Ajker Patrika

হারিয়ে যাচ্ছে বাঁশ-বেতশিল্প

মাহিদুল ইসলাম মাহি, হরিরামপুর, (মানিকগঞ্জ)
আপডেট : ২২ জুন ২০২২, ০৮: ৫৬
হারিয়ে যাচ্ছে বাঁশ-বেতশিল্প

ইছামতী আর পদ্মা নদীবিধৌত মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলায় এককালে ছিল বাঁশ আর বেতের বন। সে বাঁশ আর বেতকে কেন্দ্র করে এ এলাকায় গড়ে উঠেছিল বাঁশ-বেতশিল্প। প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে এ এলাকার ঋষিপাড়ার মানুষেরা সে শিল্পকে কেন্দ্র করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন। কিন্তু ধীরে ধীরে এ শিল্প বিলীন হয়ে যাচ্ছে। এক দশক আগেও মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলার চালা ইউনিয়নের লাউতা-রাজরা ঋষিপাড়ায় কাকডাকা ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বেতের বিভিন্ন পণ্য তৈরির কাজ করতেন কারিগরেরা। পুরুষের পাশাপাশি নারীদেরও সমান সহযোগিতা থাকে এ কাজে। কিন্তু বাজারে প্লাস্টিকের পণ্যের দৌরাত্ম্য, পুঁজি ও বেতের ডিজাইনের উন্নয়ন না হওয়া ইত্যাদি কারণে হারাতে বসেছে পুরোনো বাঁশ-বেতশিল্প। তারপরও বাপ-দাদার এ পেশা আগলে ধরে কোনোরকমে পরিবার নিয়ে দিন কাটাচ্ছেন ঋষিপাড়ার বাসিন্দারা।

লাউতা-রাজরা ঋষিপাড়ার ২০ থেকে ৩০টি পরিবার বেতের কাজ করে। তারা ঝুড়ি, বাস্কেট, ট্রে, ক্যানবল, দাঁড়িপাল্লা, সের, ধামাসহ বিভিন্ন পণ্য তৈরি করে। কিন্তু একটু গভীরভাবে দেখলে দেখা যাবে, বয়স্ক ব্যক্তিরা কাজ করলেও তাঁদের সন্তানেরা পেশা পরিবর্তন করছেন। কালের বিবর্তনে এসব বেতের তৈরি পণ্যের জায়গা দখল করে নিয়েছে প্লাস্টিকের পণ্য।

লাউতা-রাজরা ঋষিপাড়ার সুবাস দাস (৬০) জানান, ১০-১৫ বছর আগেও ঋষিপাড়ার বাসিন্দাদের জীবন-জীবিকার একমাত্র উপায় ছিল বেতের তৈরি হস্তশিল্প। প্রতি সপ্তাহের হাটবারগুলো, বিশেষ করে শনিবার ঝিটকা, রোববারে নয়ারহাট, বুধবারে বালিরটেক হাটে নিয়মিত কেনাবেচা চলত সেসব পণ্যের। অনেকেই আবার বিভিন্ন অঞ্চলের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ফেরি করে বিক্রি করতেন নিজেদের তৈরি বাঁশ-বেতের এসব পণ্য। কিন্তু সময়ের ব্যবধানে এ শিল্পের মূল উপকরণ বেতের মূল্যবৃদ্ধিতে কারিগরেরা তাঁদের পেশা ধরে রাখতে হিমশিম খাচ্ছেন। আগে ৮০টি বেত ৩০০ টাকা অর্থাৎ ১ মণ বেত ৩০০ টাকায় কেনা গেলেও এখন আড়াই থেকে সাড়ে ৩ হাজার টাকায় কিনতে হচ্ছে।

সুবাস দাসের ছেলে সঞ্চয় দাস (৩০) মালয়েশিয়া থেকে ফিরে বাবাকে সহায়তা করছেন বাঁশ-বেতের কাজে। কিন্তু তিনি জানান, এ পেশায় কোনোভাবে তিন বেলা খেয়ে বেঁচে থাকা যায়, ভবিষ্যতের জন্য কিছু করা যায় না। একসময় এসব এলাকায় বড় বড় বেতের বন দেখা গেলেও এখন আর সেগুলো চোখে পড়ে না বলে জানান সঞ্চয় দাস। তাই তিনি আবারও মালয়েশিয়ায় যাওয়ার চেষ্টা করছেন।

কারিগর বুদ্ধ রবিদাস (৬৫) বলেন, বাঁশ-বেতের তৈরি বিভিন্ন জিনিসপত্র মানুষ এখন আর আগের মতো ব্যবহার করে না। বর্তমানে প্লাস্টিক দিয়ে তৈরি পণ্যের ওপর ঝুঁকছে মানুষ। ফলে এ শিল্প চিরতরে হারিয়ে যেতে বসেছে।

লাউতা-রাজরা ঋষিপাড়ার লক্ষ্মণ দাস (৬৩), সুনীল দাস (৪০), নিতাই দাস (৬৬), জগদীশ দাস (৬৪), বিজয় দাসসহ (৭০) আরও অনেকে জানান, বেতের দাম অনেক বেড়ে গেছে। বেতের পণ্য তৈরিতে খরচ বাড়লেও তাঁদের আয় বাড়েনি। আগে এলাকা থেকেই বেত কেনা গেলেও এখন শুধু শীতের সময় এলাকায় বেত পাওয়া যায়।

হরিরামপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘প্রতিটি পেশার মানুষকে এগিয়ে নিতে আমরা কাজ করছি। আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে বেতের কারিগরদের কাজের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য প্রশিক্ষণ প্রদানের ব্যবস্থা করা হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

শিক্ষার্থীদের ‘কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে’ সপরিবারে পালিয়েছেন বিএসবির বাশার

ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ: পাকিস্তানে নিহত বেড়ে ২৬, ভারতে ১০

সীমান্তে সাদা পতাকা উড়িয়ে আত্মসমর্পণের ইঙ্গিত দিয়েছে ভারত: পাকিস্তানের তথ্যমন্ত্রী

কাশ্মীরে বিধ্বস্ত বিমানের অংশবিশেষ ফরাসি কোম্পানির তৈরি, হতে পারে রাফাল

পাকিস্তানে হামলায় ‘লোইটারিং মিউনিশনস’ ব্যবহারের দাবি ভারতের, এটি কীভাবে কাজ করে

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত