Ajker Patrika

বিতর্কিত ইসি বিদায় নিচ্ছে আজ

মারুফ কিবরিয়া, ঢাকা
আপডেট : ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১৯: ২৪
বিতর্কিত ইসি বিদায় নিচ্ছে আজ

২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর। সারা দেশে অনুষ্ঠিত হয়েছিল একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। ভোট গ্রহণের দিন নানা অনিয়মের অভিযোগ ওঠে। সকাল আটটার আগেই সিল মারা ব্যালট মেলে ভোটকেন্দ্রে। আন্তর্জাতিক একটি গণমাধ্যমের খবরে ভিডিওসহ সে খবর প্রচারও হয়। এ ছাড়া দেশের বিভিন্ন স্থানে আগের রাতেই ব্যালট বাক্স ভরার খবর পাওয়া যায়।

অভিযোগ ওঠে, ওই রাতেই ক্ষমতাসীন দলীয় নেতা-কর্মীরা ভোটকেন্দ্রে ঢুকে নিজেদের প্রতীকে সিল মেরে ব্যালট বাক্স পূর্ণ করেন। জাতীয় নির্বাচনের মতো এত বড় আয়োজনে অনিয়মের অভিযোগ উঠলেও নীরব ভূমিকা পালন করতে দেখা গেছে কে এম নূরুল হুদার নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশনকে (ইসি)। এই ঘটনা ইসির নামের পাশে ‘রাতের ভোট’-এর তকমা লেগে যায়। গত তিন বছরে এ তকমা থেকে বের হতে পারেনি সাংবিধানিক এই সংস্থাটি। পরবর্তী সময়ে যত নির্বাচন হয়েছে তার সব কটিই কমবেশি প্রশ্নবিদ্ধ হয়। তবে কোনো নির্বাচনের অভিযোগ আমলে নেয়নি হুদা কমিশন। বরং সুষ্ঠু ভোট দাবি করে যেকোনো ধরনের অনিয়মের দায় অন্যের ঘাড়ে চাপিয়ে নিজেকে বাঁচানোর চেষ্টা করেছে। নির্বাচনসংশ্লিষ্ট এবং বিরোধী রাজনীতিকদের মতে, দু-একটি সিটি করপোরেশন নির্বাচন ছাড়া পাঁচ বছরের মেয়াদে ব্যর্থতা ও সমালোচনা পিছু ছাড়েনি হুদা কমিশনকে। আগামীকাল সোমবার বর্তমান কমিশনের মেয়াদ শেষ হচ্ছে। ইসি আইন পাসের পরে নতুন কমিশন গঠনে চলছে অনুসন্ধান কমিটির কার্যক্রম।

২০১৭ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি দায়িত্ব নেওয়া প্রধান নির্বাচন কমিশন (সিইসি) কে এম নূরুল হুদার নেতৃত্বে বর্তমান কমিশন আয়োজিত প্রায় সব নির্বাচনেই নিরপেক্ষতা প্রশ্নবিদ্ধ ছিল সব সময়।

সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘বর্তমান নির্বাচন কমিশন নির্বাচনব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দিয়েছে। এই কমিশনকে এভাবে মূল্যায়ন করা যায় যে আমরা সামনের দিকে যাচ্ছি না। অতীতের নির্বাচন কমিশনগুলোর বিবেচনায় আমরা পেছনের দিকে যাচ্ছি। নানা অনিয়মের অভিযোগ তুলে রাষ্ট্রপতির কাছে শরণাপন্ন হয়েছিলাম আমরা। কিন্তু তিনি কোনোভাবে কর্ণপাত করেননি। ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে মধ্যরাতের ভোটের আয়োজন হয়। জালিয়াতির নির্বাচনে ইসির দায়বদ্ধতা ছিল। কিন্তু কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। এককথায় এই আমলে মানুষ ভোটের অধিকার হারিয়েছে। ইভিএম নামক আরেক যন্ত্রের মাধ্যমে নির্বাচনে জালিয়াতির আশ্রয় নেওয়ার পথকে সহজ করেছে ইসি। বলা হয়েছিল, সব দলের মতামতের ভিত্তিতে ইভিএম ব্যবহার করে ভোট গ্রহণ করা হবে। কিন্তু পরবর্তী সময়ে একতরফা সিদ্ধান্তে অনেক নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার করা হয়।’

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘এই নির্বাচন কমিশন নিয়ে কোনো কথা বলব না। অনেক বলেছি। একটা সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে সরকার বড় বাধা। আমাকে দায়িত্ব দিলেও একটা সুষ্ঠু নির্বাচন করতে পারব।’

বর্তমান ইসি সম্পর্কে বাসদের সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান বলেন, এরা নির্বাচনব্যবস্থাকে ভেঙে দিয়েছে। এই কমিশন স্মরণকালের সর্বোচ্চ ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে।

ইসি ঘিরে যত আলোচনা-সমালোচনা
নির্বাচন ঘিরে গত পাঁচ বছরে বাইরে যেমন সমালোচনা ছিল, ভেতরে নিজেদের মধ্যেই বিরোধপূর্ণ আচরণ লক্ষ করা গেছে। সিইসি নূরুল হুদার সঙ্গে নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদারের বিরোধ প্রকাশ্যে এসেছে। মতের অমিল হওয়ায় মাহবুব তালুকদার একাধিকবার কমিশনের সভা বয়কট করেছেন। কমিশনের ব্যর্থতা তুলে ধরে একাধিকবার সংবাদ সম্মেলন করেছেন তিনি। গত ১৪ নভেম্বর এক সংবাদ সম্মেলনে মাহবুব তালুকদার বলেন, ‘প্রকৃতপক্ষে নির্বাচন এখন আইসিইউতে। এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে গণতন্ত্র এখন লাইফ সাপোর্টে।’

মাহবুব তালুকদারের সঙ্গে বিরোধ ছাড়াও কমিশনের বিরুদ্ধে আর্থিক দুর্নীতির বিরুদ্ধে ৪২ নাগরিকের রাষ্ট্রপতির কাছে চিঠি দেওয়া ছিল বড় আলোচনার বিষয়। কিন্তু দুর্নীতি কিংবা অসদাচরণের অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে প্রধান নির্বাচন কমিশনার উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও ভিত্তিহীন দাবি করেন।

ইভিএম বিতর্ক
এই নির্বাচন কমিশনের আমলে জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ে মোট তিন শর মতো নির্বাচন ইভিএমে নেওয়া হয়েছে। বিরোধী দলগুলোর নানা আপত্তির মধ্যেও এই পদ্ধতিতে ভোট গ্রহণব্যবস্থা চালু করে বর্তমান ইসি। সবশেষ অনুষ্ঠিত নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচনেও ইভিএম নিয়ে বিতর্ক থেমে থাকেনি।

যত নির্বাচন ইসির আমলে
এ কমিশন দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই কুমিল্লা এবং পরে ডিসেম্বর রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। দুই নির্বাচনেই শান্তিপূর্ণভাবে ভোট হয়। তবে পরের নির্বাচনগুলোতে আর এই ধারাবাহিকতা বজায় থাকেনি।

এ কমিশনের অধীনে ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ, দশম জাতীয় সংসদের ৭টি এবং একাদশ জাতীয় সংসদের ২০টি উপনির্বাচন, ১২টি সিটি করপোরেশন, ৪৫৩টি উপজেলা পরিষদ, ২৬৩টি পৌরসভা ও ৪ হাজার ১৩৬টি ইউনিয়ন পরিষদে ভোট হয়। প্রতিটি নির্বাচনে অনিয়ম ও সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু হুদা কমিশন বালিতে মুখ গুঁজে থাকায় কিছুই দেখতে পায়নি। ফলে আমলেও নেয়নি।

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘যাঁরা প্রার্থী, তাঁদের কোনো অভিযোগ দেখি না। অন্যরা গলা ফাটায়। বিষয়টা এমন যে, মায়ের চেয়ে মাসির দরদ বেশি।’

বিদায়ী অনুষ্ঠান ও মুক্তিযোদ্ধাদের স্মার্ট কার্ড
হুদা কমিশনের আজ রোববার শেষ কর্মদিবস। কমিশন আজ রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের সঙ্গে বিদায়ী সাক্ষাৎ করবে। এর আগে সকালে রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁওয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে বীর মুক্তিযোদ্ধাখচিত জাতীয় পরিচয়পত্রের স্মার্ট কার্ড বিতরণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে ইসি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

৬১৫ কোটি টাকা আত্মসাৎ: এক্সিম ব্যাংকের নজরুল ইসলাম মজুমদারসহ ৩০ জনের নামে মামলা

‘কথিত আওয়ামী লীগ সদস্যদের’ বাংলাদেশবিরোধী তৎপরতার বিষয়ে ভারত অবহিত নয়: মুখপাত্র

কলকাতার নিউটাউনে বসে আয়েশ করছেন আওয়ামী লীগ নেতারা

চাকরি না ছেড়েই বিদেশে পাড়ি, ৪৮ শিক্ষক বরখাস্ত

ভিসা ছাড়া পাকিস্তান সফরের চুক্তি হতে পারে শিগগির

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত