Ajker Patrika

শহীদ কাদরীর চোখে সরষে ফুল

সম্পাদকীয়
শহীদ কাদরীর চোখে সরষে ফুল

সাংবাদিক বিভুরঞ্জন সরকার তখন অসুস্থ। তাঁর জন্য তহবিল সংগ্রহ করা হচ্ছে নিউইয়র্কে। স্বভাবতই সেসব আলোচনায় চিকিৎসা-সংক্রান্ত বিষয়ও উঠে আসছে। কবি শহীদ কাদরী তখন কিডনির সমস্যায় ভুগছিলেন। বোস্টন থেকে তাঁরা তখন নিউইয়র্ক চলে এসেছেন। তাতে চিকিৎসায় সুবিধা হবে।

আলোচনার সময়ই শহীদ কাদরী প্রায় ঘটতে যাওয়া ভয়াবহ এক ঘটনার কথা বলছিলেন। সে সময় কেন যেন তাঁর চোখে লালচে ভাব। এর সঙ্গে কিডনির কোনো সম্পর্ক আছে কি না, জানার জন্য হাসপাতালে গেলেন তিনি। নার্স বলল, ‘ও কিছু না। নিয়মিত চোখের ড্রপ দিলেই সেরে যাবে।’ হাসপাতালের বড় চিকিৎসক দেখে বললেন, ‘ভয়ের কিছু নেই। তুমি যে ড্রপ দিচ্ছো, সেটা চোখের গোড়ায় পৌঁছাচ্ছে না। সে জন্য তোমাকে ‘‘শট’’ দিতে হবে। চোখে ওষুধ দেওয়ার জন্য একধরনের ‘‘গান’’ আছে। তা চোখের কাছে এনে ফস করে টিপে দিতে হবে। সে জন্য তোমাকে যেতে হবে আরেক স্পেশালিস্টের কাছে।’

সেই স্পেশালিস্টের কাছে যাওয়ার পর তিনি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে বললেন, ‘ইনফেকশন আছে চোখের নিচে। আমি তোমার ডান চোখটা প্রথমে কেটে বের করব। তারপর চোখের নিচের অংশটুকু ভালোভাবে পরিষ্কার করে ধুয়ে-মুছে আবার জায়গামতো লাগিয়ে দেব।’

অপারেশনের তারিখ ঠিক করে একটা কাগজ তিনি ধরিয়ে দিলেন শহীদ কাদরীর হাতে।

ডাক্তারের কথা শুনে শহীদ কাদরী চোখে সরষে ফুল দেখতে লাগলেন। তিনি সেকেন্ড ওপেনিয়ন নেওয়ার জন্য তাঁর নিয়মিত ডাক্তারের কাছে গেলেন। তিনি অবাক হয়ে বললেন, ‘চোখ উপড়ে ফেলবে! মাথা খারাপ নাকি! আই ড্রপেই কাজ হবে।’

আই ড্রপ দিয়ে সত্যিই চোখের লালচে ভাব কমে গেল। অপারেশনের জন্য হাসপাতালের পথ মাড়ালেন না তিনি। কিন্তু হাসপাতাল থেকে ঠিকই এল ফোন। ‘কী ব্যাপার, তুমি কখন আসছ?’

শহীদ কাদরী বললেন, ‘আমার আর অপারেশনের প্রয়োজন নেই। আমি ভালো হয়ে গেছি।’ 

সূত্র: হাসান ফেরদৌস, অনেক কথা অল্পকথায়, পৃষ্ঠা ৪১-৪২  

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত