Ajker Patrika

বডি বিল্ডিংয়ে পথ দেখাচ্ছেন মাকসুদা

নাজিম আল শমষের, ঢাকা
আপডেট : ০২ জানুয়ারি ২০২২, ১২: ০৫
বডি বিল্ডিংয়ে পথ দেখাচ্ছেন মাকসুদা

জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের শহীদ শেখ কামাল মিলনায়তনে উঠেই কেড়ে নিলেন দর্শকের নজর। সুঠাম শরীরের সঙ্গে মাথায় প্রাচীন মিসরীয়দের মতো ‘ড্রেডলক’ স্টাইলের চুলের বিনুনি। শারীরিক কসরতেও তিনি সেরা। দেশের গণ্ডি পেরিয়ে আন্তর্জাতিক আঙিনাতেও পেয়েছেন সাফল্য। গত পরশু বৃহস্পতিবার মঞ্চে ছিলেন আরও পাঁচ নারী প্রতিযোগী। কিন্তু সেরা হতে হলে যে ছোটখাটো বিষয়েও যে নজর দেওয়া জরুরি, সে প্রমাণ আবারও রেখে দ্বিতীয়বারের মতো জাতীয় প্রতিযোগিতায় সেরা মাকসুদা আক্তার।

‘যিনি রাঁধেন, তিনি চুলও বাঁধেন’—কথাটার যথার্থ উদাহরণ হতে পারেন মাকসুদা। একেক প্রতিযোগিতায় তাঁর চুলের স্টাইলও একেক রকম। চুলের ধরন পাল্টানোর রহস্য খোলাসা করেছেন মাকসুদা, ‘পারফরম্যান্সের সময় উপস্থাপন এক বড় বিষয়। আন্তর্জাতিক বডি বিল্ডারদের নিজস্ব একটা স্টাইল থাকে। আমাদের দেশে ছোট ছোট বিষয়গুলোকে অনেক সময় গুরুত্ব দেওয়া হয় না, আমি চেষ্টা করছি, এসব বিষয় সামনে আনতে।’

বডি বিল্ডারদের জীবনে নিয়মমাফিক খাদ্যাভ্যাস এক জরুরি অনুষঙ্গ। সকাল থেকে নিয়ম মেনে শুরু হয় মাকসুদার প্রতিটি দিন। দিনে যে পাঁচ থেকে ছয়বার খাবার খান; তালিকায় থাকে সাধারণত ভাত, সিদ্ধ মাছ কিংবা মুরগি। অধিকাংশ সময় নিজের খাবার নিজেই তৈরি করেন মাকসুদা। তবে সামনে প্রতিযোগিতা থাকলে পাল্টে যায় খাবারের ধরন।

বডি বিল্ডিং দিয়ে আলোচনায় এসেছেন মাকসুদা। বিষয়টি যে বেশ উপভোগ করছেন। বললেন, ‘মানুষ আসলে নতুনত্ব চায়। আমাদের দেশে আসলে শরীর গঠনের ইন্ডাস্ট্রি নেই। এমনকি দেশে যে এত বিজ্ঞাপন হচ্ছে, সিনেমা হচ্ছে, দেখলাম না কেউ শরীর গঠন নিয়ে খুব বেশি আগ্রহী। এই জগৎটা সম্পূর্ণ আলাদা। আমি চাই, এ নিয়ে কাজ করতে।’

শরীর গঠন বা বডি বিল্ডিং শুধু ছেলেদের জন্য, এই প্রথা ভেঙে বাংলাদেশের নারীরাও ধীরে ধীরে মনোযোগী হচ্ছেন খেলাটির দিকে। ইচ্ছা আর আগ্রহ থাকলে যে বডি বিল্ডিং দিয়ে খ্যাতিও আনা সম্ভব, সেটির বড় উদাহরণ এখন মাকসুদা। ২০১৭ সালে শরীরচর্চা শুরু হলেও তিনি পুরোদস্তুর বডি বিল্ডিং শুরু করেছেন ২০১৯ সাল থেকে। বড় ভাই নাসিমুল হক লিটন বডি বিল্ডিং ফেডারেশনের একজন বিচারক। ভাইয়ের উৎসাহেই এ পথে আসা মাকসুদার। বর্তমানে কাজ করছেন ফিউচার ফিটনেস জিমের সিনিয়র ট্রেনার হিসেবে। পাশাপাশি মনোযোগ দিয়েছেন নারীদের জন্য বিশেষায়িত জিম গড়ে তোলার কাজে। চান বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই গড়ে উঠুক শরীরচর্যার অভ্যাস, তাতে মাদক থেকে দূরে থাকবে যুবসমাজ।

নিজ পরিবার থেকে সমর্থন পেয়েছেন বলে পথটা খুব বেশি হয়তো চ্যালেঞ্জিং ছিল না মাকসুদার। কিন্তু বাংলাদেশের অনেক নারীর জন্যই পথটা কণ্টকাকীর্ণ। তাদের জন্য মাকসুদার বার্তা, ‘দেশের অনেক প্রত্যন্ত এলাকায় গিয়েছি, দেখেছি মেয়েরা বোরকা পরেও জিমে আসে। তাদের যে আগ্রহ নেই, তা নয়। তারা কটু কথারও শিকার হচ্ছেন। কিন্তু প্রতিবাদ করা শিখতে হবে। বডি বিল্ডিংয়ে শরীরের পাশাপাশি মনের আত্মবিশ্বাসটাও তৈরি হয়। মনে রাখতে হবে, ভালো কাজেই এগোচ্ছি। মানুষের বাজে কথা কীভাবে সামলাতে হয়, সেটাও শেখার আছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত