Ajker Patrika

কর্মকর্তা সেজে টাকা নিয়ে উধাও

কুমারখালী (কুষ্টিয়া) প্রতিনিধি
আপডেট : ০১ ডিসেম্বর ২০২১, ১৫: ৩১
কর্মকর্তা সেজে টাকা নিয়ে উধাও

কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে সরকারের কাছ থেকে কৃষি বীজ কিনে ডিলারদের কাছে বিক্রির কথা বলে কয়েক কোটি টাকা নিয়ে আতিকুর রহমান মিনান (২৮) নামে এক যুবক উধাও হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় একাধিক ভুক্তভোগী থানায় জিডি করেছেন। মিনার উপজেলার নন্দনালপুর ইউনিয়নের বুজরুক দুর্গাপুর গ্রামের আকমল হোসেনের ছেলে।

জিডি ও ভুক্তভোগীদের থেকে জানা যায়, মিনান নিজেকে সরকারি বীজ প্রকল্পের কর্মকর্তা হিসেবে দাবি করতেন। তাঁর মাধ্যমে ডিলারদের কাছে সরকারি বীজ বিক্রি হয়। তাঁর কাছে বিনিয়োগ করলে ডিলার এবং সরকারের মধ্যভোগী ব্যবসায়ী হিসেবে লাভের অংশ পাওয়া যাবে। এভাবে মিনান কয়েকজনের থেকে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নেন।

কুমারখালী পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের এলংগীপাড়ার মো. নয়ন শেখ। তিনি বলেন, ‘প্রায় দেড় বছর আগে মিনানের সঙ্গে তাঁর ভায়রা ভাই সোনায়ের মাধ্যমে পরিচয় হয়। পরিচয়ের সুবাদে মিনান বলেন, তিনি বাংলাদেশ বীজ প্রকল্পে (বিএডিসি) চাকরি করেন। সেখানে সরকারি কৃষি বীজ আসে। সেগুলো তিনি (মিনান) ক্রয় করে সরাসরি ডিলারদের কাছে বিক্রি করেন। এতে প্রচুর লাভ। এ কথা শুনে প্রথমে ১০ লাখ টাকা ৩০০ টাকার স্ট্যাম্পের মাধ্যমে তিনি নেন। বিপরীতে প্রতি মাসে ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা লাভের অংশ দিতেন। এভাবে তিনি বিশ্বাস অর্জন করেন এবং দেড় বছরে প্রায় ২৫ লাখ টাকা নেন। কিন্তু হঠাৎ চলতি মাসের ১ নভেম্বর মিনান পালিয়েছেন। তাঁর ফোন নম্বর বন্ধ পাচ্ছি। কোথাও খুঁজে পাচ্ছি না।’

কুমারখালী পৌরসভার এলংগীপাড়ার মৃত আব্দুল গফুরের ছেলে শরিফুল ইসলাম সোনায়। তিনি মিনানের ভায়রা ভাই। সোনায় বলেন, ‘সরকারি বীজ ব্যবসার কথা বলে দেড় বছরে প্রায় ৬০ লাখ টাকা নিয়েছেন মিনান। মাসে মাসে ব্যবসায়ের লাভ দিতেন। হঠাৎ তিনি গা ঢাকা দিয়েছেন। আমি কুষ্টিয়া কোর্টে মামলা করেছি।’

প্রতারণার শিকার হয়েছেন কুমারখালী পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের কাজীপাড়া রেলগেট এলাকার সিয়ান্ত আহমেদ। তিনি প্রায় ৯৬ লাখ টাকা প্রতারণার শিকার হয়েছেন। সিয়ান্ত বলেন, ‘স্বজনদের কাছ থেকে প্রায় ৯৬ লাখ টাকা নিয়ে দিয়েছি মিনানকে। তিনি বিশ্বাসের অমর্যাদা করেছেন। ওঁর বাড়িতে খোঁজ নিয়েছি। পরিবারের সঙ্গে ওঁর কোনো যোগাযোগ নেই।’

জানা গেছে, ঢাকা জেলার উত্তরখান থানার মাউছাইদ গ্রামের হামিদ ভূঁইয়ার ছেলে নোমান বাশারও এই মিনানের প্রতারণার শিকার হয়েছেন। তাঁর খোয়া গেছে প্রায় সাড়ে ৪ কোটি টাকা। এই টাকা লেনদেনে স্ট্যাম্পে ১ নম্বর সাক্ষী হিসেবে স্বাক্ষর করেছেন মিনানের স্ত্রী ইয়াসমীন তাবাসছুম। নোমান বলেন, ‘ফুপাতো ভাইয়ের মাধ্যমে মিনানের সঙ্গে পরিচয়। ব্যবসায়ের পরিকল্পনা ভালো লেগেছিল। ধীরে ধীরে আত্মীয়স্বজনসহ বিভিন্ন মানুষের কাছ থেকে প্রায় সাড়ে ৪ কোটি টাকা দিয়েছি। কিন্তু মাসখানেক ধরে মিনানের খোঁজ পাচ্ছি না। নিঃস্ব হয়ে পাগলের মতো খোঁজাখুঁজি করছি। না পেয়ে কুমারখালী থানায় জিডি করেছি।’

মিনানের স্ত্রী ইয়াসমীন তাবাসছুম বলেন, ‘আমাকে স্বাক্ষর করতে বলেছিল, করেছি। কিন্তু কিসের টাকা জানতাম না। আর আমার স্বামী কি করতেন তাও জানতাম না। আমি কিছু জানি না।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমার স্বামী এক মাস ধরে নিখোঁজ। এ ঘটনায় থানায় জিডি করেছি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত