Ajker Patrika

ঋত্বিক ঘটক

সম্পাদকীয়
ঋত্বিক ঘটক

ঋত্বিক কুমার ঘটক একজন প্রতিবাদী চলচ্চিত্রকার। একই সঙ্গে ছিলেন নাট্যকার, লেখক ও অভিনেতা। তাঁর সিনেমায় প্রতিবাদই প্রধান বিষয় ছিল। তিনি তাঁর সিনেমা সম্পর্কে বলেছেন, ‘আমি প্রতিমুহূর্তে আপনাকে ধাক্কা দিয়ে বোঝাব যে আমি আপনাকে সস্তা আনন্দ দিতে আসিনি।’

সারা জীবন বাউন্ডুলে জীবনযাপন করেছেন। তাঁর রোজকার জীবনযাপনে দেখা যেত, এক হাতে জ্বলন্ত পাতার বিড়ি, আরেক হাতে বাংলা মদের বোতল নিয়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়াচ্ছেন জীর্ণ-শীর্ণ শরীরের মানুষটি। পরনে থাকত পুরোনো ময়লা সাদা পায়জামা-পাঞ্জাবি। এলোমেলো চুলের সঙ্গে খোঁচা খোঁচা দাড়ি আর চোখে কালো ফ্রেমের চশমা।

তাঁর জন্ম পুরান ঢাকার জিন্দাবাজারে। তবে শৈশবের একটা বড় সময় কেটেছে রাজশাহী শহরে। তিনি রাজশাহীর কলেজিয়েট স্কুল থেকে ম্যাট্রিক এবং রাজশাহী কলেজ থেকে আইএ পাস করেন। এরপর দেশভাগের পর পাড়ি জমান কলকাতায়। নিজের পিতৃভূমি ছেড়ে যাওয়ার যন্ত্রণা তাঁকে আজীবন জ্বালিয়েছে। আর এর প্রভাব পড়েছে তাঁর নির্মিত চলচ্চিত্রে।

‘ভাবো, ভাবা প্র্যাকটিস করো’—তাঁর বিখ্যাত উক্তি। আজীবন চলচ্চিত্রশিল্প নিয়ে ভেবেছেন এবং কাজ করেছেন। তিনি নিজের সম্পর্কে বলতেন, ‘আমি এক মাতাল। ভাঙা বুদ্ধিজীবী, ব্রোকেন ইন্টেলেকচুয়াল।’

মাত্র ৫০ বা ৫১ বছরের জীবনে ৮টি পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছিলেন। আর স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র, তথ্যচিত্র ও প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণ করেছিলেন সব মিলিয়ে ১০টি। আরও অনেক কাহিনিচিত্র, তথ্যচিত্রের কাজে হাত দিয়েও শেষ করতে পারেননি। এই হাতে গোনা কয়েকটি কাজ দিয়েই বিশ্বের শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্রকারদের কাতারে নিজের স্থান করে নিয়েছিলেন তিনি। তবে জীবদ্দশায় বেশির ভাগ সিনেমার মুক্তি মেলেনি রাজনৈতিক কারণে। কিন্তু তিনি আপস করেননি।

স্বাধীন বাংলাদেশে রাষ্ট্রীয় অতিথি নির্মাতা হয়ে এসে তিনি অদ্বৈত মল্লবর্মণের ‘তিতাস একটি নদীর নাম’ উপন্যাসকে চলচ্চিত্রে রূপ দেন, যা মুক্তি পায় ১৯৭৩ সালে।

সৃষ্টিশীল এই চলচ্চিত্রকার মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে তিন বছর হাসপাতালে থাকার পর ১৯৭৬ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি মৃত্যুবরণ করেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত