Ajker Patrika

মানুষের রবীন্দ্রনাথ

জাহীদ রেজা নূর, ঢাকা
আপডেট : ০৮ মে ২০২২, ০৯: ১১
মানুষের রবীন্দ্রনাথ

একবার দলবলসহ হাঁটতে হাঁটতে রবীন্দ্র-অন্তঃপ্রাণ ওয়াহিদুল হক বলেছিলেন, ‘রবীন্দ্রনাথ আমাদের দেখার চোখ দিয়েছেন।’

কথাটা বুঝতে একটু সময় লেগেছিল। আমরা তো চোখ খুললেই সব দেখতে পাই। তাহলে রবীন্দ্রনাথ এলেন কোথা থেকে? ওয়াহিদুল হক বুঝিয়ে বলেছিলেন, ‘যা দেখি, তা এমনভাবে বর্ণনা করেছেন রবীন্দ্রনাথ যে মনে হয়, আমাদের চোখেই বুঝি দেখছি সেই ছবি। আসলে সেভাবে দেখার জন্য আমাদের মন তো তৈরি করে দিয়েছেন রবীন্দ্রনাথ।’

রবীন্দ্রনাথ জমিদারির দায়িত্ব পেয়েছিলেন বাইশ বছর বয়সে। বিয়ের ঠিক দুই দিন আগে। ১৮৮৩ সালের ৭ নভেম্বর দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর ছোট ছেলেকে সাময়িকভাবে জমিদারি দেখার দায়িত্ব দেন। শুরুতেই জমিদারির সর্বময় কর্তৃত্ব দেননি ছেলেকে। পরীক্ষামূলকভাবে দায়িত্ব পান তিনি, নিষ্ঠা ও সততার মাধ্যমে বাবার বিশ্বাস অর্জন করার পর ১৮৯০ সাল থেকে তিনি পুরোপুরি জমিদারি পরিদর্শনের দায়িত্ব লাভ করেন।

রবীন্দ্রনাথ আগে কোনোদিন সাধারণ মানুষের এত কাছে আসেননি। পূর্ববঙ্গের জমিদারিগুলোয় এসে তিনি সাধারণ মানুষের সঙ্গ পেলেন।

রবীন্দ্রনাথ মূলত স্থায়ী আবাস গড়েছিলেন শিলাইদহে। এখান থেকেই তিনি কুষ্টিয়া, পাবনা এবং রাজশাহীতে ভ্রমণ করেছেন। সাজাদপুর (শাহজাদপুর) ও পতিসরে থেকেছেন কম। সাধারণ মানুষের সংস্পর্শে এসে জীবন সম্পর্কে তাঁর ভাবনা পরিবর্তিত হয়েছে।

ওয়াহিদুল হক যে বলেছিলেন, ‘রবীন্দ্রনাথ আমাদের দেখার চোখ দিয়েছেন’, তারই কিছু নমুনা এখানে রাখা দরকার। শিলাইদহ থেকে লেখা এক চিঠি: ‘আমার এই দরিদ্র চাষী প্রজাগুলোকে দেখলে আমার ভারি মায়া করে, এরা যেন বিধাতার শিশুসন্তানের মতো নিরুপায়। তিনি এদের মুখে নিজের হাতে কিছু তুলে না দিলে এদের আর গতি নেই। পৃথিবীর স্তন যখন শুকিয়ে যায় তখন এরা কেবল কাঁদতে জানে—কোনোমতে একটুখানি ক্ষুধা ভাঙলেই আবার তখনই সমস্ত ভুলে যায়।’

কৃষকের হাহাকার: ‘…এবারে এত জলও আকাশে ছিল! আমাদের চরের মধ্যে নদীর জল প্রবেশ করেছে। চাষীরা নৌকা বোঝাই করে কাঁচা ধান কেটে নিয়ে আসছে—আমার বোটের পাশ দিয়ে তাদের নৌকা যাচ্ছে আর ক্রমাগত তাদের হাহাকার শুনতে পাচ্ছি—যখন আর কয়দিন থাকলে ধান পাকত তখন কাঁচা ধান কেটে আনা চাষার পক্ষে যে কী নিদারুণ তা বেশ বুঝতে পারা যায়। যদি ওই শীষের মধ্যে দুটো চারটে ধান একটু শক্ত হয়ে থাকে এই তাদের আশা।’

দারিদ্র্য আর অস্বাস্থ্যের ছবি: ‘যখন গ্রামের চারিদিকের জঙ্গলগুলো জলে ডুবে পাতা-লতা গুল্মে পচতে থাকে, গোয়ালঘর ও লোকালয়ের বিবিধ আবর্জনা চারিদিকে ভেসে বেড়ায়, পাট-পচানির গন্ধে বাতাস ভারাক্রান্ত, উলঙ্গ পেট-মোটা পা-সরু রুগ্ন ছেলে-মেয়েরা যেখানে সেখানে জলে কাদায় মাখামাখি ঝাঁপাঝাঁপি করতে থাকে…গৃহস্থের মেয়েরা ভিজে শাড়ী গায়ে জড়িয়ে বাদলার ঠাণ্ডা হাওয়া বৃষ্টির জলে ভিজতে ভিজতে হাঁটুর উপর কাপড় তুলে জল ঠেলে ঠেলে সহিষ্ণু জন্তুর মতো ঘরকন্নার নিত্যকর্ম করে যায়, তখন সে দৃশ্য কোনোমতেই ভালো লাগে না।…এত অবহেলা, অস্বাস্থ্য, অসৌন্দর্য, দরিদ্র মানুষের বাসস্থানে কি এক মুহূর্ত সহ্য হয়?’

১২৬৮ বঙ্গাব্দের ২৫ বৈশাখ পৃথিবীতে এসেছিলেন বৈচিত্র্যে ভরপুর রবীন্দ্রনাথ, যাঁর বলা কথা শাশ্বত হয়ে আমাদের অন্তরে মিশে থাকে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

টাকা দিয়ে নারীর চাবুকের ঘা খাচ্ছিলেন পুরুষ, দুজন গ্রেপ্তার

ভারতের সঙ্গে সংঘাতে পাকিস্তানের ভাগ্যনিয়ন্তা সেনাপ্রধান জেনারেল মুনির

প্রবাসীর রেমিট্যান্সের অর্থ আত্মসাৎ, নারী ব্যাংক কর্মকর্তা কারাগারে

পাকিস্তানে কীভাবে হামলা চালাতে পারে ভারত, ইতিহাস যা বলছে

কোটি টাকা ‘ভর্তুকি’র জিম্বাবুয়ে সিরিজে বাংলাদেশ যা পেল

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত