Ajker Patrika

স্ট্রোক ঠেকাতে যা করতে পারেন

অধ্যাপক ডা. শুভাগত চৌধুরী
আপডেট : ২১ আগস্ট ২০২২, ১০: ১৫
স্ট্রোক ঠেকাতে যা করতে পারেন

আজকাল স্ট্রোক কেবল বয়স্ক ব্যক্তিদের হয় তা নয়, হচ্ছে তরুণদেরও। বিজ্ঞানীরা বলেন, আগেভাগে কিছু টেস্ট করে এর মাত্রা জানলে ঝুঁকি অনেক কমানো যায়।

রক্তের চাপ, শরীরের ওজন, কোলেস্টেরল আর রক্তে চিনি—এগুলোর মাত্রা স্বাস্থ্য গঠনের ক্ষেত্রে যথেষ্ট ভূমিকা রাখে। এগুলোর মাত্রা অস্বাভাবিক থাকলে দেহে রক্তনালিতে অবরোধের আশঙ্কা বেশি হয়ে যায়। এই অবরোধ হার্টে হলে হয় হার্ট অ্যাটাক। যখন তা ঘটে মগজে, তখন সেটাকে বলে স্ট্রোক।

আমাদের প্রচলিত ধারণা যে স্ট্রোক কেবল হয় বয়স্ক ব্যক্তিদের। কিন্তু ক্রমেই এ ধারণা বদলাচ্ছে। স্ট্রোক আজকাল হচ্ছে তরুণ ও মধ্যবয়সীদের। ২০২০ সালে একটি গবেষণায় দেখা যায়, স্ট্রোক হওয়ার পেছনে যেসব কারণ রয়েছে, যেমন উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, নিষ্ক্রিয় জীবন, স্থূলতা, ধূমপান, বায়ুদূষণ ইত্যাদি, এগুলো তরুণ ও প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তিদের মধ্যেও বাড়ছে।

তাই ৩৫ বছর বয়স থেকেই কিছু শারীরিক পরীক্ষা করা উচিত।

স্ট্রোক হওয়ার আশঙ্কা কমানোর জন্য দরকার প্রতিরোধ। মাত্র ৩০ মিনিট জগিংয়ের মতো সহজ একটি ব্যায়াম স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে পারে অনেকাংশে।

স্ট্রোক হওয়ার ঝুঁকি কমাতে অনেক বড় রকমের পরিবর্তন আনতে হতে পারে জীবনশৈলীতে। বাংলাদেশে স্ট্রোকের ব্যাপ্তি ১ হাজার জনে ১১ দশমিক ৩৯ জন। তবে এটি দ্বিগুণ হচ্ছে পুরুষদের মধ্যে। আর সেটার হার বয়স্ক ব্যক্তিদের মধ্যে বেশি। পরিসংখ্যান জানাচ্ছে, এর হার বেশি ময়মনসিংহ অঞ্চলে আর কম রাজশাহী অঞ্চলে। এদের তিন-চতুর্থাংশের ইস্কিমিক স্ট্রোক।

স্ট্রোকের রোগীদের মধ্যে ছিল উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, ডিসলিপিডিমিয়া ও তামাকের ব্যবহার।

স্ট্রোক দুই ধরনের
ইস্কিমিক স্ট্রোক। এর ৭৫ শতাংশ ঘটে যখন মস্তিষ্কে রক্ত সরবরাহ করে এমন ধমনি রক্তের জমাট পিণ্ড অবরোধ করে রাখে। মেদপুঞ্জ মানে প্লাক অবরোধ করতে পারে রক্তনালি। মস্তিষ্কে রক্তের অভাবে এর অংশবিশেষ নষ্ট হয়।

হেমোরেজিক স্ট্রোক। এটি বিপজ্জনক। মস্তিষ্কের কোনো রক্তনালি চুইয়ে যখন রক্ত পড়ে, সেই রক্ত চাপ দেয় মস্তিষ্কের কোষে। ফলে ক্ষতি হয় বেশ খানিকটা। হেমোরেজিক স্ট্রোক কোনো পূর্বসতর্কতা ছাড়াই হয়ে থাকে।

আধুনিক জীবনের মানসিক চাপ, সেই সঙ্গে অস্বাস্থ্যকর খাবার ও লাইফস্টাইল এর জন্য দায়ী। হেমোরেজিক স্ট্রোকের ক্ষেত্রে বয়স, চেতনার মান, কখন আনা হলো হাসপাতালে, কী পরিমাণ রক্তক্ষরণ হলো—এসব বিচার্য বিষয়। এই রোগের চিকিৎসার জন্য প্রতিটি মিনিট গুরুত্বপূর্ণ।

স্ট্রোকের সতর্ক সংকেত

  • বাহু বা নিম্নাঙ্গে অবশ বা দুর্বল ভাব
  • কথায় জড়তা
  • ঝাপসা দৃষ্টি
  • মুখের একদিক ঝুলে পড়া
  • শরীরের ভারসাম্য হারানো
  • মাথা ঝিমঝিম করা বা মাথা ঘোরা।

স্ট্রোক হলে এরপর তার পুনর্বাসন পরিবারের জন্য চ্যালেঞ্জের বিষয়। তাই এর ঝুঁকি এড়াতে সুস্থ মন, সুষম খাদ্য, নুন-চর্বি ছাড়া খাবার, প্রচুর শাকসবজি, ফল ও মাছ খেতে হবে।

নিয়মিত অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটা বা জগিং কিংবা সাঁতার কাটা, সাইকেল চালানো, ভারোত্তোলন, স্ট্রেচিং করতে হবে।

মানসিক চাপ কমাতে ধ্যানচর্চা, প্রাণায়াম, যোগব্যায়াম করতে হবে। এ ছাড়া নিয়মিত স্বাস্থ্যপরীক্ষা করাতে হবে।

অধ্যাপক ডা. শুভাগত চৌধুরী, সাবেক অধ্যক্ষচট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত