জাহীদ রেজা নূর, ঢাকা
একবার দলবলসহ হাঁটতে হাঁটতে রবীন্দ্র-অন্তঃপ্রাণ ওয়াহিদুল হক বলেছিলেন, ‘রবীন্দ্রনাথ আমাদের দেখার চোখ দিয়েছেন।’
কথাটা বুঝতে একটু সময় লেগেছিল। আমরা তো চোখ খুললেই সব দেখতে পাই। তাহলে রবীন্দ্রনাথ এলেন কোথা থেকে? ওয়াহিদুল হক বুঝিয়ে বলেছিলেন, ‘যা দেখি, তা এমনভাবে বর্ণনা করেছেন রবীন্দ্রনাথ যে মনে হয়, আমাদের চোখেই বুঝি দেখছি সেই ছবি। আসলে সেভাবে দেখার জন্য আমাদের মন তো তৈরি করে দিয়েছেন রবীন্দ্রনাথ।’
রবীন্দ্রনাথ জমিদারির দায়িত্ব পেয়েছিলেন বাইশ বছর বয়সে। বিয়ের ঠিক দুই দিন আগে। ১৮৮৩ সালের ৭ নভেম্বর দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর ছোট ছেলেকে সাময়িকভাবে জমিদারি দেখার দায়িত্ব দেন। শুরুতেই জমিদারির সর্বময় কর্তৃত্ব দেননি ছেলেকে। পরীক্ষামূলকভাবে দায়িত্ব পান তিনি, নিষ্ঠা ও সততার মাধ্যমে বাবার বিশ্বাস অর্জন করার পর ১৮৯০ সাল থেকে তিনি পুরোপুরি জমিদারি পরিদর্শনের দায়িত্ব লাভ করেন।
রবীন্দ্রনাথ আগে কোনোদিন সাধারণ মানুষের এত কাছে আসেননি। পূর্ববঙ্গের জমিদারিগুলোয় এসে তিনি সাধারণ মানুষের সঙ্গ পেলেন।
রবীন্দ্রনাথ মূলত স্থায়ী আবাস গড়েছিলেন শিলাইদহে। এখান থেকেই তিনি কুষ্টিয়া, পাবনা এবং রাজশাহীতে ভ্রমণ করেছেন। সাজাদপুর (শাহজাদপুর) ও পতিসরে থেকেছেন কম। সাধারণ মানুষের সংস্পর্শে এসে জীবন সম্পর্কে তাঁর ভাবনা পরিবর্তিত হয়েছে।
ওয়াহিদুল হক যে বলেছিলেন, ‘রবীন্দ্রনাথ আমাদের দেখার চোখ দিয়েছেন’, তারই কিছু নমুনা এখানে রাখা দরকার। শিলাইদহ থেকে লেখা এক চিঠি: ‘আমার এই দরিদ্র চাষী প্রজাগুলোকে দেখলে আমার ভারি মায়া করে, এরা যেন বিধাতার শিশুসন্তানের মতো নিরুপায়। তিনি এদের মুখে নিজের হাতে কিছু তুলে না দিলে এদের আর গতি নেই। পৃথিবীর স্তন যখন শুকিয়ে যায় তখন এরা কেবল কাঁদতে জানে—কোনোমতে একটুখানি ক্ষুধা ভাঙলেই আবার তখনই সমস্ত ভুলে যায়।’
কৃষকের হাহাকার: ‘…এবারে এত জলও আকাশে ছিল! আমাদের চরের মধ্যে নদীর জল প্রবেশ করেছে। চাষীরা নৌকা বোঝাই করে কাঁচা ধান কেটে নিয়ে আসছে—আমার বোটের পাশ দিয়ে তাদের নৌকা যাচ্ছে আর ক্রমাগত তাদের হাহাকার শুনতে পাচ্ছি—যখন আর কয়দিন থাকলে ধান পাকত তখন কাঁচা ধান কেটে আনা চাষার পক্ষে যে কী নিদারুণ তা বেশ বুঝতে পারা যায়। যদি ওই শীষের মধ্যে দুটো চারটে ধান একটু শক্ত হয়ে থাকে এই তাদের আশা।’
দারিদ্র্য আর অস্বাস্থ্যের ছবি: ‘যখন গ্রামের চারিদিকের জঙ্গলগুলো জলে ডুবে পাতা-লতা গুল্মে পচতে থাকে, গোয়ালঘর ও লোকালয়ের বিবিধ আবর্জনা চারিদিকে ভেসে বেড়ায়, পাট-পচানির গন্ধে বাতাস ভারাক্রান্ত, উলঙ্গ পেট-মোটা পা-সরু রুগ্ন ছেলে-মেয়েরা যেখানে সেখানে জলে কাদায় মাখামাখি ঝাঁপাঝাঁপি করতে থাকে…গৃহস্থের মেয়েরা ভিজে শাড়ী গায়ে জড়িয়ে বাদলার ঠাণ্ডা হাওয়া বৃষ্টির জলে ভিজতে ভিজতে হাঁটুর উপর কাপড় তুলে জল ঠেলে ঠেলে সহিষ্ণু জন্তুর মতো ঘরকন্নার নিত্যকর্ম করে যায়, তখন সে দৃশ্য কোনোমতেই ভালো লাগে না।…এত অবহেলা, অস্বাস্থ্য, অসৌন্দর্য, দরিদ্র মানুষের বাসস্থানে কি এক মুহূর্ত সহ্য হয়?’
১২৬৮ বঙ্গাব্দের ২৫ বৈশাখ পৃথিবীতে এসেছিলেন বৈচিত্র্যে ভরপুর রবীন্দ্রনাথ, যাঁর বলা কথা শাশ্বত হয়ে আমাদের অন্তরে মিশে থাকে।
একবার দলবলসহ হাঁটতে হাঁটতে রবীন্দ্র-অন্তঃপ্রাণ ওয়াহিদুল হক বলেছিলেন, ‘রবীন্দ্রনাথ আমাদের দেখার চোখ দিয়েছেন।’
কথাটা বুঝতে একটু সময় লেগেছিল। আমরা তো চোখ খুললেই সব দেখতে পাই। তাহলে রবীন্দ্রনাথ এলেন কোথা থেকে? ওয়াহিদুল হক বুঝিয়ে বলেছিলেন, ‘যা দেখি, তা এমনভাবে বর্ণনা করেছেন রবীন্দ্রনাথ যে মনে হয়, আমাদের চোখেই বুঝি দেখছি সেই ছবি। আসলে সেভাবে দেখার জন্য আমাদের মন তো তৈরি করে দিয়েছেন রবীন্দ্রনাথ।’
রবীন্দ্রনাথ জমিদারির দায়িত্ব পেয়েছিলেন বাইশ বছর বয়সে। বিয়ের ঠিক দুই দিন আগে। ১৮৮৩ সালের ৭ নভেম্বর দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর ছোট ছেলেকে সাময়িকভাবে জমিদারি দেখার দায়িত্ব দেন। শুরুতেই জমিদারির সর্বময় কর্তৃত্ব দেননি ছেলেকে। পরীক্ষামূলকভাবে দায়িত্ব পান তিনি, নিষ্ঠা ও সততার মাধ্যমে বাবার বিশ্বাস অর্জন করার পর ১৮৯০ সাল থেকে তিনি পুরোপুরি জমিদারি পরিদর্শনের দায়িত্ব লাভ করেন।
রবীন্দ্রনাথ আগে কোনোদিন সাধারণ মানুষের এত কাছে আসেননি। পূর্ববঙ্গের জমিদারিগুলোয় এসে তিনি সাধারণ মানুষের সঙ্গ পেলেন।
রবীন্দ্রনাথ মূলত স্থায়ী আবাস গড়েছিলেন শিলাইদহে। এখান থেকেই তিনি কুষ্টিয়া, পাবনা এবং রাজশাহীতে ভ্রমণ করেছেন। সাজাদপুর (শাহজাদপুর) ও পতিসরে থেকেছেন কম। সাধারণ মানুষের সংস্পর্শে এসে জীবন সম্পর্কে তাঁর ভাবনা পরিবর্তিত হয়েছে।
ওয়াহিদুল হক যে বলেছিলেন, ‘রবীন্দ্রনাথ আমাদের দেখার চোখ দিয়েছেন’, তারই কিছু নমুনা এখানে রাখা দরকার। শিলাইদহ থেকে লেখা এক চিঠি: ‘আমার এই দরিদ্র চাষী প্রজাগুলোকে দেখলে আমার ভারি মায়া করে, এরা যেন বিধাতার শিশুসন্তানের মতো নিরুপায়। তিনি এদের মুখে নিজের হাতে কিছু তুলে না দিলে এদের আর গতি নেই। পৃথিবীর স্তন যখন শুকিয়ে যায় তখন এরা কেবল কাঁদতে জানে—কোনোমতে একটুখানি ক্ষুধা ভাঙলেই আবার তখনই সমস্ত ভুলে যায়।’
কৃষকের হাহাকার: ‘…এবারে এত জলও আকাশে ছিল! আমাদের চরের মধ্যে নদীর জল প্রবেশ করেছে। চাষীরা নৌকা বোঝাই করে কাঁচা ধান কেটে নিয়ে আসছে—আমার বোটের পাশ দিয়ে তাদের নৌকা যাচ্ছে আর ক্রমাগত তাদের হাহাকার শুনতে পাচ্ছি—যখন আর কয়দিন থাকলে ধান পাকত তখন কাঁচা ধান কেটে আনা চাষার পক্ষে যে কী নিদারুণ তা বেশ বুঝতে পারা যায়। যদি ওই শীষের মধ্যে দুটো চারটে ধান একটু শক্ত হয়ে থাকে এই তাদের আশা।’
দারিদ্র্য আর অস্বাস্থ্যের ছবি: ‘যখন গ্রামের চারিদিকের জঙ্গলগুলো জলে ডুবে পাতা-লতা গুল্মে পচতে থাকে, গোয়ালঘর ও লোকালয়ের বিবিধ আবর্জনা চারিদিকে ভেসে বেড়ায়, পাট-পচানির গন্ধে বাতাস ভারাক্রান্ত, উলঙ্গ পেট-মোটা পা-সরু রুগ্ন ছেলে-মেয়েরা যেখানে সেখানে জলে কাদায় মাখামাখি ঝাঁপাঝাঁপি করতে থাকে…গৃহস্থের মেয়েরা ভিজে শাড়ী গায়ে জড়িয়ে বাদলার ঠাণ্ডা হাওয়া বৃষ্টির জলে ভিজতে ভিজতে হাঁটুর উপর কাপড় তুলে জল ঠেলে ঠেলে সহিষ্ণু জন্তুর মতো ঘরকন্নার নিত্যকর্ম করে যায়, তখন সে দৃশ্য কোনোমতেই ভালো লাগে না।…এত অবহেলা, অস্বাস্থ্য, অসৌন্দর্য, দরিদ্র মানুষের বাসস্থানে কি এক মুহূর্ত সহ্য হয়?’
১২৬৮ বঙ্গাব্দের ২৫ বৈশাখ পৃথিবীতে এসেছিলেন বৈচিত্র্যে ভরপুর রবীন্দ্রনাথ, যাঁর বলা কথা শাশ্বত হয়ে আমাদের অন্তরে মিশে থাকে।
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লা এলাকায় যাত্রীবাহী বাসে ডাকাতি বেড়েই চলছে। এ কারণে চালক ও যাত্রীদের কাছে আতঙ্কের নাম হয়ে উঠছে এই সড়ক। ডাকাতির শিকার বেশি হচ্ছেন প্রবাসফেরত লোকজন। ডাকাতেরা অস্ত্র ঠেকিয়ে লুট করে নিচ্ছে সর্বস্ব। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়েও ঘটছে ডাকাতির ঘটনা।
০২ মার্চ ২০২৫বিআরটিসির বাস দিয়ে চালু করা বিশেষায়িত বাস র্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) লেনে অনুমতি না নিয়েই চলছে বেসরকারি কোম্পানির কিছু বাস। ঢুকে পড়ছে সিএনজিচালিত অটোরিকশা, ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা। উল্টো পথে চলছে মোটরসাইকেল। অন্যদিকে বিআরটিসির মাত্র ১০টি বাস চলাচল করায় সোয়া চার হাজার কোটি টাকার এই প্রকল্প থেকে...
১৬ জানুয়ারি ২০২৫গাজীপুর মহানগরের বোর্ডবাজার এলাকার ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির (আইইউটি) মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থীরা পিকনিকে যাচ্ছিলেন শ্রীপুরের মাটির মায়া ইকো রিসোর্টে। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক থেকে বাসগুলো গ্রামের সরু সড়কে ঢোকার পর বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে যায় বিআরটিসির একটি দোতলা বাস...
২৪ নভেম্বর ২০২৪ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
২০ নভেম্বর ২০২৪