Ajker Patrika

সাজা ৭ বছরের, আপিল ঝুলছে ২৫ বছর ধরে

এস এম নূর মোহাম্মদ, ঢাকা
আপডেট : ১১ নভেম্বর ২০২২, ০৮: ৩৮
সাজা ৭ বছরের, আপিল ঝুলছে ২৫ বছর ধরে

নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের এক মামলায় ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়ার নুরুল ইসলামকে ১৯৯৭ সালে সাত বছর কারাদণ্ড দেন ঢাকার একটি আদালত। এর কয়েক দিন পরই কারা কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে হাইকোর্টে জেল আপিল করেন তিনি। তাতে উল্লেখ করা হয়, সাজা ঘোষণার আগেই তাঁকে পাঁচ বছর হাজতবাস করতে হয়েছে।

নুরুল ইসলামের দাবি, তিনি বাসের সুপারভাইজার ছিলেন। ঘনিষ্ঠতার সুবাদে কুমিল্লার ইউসুফ নামের একজনকে ৭ হাজার টাকা ধার দিয়েছিলেন। দীর্ঘদিনেও তা পরিশোধ করেননি ইউসুফ। একপর্যায়ে নুরুল ইসলাম টাকা ফেরত চাইলে বাগ্‌বিতণ্ডার জের ধরে ইউসুফকে মারধর করেন। আবেদনে নুরুল ইসলাম বলেন, পরে ইউসুফ এক নারীকে দিয়ে তাঁর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করান। সামর্থ্য না থাকায় জেল আপিল করা হয়েছে। জানা যায়, ২৫ বছরেও নিষ্পত্তি হয়নি ওই জেল আপিল। বিচারিক আদালত থেকে নথি না আসায় নিষ্পত্তির জন্য সংশ্লিষ্ট বেঞ্চে পাঠাতে পারছে না সুপ্রিম কোর্টের জেল আপিল শাখা।

একই আইনের আরেক মামলায় ১৯৯৭ সালে যাবজ্জীবন সাজা হয় কুমিল্লার তমিজ উদ্দিনের। নিজেকে নির্দোষ দাবি করে সে বছরই জেল আপিল করেন তিনি। তাতে বলা হয়, মামার বাড়ি গিয়ে সম্পত্তিতে মায়ের ভাগ চাইলে মামাতো ভাইয়েরা ছেলেধরা সাজিয়ে তাঁকে পুলিশের হাতে তুলে দেন। পরে তদন্ত কর্মকর্তা প্রভাবিত হয়ে মিথ্যা প্রতিবেদন দেন। তমিজের জেল আপিলের নথিও পড়ে আছে সংশ্লিষ্ট শাখায়।

এ রকম হাজারখানেক জেল আপিল নিষ্পত্তি হচ্ছে না সংশ্লিষ্ট শাখা থেকে নথি না যাওয়ায়। অথচ উচ্চ আদালতে শুনানির পর অনেকেরই সাজা পরিবর্তন হয়। খালাস পেলে মুক্তি মেলে। সাজা কমলে মেয়াদের আগেই মুক্তির সুযোগ তৈরি হয়। কিন্তু শুনানি না হলে সাজার পুরো মেয়াদ কাটাতে হয় কারাগারেই।  

‘বিচারের উদ্দেশ্য ব্যাহত হয়’
সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘প্রত্যেকের আশা থাকে যাতে দ্রুত মামলা নিষ্পত্তি হয়। কিন্তু অনেক সময় বছরের পর বছর শুনানির অপেক্ষায় থাকতে হয়। এতে সত্যিকার অর্থে বিচারের উদ্দেশ্য ব্যাহত হয়। এর জন্য দায়ী কে, তা তদন্ত করে বের করতে হবে। প্রয়োজনে ব্যবস্থা নিতে হবে।’ জেল আপিল নিষ্পত্তির জন্য বেঞ্চ বাড়ানোরও পরামর্শ দেন তিনি। 

২৮ বছরের পুরোনো ১০ জেল আপিলও আটকে
জানা গেছে, ১৯৯৪ সালের ১০টি, ১৯৯৫ সালের ৬টি, ১৯৯৮ সালের ১০টি জেল আপিল এখনো আটকে আছে সংশ্লিষ্ট শাখায়। ওই ২৬টিসহ মোট ৯৪৬টি জেল আপিল আটকে ছিল গত অক্টোবর পর্যন্ত। এসব জেল আপিল কারাগার থেকে সুপ্রিম কোর্টে এলে গৃহীত হওয়ার পর প্রয়োজনীয় নথি চেয়ে বিচারিক আদালতে চিঠি দেওয়া হয়েছে একাধিকবার। কিন্তু নথি না আসায় শুনানির জন্য পাঠানো যায়নি বলে জানান জেল আপিল শাখার কয়েকজন কর্মকর্তা।

বিচারিক আদালতে সাজা হওয়ার পর আসামি উচ্চ আদালতে আপিল করার সুযোগ পান। সামর্থ্যবানেরা আইনজীবী নিয়োগ দেন। যাঁদের সামর্থ্য নেই তাঁরা জেল আপিল করেন। সে ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে আসামির পক্ষে আইনজীবী নিয়োগ দেওয়া হয়।

একাধিক কর্মকর্তা জানান, জেল আপিল এলে সেগুলো প্রস্তুত করে আদালতে অ্যাডমিশনের (গ্রহণ করার) জন্য পাঠানো হয়। আদালত গ্রহণ করলে চিঠি পাঠানো হয় এলসিআর (নিম্ন আদালতের নথি) চেয়ে। বিচারিক আদালত থেকে নথি এলে তা আবারও পাঠানো হয় সংশ্লিষ্ট বেঞ্চে। লিগ্যাল এইড অফিসকেও জানানো হয়। তারা আইনজীবী নিয়োগ দেয়।

কর্মকর্তারা আরও জানান, অনেক আসামি জেল আপিল করার পর নিয়মিত আপিলও করেন। তখন নথি চলে যায় নিয়মিত আপিলের সঙ্গে। এ কারণে শাখায় নথি আসে না। কিন্তু নিয়ম হলো উভয় আপিল একসঙ্গে শুনানি করার। বিষয়টি না জানানোর কারণে শাখায় আবেদন পড়ে থাকে। যদিও জেল আপিলের পর আবার নিয়মিত আপিলের সংখ্যা খুব বেশি নয়।

সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের রেজিস্ট্রার ও মুখপাত্র মোহাম্মদ সাইফুর রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমরা বিষয়গুলো খতিয়ে দেখব।’  

নিষ্পত্তির অপেক্ষায় সহস্রাধিক
জানা গেছে, এখনো সহস্রাধিক জেল আপিল নিষ্পত্তির অপেক্ষায়। গত অক্টোবর পর্যন্ত দেড় শর মতো গৃহীত হয়েছে। প্রয়োজনীয় নথি এলে শুনানি হবে। আদালতে গ্রহণ করার জন্য পাঠানো হয়েছে আরও ৫০২টি। আদালতে পাঠানোর জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে ২৪৮টি। এখনো প্রস্তুত হয়নি ১০১টি জেল আপিল। 

বেঞ্চ বাড়ানোর তাগিদ
সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী এস এম শাহজাহান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘নিয়মিত আপিল করলে জেল আপিলও তার সঙ্গে শুনানি করতে হবে।’ 
নিষ্পত্তি ত্বরান্বিত করতে বেঞ্চ বাড়ানোর পক্ষে মত দেন এই আইনজীবী। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

দাম্পত্যকলহের গুঞ্জন, মুখ খুললেন জাহিদ হাসান

গভর্নর আমাকে বাধ্যতামূলক ছুটি দেওয়ার কে: বিএফআইইউর প্রধান শাহীনুল

সেই রুহুল আমিনের বসুন্ধরা, বনানী ও উত্তরার জমিসহ ৫০০ কোটি টাকার সম্পত্তি ক্রোক

ছাত্রীকে তিন দিন আটকে রেখে ধর্ষণ, গ্রাম্য সালিসের মাধ্যমে বিয়ে

১৯৭১ সালে বাংলাদেশে পাকিস্তানি সেনাদের যৌন সহিংসতার প্রসঙ্গ জাতিসংঘে তুললেন ভারতীয় দূত

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত