Ajker Patrika

তেলের দামে নাজেহাল নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবার

শিপুল ইসলাম, তারাগঞ্জ
তেলের দামে নাজেহাল নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবার

‘সরকারি লোক টেলিভিশনোত ভাষণ দিবে, তোমরা পেপারোত নেখমেন তেলের দাম কমছে। হামরাও সেগল্যা দেখি আর পড়ি। কিন্তু দোকানিরা তো কম নেয় না। ওই আগের দামে বেচায়। দোকানিক যদি সরকারে কম দামের কথা কন, তা ওমরা টিসিবির মাল নিবার কয়। সরকার তো আর সবাকে কার্ড দেয় নাই।’

তারাগঞ্জের খিয়ারজুম্মা বাজারে নিত্যপণ্যের দামের খোঁজ নিতে গিয়ে ক্ষিপ্ত হয়ে কথাগুলো বলছিলেন দোয়ালীপাড়া গ্রামের মিশন মিয়া।
মিশনের কথা শেষ না হতেই পাশে থাকা শেরমস্ত গ্রামের গোলাপ মিয়া জানান, তাঁরা টিভি থেকে জানতে পেরেছেন সয়াবিন তেলের লিটার ১৩৬ টাকা। কিন্তু তাঁদের কিনতে হচ্ছে ১৮০ টাকায়। দোকানিরা বলছেন, তেলের দাম কমেনি। তাহলে টিভিতে সান্ত্বনা দেওয়ার জন্য দাম কমিয়ে বলা হয় কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তিনি।
ভোজ্যতেলের মূল্য হ্রাস নিয়ে এ আক্ষেপ শুধু মিশন ও গোলাপের একার নয়, উপজেলার হাজারো নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবারেরও। সরকারি ঘোষণার পরও তেলসহ নিত্যপণ্যের দাম খুচরা পর্যায়ে না কমায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন তাঁরা।
উপজেলার বিভিন্ন বাজারে ১ থেকে ৫ এপ্রিল পর্যন্ত খুচরা পর্যায়ে প্রতি লিটার সয়াবিন তেলের দাম ছিল ১৫০ থেকে ১৫৫ টাকা। গত শুক্রবার তা বাজারভেদে বিক্রি হয়েছে ১৭৫ থেকে ১৮০ টাকায়। অথচ খোলা সয়াবিন তেলের সরকারনির্ধারিত দাম প্রতি লিটার ১৩৬ টাকা।
এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে প্রতি লিটার পাম তেলের দাম ছিল ১৪০ থেকে ১৪৫ টাকা। শুক্রবার তা বিক্রি হয়েছে ১৬৫ থেকে ১৬৮ টাকা। আর সরকারনির্ধারিত দাম হচ্ছে ১৩০ টাকা।
ইকরচালীর হাটে প্লাস্টিকের বোতলে করে চার সদস্যের সংসারের জন্য খোলা সয়াবিন তেল নিতে এসেছিলেন মেনানগর গ্রামের দিনমজুর নামজুল হোসেন। দিনমজুরির টাকায় তাঁকে প্রতিদিন চাল, ডাল, তেল কিনতে হয়। তিনি এক পোয়া তেল ৪৫ টাকায় বোতলে ভরে নিয়ে দীর্ঘশ্বাস ছাড়েন। 
নাজমুল বলেন, ‘সামনে ঈদ, বাঁচমো কেমনে! সারা দিন কাম করি ৩৫০ টাকা পাই। তাক দিয়া হাটোত ঠিক মতোন সংসারের খরচে হয় না। সউগ জিনিসের দাম বাড়ছে। খালি জিনিসের দাম বাড়লে হইবে কন? কৃষাণের দামও তো বাড়ার নাগবে। তেল, চাল আর নুন কিনতে কামাইয়ের টাকা শ্যাষ। সামনোত ঈদে ছাওয়ার ঘরে কাপড় কিনিম কী দিয়া!’

ভোজ্যতেলের দাম বাড়ার কারণ হিসেবে খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, ঈদের বাজারে চাহিদা বৃদ্ধি ও ঈদের পর দাম বাড়ার সম্ভাবনায় পাইকারি ব্যবসায়ীরা তেল মজুত করে রাখছেন। তাঁরা খুচরা বাজারে এখন তেল ছাড়ছেন খুব কম। দামও বেশি নিচ্ছেন। তাই খুচরা পর্যায়ে ভোক্তাদের কাছে দাম বাড়ানো হয়েছে।

খোলা তেলে সরকারনির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি নেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে ইকরচালী বাজারের খুচরা বিক্রেতা মঈনুল মিয়া বলেন, ‘ডিলারের কাছে আমাদের বেশি দামে কেনা। তাইলে সরকার নির্ধারিত দামে কেমন করে বিক্রি করি কন? তাতে তো বড় লোকসান হইবে। বিশ্বাস না হইলে হামার চালান দেখির পান। তোমরা ডিলার আর পাইকারের ঘরোক ঠিক করো, তাইলে হামরা কম দামে বেচপার পামো।’

এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রাসেল মিয়া বলেন, ‘উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নে ১০ হাজার ১১৯টি পরিবারকে টিসিবির ন্যায্যমূল্যের কার্ডে মাধ্যমে ১১০ টাকা লিটারে ভোজ্যতেল দেওয়া হচ্ছে। বাজারও নিয়মিত মনিটরিং করা হচ্ছে। কেউ সরকারনির্ধারিত মূল্যের বেশি নিলে তাঁদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

কুয়েটে ক্লাস বর্জন নিয়ে শিক্ষক সমিতিতে মতবিরোধ, এক শিক্ষকের পদত্যাগ

এনবিআর বিলুপ্তির জেরে প্রায় অচল দেশের রাজস্ব কর্মকাণ্ড

দুটি নোবেলের গৌরব বোধ করতে পারে চবি: প্রধান উপদেষ্টা

আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধের প্রশ্নে যে প্রতিক্রিয়া জানাল যুক্তরাষ্ট্র

২ ম্যাচ খেলেই মোস্তাফিজ কীভাবে ৬ কোটি রুপি পাবেন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত