Ajker Patrika

সংরক্ষিত বনে অবৈধ ইটভাটা

কক্সবাজার ও চকরিয়া প্রতিনিধি
সংরক্ষিত বনে অবৈধ ইটভাটা

কক্সবাজারের চকরিয়ায় সংরক্ষিত বনের ভেতর ও আশপাশে রয়েছে পাঁচটি ইটভাটা। এসব ভাটার একটিরও কোনো অনুমোদন বা পরিবেশ ছাড়পত্র নেই। তারপরও কোনোটি এক যুগ আবার কোনোটি আরও বেশি সময় ধরে চালু রয়েছে। এসব ভাটা হাতি চলাচলের পথ রুদ্ধ করে গড়ে তোলার অভিযোগ রয়েছে। এর মধ্যে গত মঙ্গলবার উপজেলার ফাঁসিয়াখালী সংরক্ষিত বনের ভেতরে হাতির অভয়ারণ্যে তৈরি করা আওয়ামী লীগ নেতার জেএলবি নামের ভাটাটি বন্ধে অভিযান চালিয়েছে পরিবেশ অধিদপ্তর।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কক্সবাজার উত্তর বন বিভাগের ফাঁসিয়াখালী রেঞ্জের মানিকপুর বিটের বন-লাগোয়া গিয়াস উদ্দিনদের এএমবি নামের দুটি ও শাহ আলমের বিবিএম নামে একটি ভাটা রয়েছে। এর মধ্যে গিয়াসরা প্রায় ১১ বছর আগে ভাটাগুলো স্থাপন করেন এবং শাহ আলম তিন বছর আগে।

অন্যদিকে ফাঁসিয়াখালী বিটের সংরক্ষিত বনের উচিতার বিল এলাকায় ২০০৯ সালে গিয়াস উদ্দিন চৌধুরী প্রভাব খাটিয়ে অবৈধভাবে ইটভাটা স্থাপন করেন। এই ভাটা স্থাপন করতে গিয়ে সংরক্ষিত বনের বেশ কিছু পাহাড় ও বন নিধন করার অভিযোগ রয়েছে। এ নিয়ে তাঁর বিরুদ্ধে একাধিক মামলাও আছে। একটি মামলায় আদালতে তাঁর ছয় মাস সাজাও হয়েছে।

এ ছাড়া উপজেলার উত্তর হারবাং এলাকায় লোহাগাড়ার শামসুল আলমের এসবিএম নামক একটি ভাটা রয়েছে। ওই ভাটাও চট্টগ্রাম বন্য প্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের অধীন বন এলাকায় অবস্থিত।

২০১৩ সালের ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন অনুযায়ী সরকারি বনাঞ্চলের সীমারেখা থেকে দুই কিলোমিটার দূরত্বের মধ্যে ভাটা স্থাপন নিষিদ্ধ। এ ছাড়া একই আইনে কোনো পাহাড় বা টিলার উপরিভাগে বা ঢালে এবং তৎসংলগ্ন সমতলে কোনো ইটভাটা স্থাপনের ক্ষেত্রে কমপক্ষে আধা কিলোমিটার দূরত্ব মেনে চলতে হবে।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, ২০১৩ সালের আইন অনুযায়ী চকরিয়ার পাঁচটি ভাটার একটিরও অনুমোদন পাওয়ার শর্ত পূরণের সুযোগ নেই। পরিবেশ অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা জানান, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায়, ভাটামালিকেরা ভাটা স্থাপনের পর অনুমোদনের জন্য দৌড়ান। শর্ত পূরণে ব্যর্থ হলে আদালতের আশ্রয় নেন। কেউ কেউ প্রভাব খাটিয়ে বছরের পর বছর আইনের তোয়াক্কা না করে ভাটা চালু রাখছেন।

সম্প্রতি সরেজমিন দেখা গেছে, দুই পাশে বান্দরবানের লামার পাহাড় ও দুই পাশে মানিকপুরের সংরক্ষিত বন। সেখানেই ১১ বছর ধরে চলছে এএমবি নামের দুটি ভাটা। এসব ভাটায় জ্বালানি হিসেবে পোড়ানোর জন্য গাছ মজুত করা হয়েছে। পাশেই কিছু কয়লা রয়েছে।

ভাটামালিকদের একজন গিয়াস উদ্দিন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘সবাইকে ম্যানেজ করেই ১০ থেকে ১১ বছর ধরে ভাটা চালাচ্ছি।’ ভাটার বৈধ কোনো বৈধ কাগজপত্র নেই বলে স্বীকার করেন তিনি।

বিবিএমের মালিক শাহ আলম জানান, ‘আমরা তিন বছর আগে পরিবেশবান্ধব চিমনি তৈরি করে ভাটাটি স্থাপন করেছি। কিন্তু এখনো লাইসেন্স পাইনি।’

একইভাবে চকরিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গিয়াস উদ্দিন চৌধুরী কোনো অনুমোদন ছাড়া ১৩ বছর ধরে ইটভাটা চালু রেখেছেন। এই ভাটা বন্ধে ২০১০ সালে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) উচ্চ আদালতে একটি রিট আবেদন করে। নানা সময়ে পরিবেশ অধিদপ্তর, বন বিভাগসহ সরকারি দপ্তরগুলো বিতর্কিত ভাটাটি অপসারণের উদ্যোগ নিলেও কাজ হয়নি।

বন বিভাগের ফাঁসিয়াখালী রেঞ্জের রেঞ্জ কর্মকর্তা শেখ মিজানুর রহমান আজকের পত্রিকাকে জানান, একটি ইটভাটায় পাহাড় কাটার তথ্য রয়েছে। বাকি ভাটাগুলোর বিষয়ে সংশ্লিষ্ট বিট কর্মকর্তাদের খোঁজ নিতে বলা হয়েছে।

চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জেপি দেওয়ান বলেন, ‘আমি নতুন যোগদান করেছি। ইটভাটা নিয়ে হালনাগাদ তথ্য জানা নেই।’

কক্সবাজার পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক শেখ মো. নাজমুল হুদা আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ইতিমধ্যে জেএলবি নামের একটি ভাটায় অভিযান চালানো হয়েছে। হারবাং এলাকার একটি ইটভাটা নিয়ে উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। অনুমোদনবিহীন সব ভাটায় অভিযান অব্যাহত থাকবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বাংলাদেশ ও পাকিস্তানে স্টারলিংকের প্রস্তাবিত কার্যক্রমের বিস্তারিত চায় ভারত

নির্দেশনা মানেননি পাইলট, মদিনা-ঢাকা ফ্লাইটকে নামতে হলো সিলেটে

ভারত–বাংলাদেশ বাণিজ্য বিধিনিষেধের মূল্য গুনছেন ব্যবসায়ীরা

গায়ে কেরোসিন ঢেলে কলেজছাত্রীর আত্মহনন, পলাতক ইমাম গ্রেপ্তার

সরকারি মাধ্যমিকের সহকারী শিক্ষকেরা পাচ্ছেন গেজেটেড মর্যাদা

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত