Ajker Patrika

শুকিয়ে যাচ্ছে কীর্তনখোলা, কান্না শুনছে না কেউ

খান রফিক, বরিশাল
শুকিয়ে যাচ্ছে কীর্তনখোলা, কান্না শুনছে না কেউ

নগরঘেঁষা বন্দরসংলগ্ন কীর্তনখোলার উত্তরে কয়েক একর চর জেগে উঠেছে। মূলত আশির দশকে প্রায় ২৫ একর জমির ওপর এই চর সৃষ্টি হয় রসুলপুর ঘিরে। এর ফলে ধীরে ধীরে ছোট হয়ে আসছে বরিশালের কীর্তনখোলা নদী। এ ছাড়া প্রভাবশালীরা বিস্তীর্ণ এই চর দখলের পাঁয়তারা করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এতে কীর্তনখোলার স্বাভাবিক গতিই পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছে।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা মনে করেন, রসুলপুরের দুই পাশের জেগে ওঠা প্রায় এক কিলোমিটার চরের বাঁক কেটে না দেওয়ায় লঞ্চ চলাচল বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এতে বন্দরও বন্ধ হয়ে যেতে পারে। যদিও চর কেটে কীর্তনখোলার গতি স্বাভাবিক করার কোনো পরিকল্পনা নেই বিআইডব্লিউটিএর।

সম্প্রতি বরিশাল নৌবন্দরের বিলাসবহুল লঞ্চের ছাদে উঠে দেখা গেল, একতলা লঞ্চঘাটের উত্তরে নদীর কাছাকাছি বহু লোক হেঁটে এসে গোসল করছে। ভাটার সময় ৩০-৪০ হাত নদীর ভেতরে চলে আসা যায় বলে রসুলপুরের বাসিন্দারা জানান। চরে একটি মালবাহী জাহাজও ভিড়তে দেখা গেছে।

সুন্দরবন লঞ্চের মাস্টার মজিবর রহমান বলেন, রসুলপুর চরে নতুন করে দেড় থেকে দুই একর জমিতে পলি জমেছে। তাই একতলা লঞ্চগুলোকে ঘুরে যেতে হয়।বরিশাল জেলা কৃষক ফেডারেশনের সভাপতি হারুন ভান্ডারী আশির দশক থেকে রসুলপুর চরের বাসিন্দা ছিলেন। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ২০০৭ সালের গেজেটে এটি নগরের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের আওতাধীন রসুলপুর চর হিসেবে উল্লেখ করা হয়। রসুলপুর চরের আয়তন ২৫ একর ২৩ শতাংশ, যার পুরোটাই খাসজমি। সেখানে সহস্রাধিক বসতি রয়েছে।

হারুন ভান্ডারী আরও বলেন, রসুলপুর চরের দক্ষিণ অংশে কীর্তনখোলা নদীতে দুই একরের মতো চর জেগেছে। এই ৩০-৪০ হাত কীর্তনখোলা নদীর অংশ। একসময় রসুলপুরের ওপর দিয়ে স্টিমার ভিড়ত। সেই রসুলপুর চর ক্রমেই বন্দরের দিকে এগোচ্ছে। প্রায় এক কিলোমিটারের নতুন চর কেটে পানিপ্রবাহ স্বাভাবিক না করলে নদী ছোট হতে হতে একসময় বন্দরই থাকবে না। এমনকি রসুলপুরের পূর্ব পাশেও বেড়া দিয়ে দখল করা  হয়ে গেছে। বর্তমানে বন্দরসংলগ্ন যে চর জেগেছে, তা-ও দখলের পাঁয়তারা চলছে।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) বরিশালের সমন্বয়ক রফিকুল আলম বলেন, ‘সম্প্রতি কীর্তনখোলা পরিদর্শন করে বিআইডব্লিউটিএকে রসুলপুর চরের বাঁকের কোনা কাটতে বলেছি। এটি কেটে স্রোত স্বাভাবিক না করলে নদী দিক পরিবর্তন করবে।’

কীর্তনখোলা খননের দায়িত্বে থাকা ড্রেজার সুরমার ইনচার্জ রফিকুল ইসলাম বলেন, খননকাজ কবে শেষ হবে, তা তাঁর জানা নেই। চর কেটে বাঁক সোজা করা হবে কি না, তা-ও তিনি জানেন না।

ড্রেজিং বিভাগের উপসহকারী প্রকৌশলী জহিরুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, কীর্তনখোলায় প্রায় এক লাখ ঘনমিটার পলি খননের কথা ছিল, যা সম্পন্ন করতে চলতি মাস লাগবে।

বন্দরের ছোট লঞ্চঘাটসংলগ্ন রসুলপুরে জেগে ওঠা চর কেটে নদীশাসনের কোনো পরিকল্পনা আছে কি না, এ প্রসঙ্গে জহিরুল ইসলাম বলেন, এখন পর্যন্ত নেই, ভবিষ্যতে নির্দেশনা থাকলে করা হবে। তাহলে ধীরে ধীরে নৌবন্দর চরে পরিণত হবে কি না, এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, লঞ্চ চলাচলে যেন বিঘ্ন না ঘটে, সেই ধরনের খনন চলছে। বন্দর টিকিয়ে রাখতে যেটুকু খনন লাগবে, সেটুকু ড্রেজিং করা হবে।

বিআইডব্লিউটিএর নৌ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের উপপরিচালক কবির হোসেন বলেন, গত ৫ ডিসেম্বর থেকে কীর্তনখোলায় ড্রেজিং চলছে। শুষ্ক মৌসুমে এখন হেঁটে নদীর মধ্যে চলে আসা যায়। এই চর কেটে বাঁক সোজা না করলে বন্দরই ঝুঁকিতে পড়বে। এখন বর্তমানে নদী খনন হচ্ছে। রসুলপুর ঘিরে থাকা চর কাটা হচ্ছে না। কাটার পরিকল্পনা আছে কি না, তা-ও তিনি জানেন না।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

পেহেলগাম হামলা: ধরা খেয়ে গেল মোদির কাশ্মীর ন্যারেটিভ

বিবাহিতদের পুলিশ ক্যাডারে সুপারিশ না করার প্রস্তাব

ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনা: বিমানবাহিনীকে সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিতে বললেন প্রধান উপদেষ্টা

সারজিসের সামনেই বগুড়ায় এনসিপি ও বৈষম্যবিরোধীদের মধ্যে হাতাহাতি-সংঘর্ষ

‘ঘুষের জন্য’ ৯১টি ফাইল আটকে রাখেন মাউশির ডিডি: দুদক

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত