Ajker Patrika

আহমদ শরীফ

সম্পাদকীয়
আহমদ শরীফ

অধ্যাপক, গবেষক, প্রাবন্ধিক এবং সমাজ রূপান্তরকামী বুদ্ধিজীবী—এ রকম বহুধা পরিচয়ে ভূষিত ছিলেন আহমদ শরীফ। ১৯২১ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রামের পটিয়ার সুচক্রদণ্ডী গ্রামে তাঁর জন্ম। চাচা খ্যাতনামা পুথি সংগ্রাহক আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ ছিলেন তাঁর সব কাজের প্রেরণার উৎস। তিনি পড়ালেখা করেন পটিয়া হাইস্কুল, চট্টগ্রাম কলেজ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে।

তিনি চলতি হাওয়ার পন্থী ছিলেন না। জীবনব্যাপী তিনি ধর্মান্ধতা, মৌলবাদ, সেনাশাসন, স্বৈরাচার এবং স্বাধীনতাবিরোধীদের অপতৎপরতার বিরুদ্ধে সরব ছিলেন। এ জন্য তাঁকে সরকার ও ধর্মান্ধদের রোষানলে পড়তে হয়েছিল। তাঁর স্পষ্টভাষী বক্তব্যের কারণে উগ্রবাদীরা ‘মুরতাদ’ আখ্যা দিয়ে তাঁর ফাঁসি দাবি করেছিল। কিন্তু স্বাধীন মত প্রকাশ করা থেকে কখনো বিরত থাকেননি।

উদার মানবতাবাদী ও মার্ক্সবাদের যৌথ প্রভাবে গঠিত হয়েছিল তাঁর চিন্তক সত্তা। মধ্যযুগের সাহিত্যের প্রতি তাঁর অসাধারণ নিষ্ঠা দেখে তাঁর ছাত্র আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ লিখেছিলেন, ‘অন্ধকার ঘরে বসে আহমদ শরীফ সমগ্র মধ্যযুগ করেছেন জরিপ।’ বাংলা সাহিত্যের মধ্যযুগ, দেশ, সংস্কৃতি, ইতিহাস, দর্শন, নৃতত্ত্ব, ধর্ম, ভাষা, রাজনীতি, সমাজনীতি ইত্যাদি বিষয়ে প্রচুর লিখেছেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩৩ বছর শিক্ষকতাকালে তিনি বাংলা বিভাগের চেয়ারম্যান, কলা অনুষদের ডিন, সিন্ডিকেট সদস্য এবং শিক্ষক সমিতির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকদের মধ্যে তিনি একজন প্রভাবশালী ব্যক্তিও ছিলেন।

মুক্তিযুদ্ধ শুরুর সময়ে পাকিস্তানি অপশাসনের বিরুদ্ধে সংগ্রামে উজ্জীবিত করার জন্য তিনি কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পূর্ব বাংলার লেখকদের শপথবাক্য পাঠ করান। বিভিন্ন প্রগতিশীল উদ্যোগ ও আন্দোলনের সঙ্গে তিনি যুক্ত ছিলেন। কিন্তু কোনো দল বা সংগঠনের মুখাপেক্ষী হয়ে তিনি কখনো কথা বলেননি। মৌলিক অধিকার সংরক্ষণ ও আইন সাহায্য কমিটি, বাংলাদেশ লেখক শিবির, কর্নেল তাহের সংসদ, স্বদেশ চিন্তা সংঘসহ বিভিন্ন সংগঠনে তিনি সক্রিয় ছিলেন।

মৃত্যুর আগেই তিনি তাঁর মরদেহ উৎসর্গ করে গিয়েছিলেন চিকিৎসাবিজ্ঞানের ছাত্রদের জন্য।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত