Ajker Patrika

বারী সিদ্দিকীর বাউলবাড়ি

ফয়সাল চৌধুরী, আটপাড়া (নেত্রকোনা)
আপডেট : ১৬ নভেম্বর ২০২২, ০৮: ৫১
বারী সিদ্দিকীর বাউলবাড়ি

হেমন্তের দিনে কিছুটা বিষণ্ন সুর দেখা দেয় নেত্রকোনার করালী গ্রামে। এখন আর সেখানে মোহন বাঁশি বাজে না। অথচ এ গ্রামে দীর্ঘ সময় কাটিয়ে দেওয়া বারী সিদ্দিকী হ্যামিলিনের বাঁশিওয়ালার মতো বাঁশি বাজিয়ে উদ্বেলিত করতে চেয়েছিলেন তাঁর শ্রোতাদের। কিন্তু প্রকৃতির অমোঘ নিয়মে তিনিও হয়ে গেছেন আসমান থেকে খসে পড়া নক্ষত্র।

যে করালী গ্রামে বারী সিদ্দিকীর সমাধি, সেটি তাঁর জন্মস্থান নয়। ১৯৫৬ সালের ১৫ নভেম্বর নেত্রকোনা সদর উপজেলার মৌগাতী ইউনিয়নের ফচিকা গ্রামের পৈতৃক বাড়িতে জন্মেছিলেন উপমহাদেশের প্রখ্যাত এই সংগীত সাধক।

জন্মস্থান ফচিকা গ্রাম হলেও সেখানে তিনি থাকেননি। পরবর্তী সময়ে একই উপজেলার রৌহা ইউনিয়নের কারলী গ্রামে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন তিনি এবং সেখানেই চিরনিদ্রায় শায়িত হয়েছেন। এটি মূলত তাঁর শ্বশুরবাড়ির গ্রাম। সেখানেই প্রায় এক যুগ আগে ১২০ শতাংশ জমিতে বারী সিদ্দিকী নির্মাণ করেন ‘বাউলবাড়ি’। সে বাড়ির সঙ্গে আছে পুকুর এবং একটি মসজিদ। তাঁর ইচ্ছা ছিল, বাউলেরা তাঁর বাড়িতে এলে থাকবেন ইচ্ছেমতো। সে জন্য আলাদা থাকার জায়গাও ছিল। তবে বাড়ির সীমানাপ্রাচীর নির্মাণ শেষ করতে পারেননি বারী সিদ্দিকী।

শূন্য বাউলবাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে থাকি আমরা। অনেকের কাছে জানতে চাই তাঁর সঙ্গে জমানো স্মৃতি।

বারী সিদ্দিকীর শাশুড়ি সালেহা আক্তার জানান, ব্যক্তিগত জীবনে বড় ভালো মানুষ ছিলেন তিনি। এখনো ঢাকার সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব অনেকেই তাঁদের পরিবারের খোঁজখবর নেন বলেও জানান সালেহা আক্তার।

বারী সিদ্দিকীর সম্বন্ধী এবং ছেলেবেলার বন্ধু মো. ওমর ফারুক স্মৃতির ঝাঁপি খুলে বসেন আমাদের সামনে। তিনি বলেন, ‘আমরা সমবয়সী ছিলাম। সে আঞ্জুমান আদর্শ সরকারি বিদ্যালয়ের ছাত্র ছিল। ছাত্র হিসেবে বারী সিদ্দিকী সব সময় ভালো ছিল। ১৯৭৯ সালে সে এসএসসি পরীক্ষা দেয়। তখন ইংরেজি বিষয়ে লেটার পেয়েছিল। তখন ঢাকা বোর্ড কর্তৃপক্ষ তার রেজাল্ট স্থগিত করেছিল। সে সময় লেটার পাওয়াটা একটা অন্য রকম ব্যাপার ছিল। খুব কঠিনও ছিল। পরে বোর্ড কর্তৃপক্ষ তার ইন্টারভিউ নিয়েছিল। মানবিক বিভাগে সে ফার্স্ট ডিভিশন পেয়েছিল, যত দূর মনে পড়ে।’

নবনাট্য সংঘ নেত্রকোনা জেলা শাখার সভাপতি সাংবাদিক সালাহউদ্দীন খান রুবেল বলেন, উপমহাদেশের প্রখ্যাত বংশীবাদক ও সংগীতশিল্পী বারী সিদ্দিকী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা শেষ করে বাউলগানের পাশাপাশি উচ্চাঙ্গসংগীতে তালিম নেন ভারতে। সেখান থেকে ফিরে এসে তিনি উকিল মুন্সি, জালাল উদ্দীন খাঁর গান সংগ্রহ করেন এবং গাইতে শুরু করেন। এ ছাড়া শ্রদ্ধেয় গীতিকার শহীদুল্লাহ্ ফরাজির লেখা এবং তাঁর নিজের লেখা গান সুর করে ও গেয়ে জনপ্রিয়তা পান। এশিয়া মহাদেশের মধ্যে অন্যতম স্বনামধন্য শিল্পী হিসেবে মনে করা হয় তাঁকে।  

বারী সিদ্দিকীর বাউলবাড়ি দেখাশোনা করেন মো. আব্দুল মালেক। তিনি জানান, প্রতিবছরের ১৫ নভেম্বর তাঁর জন্মদিনে এ বাড়িতে বাউলগানের আসর বসে। জেলা শহরসহ বিভিন্ন জায়গা থেকে মানুষ আসেন সে অনুষ্ঠানে। গান শোনেন এবং শ্রদ্ধা জানান বারী সিদ্দিকীর স্মৃতির প্রতি। নেত্রকোনা শহরের চান খাঁর মোড় এলাকায় একটি বাড়ি থাকলেও ঢাকা থেকে নেত্রকোনায় এলে বাউলবাড়িতেই থাকতেন বারী সিদ্দিকী, সেখানেই সময় কাটাতেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

যুদ্ধের পর এ যেন এক নতুন ইরান, জনগণের মতো বদলে গেছে সরকারও

তেহরান ওপর থেকে সুন্দর, একদিন যেতে চাই: ইরানে বোমা ফেলা ইসরায়েলি পাইলট

ইরানের পরমাণু কর্মসূচিতে ৩০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের কথা ভাবছেন ট্রাম্প

সাইপ্রাসে বিপুল জমি কিনছে ইসরায়েলিরা, দেশ বেদখলের শঙ্কা রাজনীতিবিদদের

হোয়াটসঅ্যাপের ব্যবহার নিষিদ্ধ করল বিমান বাংলাদেশ

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত