Ajker Patrika

সরকারের সংকেতের অপেক্ষায় খালেদার বিদেশে চিকিৎসা

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
সরকারের সংকেতের অপেক্ষায় খালেদার বিদেশে চিকিৎসা

চিকিৎসার জন্য বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে সরকার বিদেশে পাঠানোর অনুমতি দিতে পারে, এমন ইঙ্গিত মিলছে দল ও সরকারের পক্ষ থেকে। অনুমতি পাওয়ার পরপরই দ্রুত যাতে বিদেশে নির্দিষ্ট হাসপাতালে পাঠানো যায়, সে প্রস্তুতিও নিচ্ছে খালেদা জিয়ার পরিবার।

সরকারের উচ্চ পর্যায়ের একটি সূত্র বলছে, কারাদণ্ড পাওয়া খালেদা জিয়া চিকিৎসার জন্য নির্বাহী আদেশে জেলের বাইরে আছেন। এখন তাঁকে বিদেশে পাঠানোর বিষয়টি নির্ভর করছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সিদ্ধান্তের ওপর। তিনি এ বিষয়ে ইতিবাচক সংকেত দিলে পরবর্তী প্রক্রিয়া শুরু হবে।

তবে যুক্তরাষ্ট্র সফররত প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে গতকাল শুক্রবার পর্যন্ত এমন কোনো সংকেত আসেনি বলে সরকারি একটি সূত্র জানায়। 
অবশ্য আইনমন্ত্রী আনিসুল হক গণমাধ্যমকে বলেছেন, চিকিৎসার জন্য বিদেশে নেওয়ার আবেদনটি যাচাই-বাছাই করে অল্প সময়ের মধ্যে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে।

গত ৯ আগস্ট থেকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন খালেদা জিয়া। গত দুই সপ্তাহের ব্যবধানে তাঁকে তিন দফায় ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) এনে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। সবশেষ গতকাল শুক্রবার বিকেলে তাঁকে আবার সিসিইউতে এনে চিকিৎসা দেওয়া হয়। এদিন রাতে তাঁকে আবারও কেবিনে নেওয়া হয়।

খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক এ জেড এম জাহিদ হোসেন বিষয়টি জানিয়ে বলেছেন, দেশে রেখে খালেদা জিয়ার চিকিৎসা আর সম্ভব নয়। এ জন্য তাঁকে দ্রুত বিদেশের উন্নত চিকিৎসাকেন্দ্রে নেওয়া জরুরি হয়ে পড়েছে।

খালেদা জিয়ার পরিবারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ এক নেতা গতকাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসনের চিকিৎসার জন্য চিকিৎসকেরা সবচেয়ে ভালো মনে করছেন জার্মানিকে। এর পরপরই বিকল্প হিসেবে তাঁরা যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের কথা চিন্তা করছেন। সেই বিষয় বিবেচনায় নিয়ে পরিবারের পক্ষ থেকে ওই সব দেশের হাসপাতালগুলোয় খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। সরকারের কাছ থেকে ইতিবাচক কোনো সাড়া এলেই দ্রুত যাতে বিদেশ পাঠানো যায়, তেমন প্রস্তুতি নিয়ে রাখা হয়েছে।

অন্যদিকে বিদেশে যাওয়ার অনুমতির পরপরই দ্রুততম সময়ে খালেদা জিয়ার ই-পাসপোর্ট এবং যে দেশে তিনি চিকিৎসা নেবেন, সে দেশের ভিসা সংগ্রহের প্রস্তুতিও চলছে। সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হলে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে নির্দিষ্ট দেশে নেওয়া হতে পারে বলে দলের কয়েকজন নেতা জানিয়েছেন।

গত ২৫ সেপ্টেম্বর খালেদা জিয়ার ছোট ভাই বোনের মুক্তি ও বিদেশে চিকিৎসার অনুমতি চেয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেন। মন্ত্রণালয় পরদিনই তা মতামতের জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠায়। এরপর সরকারের পক্ষ থেকে তাঁর পরিবারের কাছে ইতিবাচক কোনো সাড়া আসেনি বলে বিএনপি নেতারা জানান।

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গতকাল বলেছেন, খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিয়ে বিদেশে চিকিৎসার জন্য পাঠাতে হবে। তিনি আশা প্রকাশ করেন, সরকার বাইরে তাঁর চিকিৎসার ব্যবস্থা করে দেবে।

দুর্নীতির মামলায় সাজাপ্রাপ্ত খালেদা জিয়া ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি কারাবন্দী হন। ২০২০ সালের ২৫ মার্চ সরকার নির্বাহী আদেশে সাজা স্থগিত করে শর্ত সাপেক্ষে বাড়িতে থাকার অনুমতি দেয়। এরপর ছয় মাস পরপর তাঁর সাজা স্থগিত করে মুক্তির মেয়াদ বাড়াচ্ছে সরকার। সবশেষ ১২ সেপ্টেম্বর খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিত করে মুক্তির মেয়াদ আরও ছয় মাস বাড়িয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

আদালতের প্রক্রিয়ার বাইরে খালেদা জিয়াকে সরকারি সিদ্ধান্তে বিদেশে চিকিৎসার জন্য পাঠানোর সুযোগ নেই, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান এর আগে সাংবাদিকদের বলেছেন। তবে মন্ত্রীদের এই মতের সঙ্গে দ্বিমত করছেন প্রবীণ আইনজীবীদের অনেকে।

সুপ্রিম কোর্টের প্রবীণ আইনজীবী শাহদীন মালিক বলেন, সরকার ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারা অনুযায়ী নির্বাহী আদেশে শর্ত সাপেক্ষে খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিয়েছে। এ ক্ষেত্রে আদালতের সিদ্ধান্ত প্রয়োজন হয়নি। তাঁকে বিদেশে যাওয়ার অনুমতি দেওয়ার ক্ষেত্রেও সরকার বা খালেদা জিয়ার আদালতের সিদ্ধান্ত চাওয়ার প্রয়োজন নেই।

শাহদীন মালিক বলেন, ৪০১ ধারা অনুযায়ী নির্বাহী আদেশে শর্ত ছাড়াই সাজা মওকুফ করতে পারে। মুক্তিও দেওয়া যেতে পারে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত