোট চিংড়ি, রুই, কাতলা, শোল মাছের পোনা, পাবদা, বোয়াল, খলশে ও ইলিশ—এসব মাছের কথা পাওয়া যায় বেহুলার বিয়ের খাবারের তালিকায়। আর রান্না করা তরকারিগুলো হলো, চিতলের কোল বা চিতলের পেটি ভাজা, মরিচ দিয়ে মাগুর মাছের ঝোল, কই মাছ ভাজা, মহাশোলের অম্বল, ইচার রসলাস, রুই মাছের মাথা দিয়ে মাষকলাইয়ের ডাল, আম দিয়ে আম্র কাতল, পাবদা মাছ দিয়ে শুক্তো, আমচুর দিয়ে শোল মাছের পোনা, বোয়াল মাছের ঝাঁটি, খলশের অম্বল আর ইলিশের ভাজা।
খেয়াল করলে দেখবেন, মরিচ দিয়ে মাগুর মাছের ঝোল, কই মাছ ভাজা, রুই মাছের মাথা দিয়ে মাষকলাইয়ের ডাল আর ইলিশ মাছ ভাজার মতো কিছু খাবার সোয়া পাঁচ শ বছর পরে এখনো আমাদের রসনা তৃপ্ত করেই চলেছে।
খাসির মাংস তোলে ঘৃতেতে ছাড়িয়া।
হরিণের মাংস কথ অম্বল রান্ধিয়া।। […]
খাসি, হরিণ, মেষ বা ভেড়া, কবুতর, কচ্ছপ—এ পাঁচটি প্রাণীর মাংস রান্না হয়েছিল লখিন্দরের জন্য। একটি বিষয় বেশ বোঝা যায়, সে সময় তরকারি রান্না হতো তেল ও ঘিয়ে। তেলের মধ্যে কটু তেল, অর্থাৎ সরিষার তেল ছিল বহুল ব্যবহৃত। সরিষার তেল, তিল বা তিসির তেলের আলাদা আলাদা ব্যবহারের উল্লেখ পাওয়া যায় মধ্যযুগের বিভিন্ন কাব্যে। তিল বা তিসির ব্যবহার কিছুটা কমে গেলেও সরিষার তেল ও ঘিয়ের ব্যবহার এখনো আমাদের হেঁশেলে রয়েছে যথেষ্ট পরিমাণে।
পিঠা
আলুবড়া চন্দ্রপুলি অদ্ভুত কাতলা।
ঘৃতে ভাজিয়া তোলে জত মনহরা।। […]
লখিন্দরের জন্য বিভিন্ন ধরনের পিঠাও ভাজা হয়েছিল। সেগুলোর মধ্যে আছে চন্দ্রপুলি, মনহরা, দুধ ক্ষীরশা, লাল বড়া, চন্দ্রকাতি, রুটি পিঠা, দুধ চুহি ইত্যাদি।
রান্নাবান্না শেষ হলে ‘চলিল সুন্দর লখাই ভোজন করিবারে।’
প্রথমে আনিয়া দিল তলিত অষ্টদস।
ভোজন করে লক্ষিন্দর পায় বর রস।। […]
নারায়ণ দেব খাবার পরিবেশনের একটা রূপরেখা আমাদের সামনে তুলে ধরেছেন। লখিন্দরের পাতে প্রথমে দেওয়া হয়েছিল তলিত, অর্থাৎ তেলে ভাজা শাক। তারপর সুখত মানে শুক্তো, এরপর দেওয়া হয়েছে মরিচ, অর্থাৎ ঝাল খাবার। সেগুলো ঝাল-মসলায় রান্না করা বহু ধরনের মাছ ও মাংস। মাছ-মাংসের পর পাতে পড়েছে অম্বল, তারপর পিঠা, মিষ্টি ও দুধজাত খাবার। সব শেষে মুখশুদ্ধি হিসেবে পান-সুপারি।
নারায়ণ দেব পূর্ববঙ্গ তথা এই অঞ্চলের মানুষ। ফলে তাঁর লেখায় এ দেশের খাবারের কথা, সামাজিকতার কথাই এসেছে ঘুরেফিরে। পাঁচ শ বছরেরও বেশি সময় আগে লিখে রাখা এসব খাবার এখনো আমাদের বিভিন্ন অঞ্চলে খাওয়া হয় কোনো না কোনোভাবে।
লখিন্দরের জন্য পাবা মাছ রান্না করা হয়েছিল। এই পাবা মাছের আধুনিক নাম পাবদা। এখন পাওয়া যাচ্ছে পাবদা মাছ। একটু ঝোল করে খেতে দারুণ। আজ শুক্রবার হয়ে যাক পাবদা মাছের ঝোল।
সহায়তা: পদ্মাপুরাণ, কবি নারায়ণ দেব, শ্রীতমোনাশ চন্দ্র
দাশগুপ্ত সম্পাদিত। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়, ১৯৪৭
দিনটি ছিল বুধবার। শুভক্ষণে সোয়া পাঁচ শ বছরের ইতিহাস থেকে উঠে আসা চরিত্র চান্দ সওদাগর চলেছেন পুত্রবধূ আনতে। সঙ্গে শত-সহস্র মানুষসহ বিশাল লটবহর। উজানি নগরের আকাশে-বাতাসে তখন অদ্ভুত আনন্দ গীত। পাটের শাড়ি পরে বসে আছে ‘ইন্দ্রের অপ্সরী’ বেহুলা। তিথিমতো সে বিয়ে হয়ে গেল। তারপর খাওয়াদাওয়া। কিন্তু কী রান্না হয়েছিল কনে বেহুলার বাড়িতে বর লখিন্দরের জন্য?
চৌদ্দ পদের শাকসবজির নিরামিষ, বারো ধরনের মাছের বারো পদের তরকারি, পাঁচ বা ছয় রকমের মাংস, প্রায় দশ পদের পিঠা ও মিষ্টিজাতীয় খাবারসহ চল্লিশটির বেশি পদ রান্না হয়েছিল সেদিন লখিন্দরের জন্য। সেসব খাবারের অনেকগুলোই কালের গণ্ডি পেরিয়ে এখনো আমাদের রসনা তৃপ্ত করেই চলেছে। কবি নারায়ণ দেব যত্ন করে সেসব খাবারের কথা লিখে গেছেন।
নিরামিষ
মুগ দিয়া মুগ দাইল আর মুগের বড়ি।
ঘৃতে ভাজিয়া কত তুলিল সিঙ্গাড়ি।। […]
মউয়া আলু কথ কাচা কাচা কাটী।
মরিচ রান্ধিল চৈ দিয়া বাটী।।
বেহুলার বিয়ের নিরামিষ অংশের তালিকা করলে পাওয়া যায়, ঘি কিংবা তেলে ভাজা বেতের কচি আগা, বারোমাসি বেগুন ভাজা, তেলে ভাজা পাটশাক, ঘিয়ে ভাজা হেলেঞ্চা শাক, ভাজা কচি লাউশাক, মুগডাল, ঘিয়ে ভাজা মুগের বড়ি, তিলুয়া, তিলের বড়া, তিল দিয়ে রান্না করা মিষ্টিকুমড়া, মেটে আলুর তরকারি, মরিচবাটা দিয়ে চই, পাকা কলার অম্বল বা টক, আদা দিয়ে রান্না করা শুক্তো। প্রায় পনেরোটি আলাদা নিরামিষ খাবারের কথা পাওয়া যায় কবির বর্ণনায়। এই সব খাবারের বেশিরভাগই এখনো আমাদের খাদ্যতালিকায় আছে। কিছু হারিয়ে গেছে কালের গহ্বরে।
আমিষ
ভাজিয়া তুলিল কথ চিতলের কোল।
মাগুর মৎস্য দিয়া রান্ধে মরিচের ঝোল।।
চিতল, মাগুর, কই, মহাশোল, ইচা বা ছোট চিংড়ি, রুই, কাতলা, শোল মাছের পোনা, পাবদা, বোয়াল, খলশে ও ইলিশ—এসব মাছের কথা পাওয়া যায় বেহুলার বিয়ের খাবারের তালিকায়। আর রান্না করা তরকারিগুলো হলো, চিতলের কোল বা চিতলের পেটি ভাজা, মরিচ দিয়ে মাগুর মাছের ঝোল, কই মাছ ভাজা, মহাশোলের অম্বল, ইচার রসলাস, রুই মাছের মাথা দিয়ে মাষকলাইয়ের ডাল, আম দিয়ে আম্র কাতল, পাবদা মাছ দিয়ে শুক্তো, আমচুর দিয়ে শোল মাছের পোনা, বোয়াল মাছের ঝাঁটি, খলশের অম্বল আর ইলিশের ভাজা।
খেয়াল করলে দেখবেন, মরিচ দিয়ে মাগুর মাছের ঝোল, কই মাছ ভাজা, রুই মাছের মাথা দিয়ে মাষকলাইয়ের ডাল আর ইলিশ মাছ ভাজার মতো কিছু খাবার সোয়া পাঁচ শ বছর পরে এখনো আমাদের রসনা তৃপ্ত করেই চলেছে।
খাসির মাংস তোলে ঘৃতেতে ছাড়িয়া।
হরিণের মাংস কথ অম্বল রান্ধিয়া।। […]
খাসি, হরিণ, মেষ বা ভেড়া, কবুতর, কচ্ছপ—এ পাঁচটি প্রাণীর মাংস রান্না হয়েছিল লখিন্দরের জন্য। একটি বিষয় বেশ বোঝা যায়, সে সময় তরকারি রান্না হতো তেল ও ঘিয়ে। তেলের মধ্যে কটু তেল, অর্থাৎ সরিষার তেল ছিল বহুল ব্যবহৃত। সরিষার তেল, তিল বা তিসির তেলের আলাদা আলাদা ব্যবহারের উল্লেখ পাওয়া যায় মধ্যযুগের বিভিন্ন কাব্যে। তিল বা তিসির ব্যবহার কিছুটা কমে গেলেও সরিষার তেল ও ঘিয়ের ব্যবহার এখনো আমাদের হেঁশেলে রয়েছে যথেষ্ট পরিমাণে।
পিঠা
আলুবড়া চন্দ্রপুলি অদ্ভুত কাতলা।
ঘৃতে ভাজিয়া তোলে জত মনহরা।। […]
লখিন্দরের জন্য বিভিন্ন ধরনের পিঠাও ভাজা হয়েছিল। সেগুলোর মধ্যে আছে চন্দ্রপুলি, মনহরা, দুধ ক্ষীরশা, লাল বড়া, চন্দ্রকাতি, রুটি পিঠা, দুধ চুহি ইত্যাদি।
রান্নাবান্না শেষ হলে ‘চলিল সুন্দর লখাই ভোজন করিবারে।’
প্রথমে আনিয়া দিল তলিত অষ্টদস।
ভোজন করে লক্ষিন্দর পায় বর রস।। […]
নারায়ণ দেব খাবার পরিবেশনের একটা রূপরেখা আমাদের সামনে তুলে ধরেছেন। লখিন্দরের পাতে প্রথমে দেওয়া হয়েছিল তলিত, অর্থাৎ তেলে ভাজা শাক। তারপর সুখত মানে শুক্তো, এরপর দেওয়া হয়েছে মরিচ, অর্থাৎ ঝাল খাবার। সেগুলো ঝাল-মসলায় রান্না করা বহু ধরনের মাছ ও মাংস। মাছ-মাংসের পর পাতে পড়েছে অম্বল, তারপর পিঠা, মিষ্টি ও দুধজাত খাবার। সব শেষে মুখশুদ্ধি হিসেবে পান-সুপারি।
নারায়ণ দেব পূর্ববঙ্গ তথা এই অঞ্চলের মানুষ। ফলে তাঁর লেখায় এ দেশের খাবারের কথা, সামাজিকতার কথাই এসেছে ঘুরেফিরে। পাঁচ শ বছরেরও বেশি সময় আগে লিখে রাখা এসব খাবার এখনো আমাদের বিভিন্ন অঞ্চলে খাওয়া হয় কোনো না কোনোভাবে।
লখিন্দরের জন্য পাবা মাছ রান্না করা হয়েছিল। এই পাবা মাছের আধুনিক নাম পাবদা। এখন পাওয়া যাচ্ছে পাবদা মাছ। একটু ঝোল করে খেতে দারুণ। আজ শুক্রবার হয়ে যাক পাবদা মাছের ঝোল।
সহায়তা: পদ্মাপুরাণ, কবি নারায়ণ দেব, শ্রীতমোনাশ চন্দ্র
দাশগুপ্ত সম্পাদিত। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়, ১৯৪৭
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১৮ দিন আগেভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫পাকিস্তানে ভারতের হামলার সমালোচনা করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। চীনও এই হামলাকে ‘দুঃখজনক’ বলে অভিহিত করেছে। উদ্বেগ জানিয়েছে জাতিসংঘও। উত্তেজনা যেন আরও না বাড়ে, সে জন্য দুই পক্ষকে সংযত থাকার আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ, ফ্রান্সসহ বিভিন্ন দেশ। এদিকে ভারতের অবস্থানকে সমর্থন করেছে...
০৮ মে ২০২৫